Ratings5
Average rating4.8
যারা গপগপ করে বই ভক্ষণ করতে ভালোবাসে, তাদের কাছে আরো আরো আরো নতুন নতুন বইয়ের সন্ধান পাওয়ার চেয়ে তৃপ্তিদায়ক বিষয় আর কিছু নেই। যদিও, Goodreads-এর পাবলিকদের কাছে এইসব কথা বলার অর্থ, মায়ের কাছে মাসির গল্প ফাঁদা। তারচে সরাসরি এই বইটার ব্যাপারে কিছু কথা বলে ফেলা যাক!
ধরাধাম থেকে বিদায় নেবার আগে অবশ্যপাঠ্য ১০০টি বই।
পটল তুলবার পূর্বে যে ১০০টি ক্লাসিক আপনাকে পড়তেই হবে।
অক্কা পাওয়ার আগে এই ১০০টা বই পড়ে ফেলুন।
যদি আপনার ডাক শুনে কেউ না আসে তবে এই ১০০টি উপন্যাস পড়ুন।
চমকে চৌত্রিশ হতে চাইলে যে ১০০টি বই আপনাকে পড়তে হবে।
জিভে জল আনা ১০০টি বইয়ের ফর্দ।
মানুষ নামক জন্তুর লেখা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০টি কেতাব।
ইন্টারনেটের অলিতে গলিতে এরকম লিস্ট দেখে দেখে চোখ ব্যথা হয়ে গেছে। মোটামুটি সব লিস্টেই ১৫০টা বইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নামিদামি পত্রপত্রিকারাও এরোম লিস্টি বের করে মাঝেমধ্যে। সেখানেও সেই একই মাল। যারা নিজেদের একটু “অন্যরকম” দেখাতে চায়, তারা লিস্টের পয়লা র্যাঙ্কিং বইটার নাম লেখে প্রুস্তের “হারিয়ে যাওয়া সময়ের খোঁজে”। যারা নিজেদের আরো বেশি অন্যরকম দেখাতে চায় তারা লেখে জোসেফ হেলারের “ক্যাচ-বাইশ”। এই যেমন আমি নিজেকে অন্যরকম বোঝানোর জন্যে বইগুলোর নাম বাংলায় লিখলাম। ব্যাস, ক্যারদানি এটুকুই। বইক্ষুধার্তরা অ্যাদ্দিনে ভালো করেই বুঝে ফেলেছেন, এইসব থোড়-বড়ি-খারা লিস্ট ঘেঁটে বিশেষ লাভ নেই। এই বইটার নাম দেখে প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম, হায় রামচন্দ্র, এরা ইন্টারনেট থেকে বাইরে বেরিয়ে লিস্টি-বিষয়ক গোটা বই লিখে ফেলেছে রে!
তারপর দেখলাম ১০০০টা বইয়ের লিস্ট বানিয়েছে এই বইতে। এট্টু লোভ হলো। বইটা হাতে নিয়ে দেখলাম ক্কি সোন্দর পৃষ্ঠা! ক্কি সোন্দর বাইন্ডিং! কত্তো চ্ছবি! আরো এট্টু বেশি লোভ হলো। কিনেই ফেললাম।
আশি, নব্বই এবং শূন্য দশকে “আ কমন রিডার” নামক বই-বিষয়ক একটা মেইল-অর্ডার ক্যাটালগ খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো আমেরিকায়। এই ক্যাটালগের সাবস্ক্রিপশন নিলে, বাড়িতে বসে প্রতিমাসে প্রচুর নতুন এবং পুরোনো বইয়ের খবর পাওয়া যেত। ইন্টারনেটের (এবং Goodreads-এর) আগেকার যুগে, বলাই বাহুল্য, এমন ক্যাটালগের চাহিদা থাকাই স্বাভাবিক। প্রায় তিন লক্ষ ক্যাটালগ বিক্রি হতো প্রতি বছর। এই বইটি যিনি লিখেছেন, সেই জনপ্রিয় ক্যাটালগটার সম্পাদক ছিলেন তিনি। বই বিক্রির ব্যবসাও করেছেন দীর্ঘসময়। সবচেয়ে বড় কথা, ইনি নিজেই একজন বইবুভুক্ষু বইউন্মাদ মানুষ। সুতরাং লেখকের বায়োডেটা দেখে বেশ ভরসা হলো।
বইটা খুলে তো আমি একদম ঝুপ্পুশ ডুবে গেলাম! দিনচারেক পরে বই থেকে মুখ তুলে, বেশ জোরেই বললাম, হেব্বি লিস্ট বানিয়েছে মাইরি! মা আমার গলা শুনে বললো, কীসের লিস্ট বানিয়েছে মাইরি? গত কয়েকদিন তোর কোনো খোঁজখবর নেই ক্যানো মাইরি?
একহাজারটা বইয়ের মধ্যে অনেকগুলোই আমার পড়া... ইয়ে মানে, অনেকগুলোরই নাম শুনেছি আগে। বিষয় সেটা নয়। লিস্টে থাকা প্রতিটা বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে একটা করে নাতিদীর্ঘ রচনা লিখেছেন লেখক। সেই রচনাগুলো অতি উপাদেয়। আর একটা ব্যাপার হলো— বৈচিত্র্য। বাচ্চাদের বই, উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, রহস্যরোমাঞ্চ, ফ্যান্টাসি, সাইফাই, প্রবন্ধ। কোনো গোত্রই বাদ দেননি। কত নতুন বইয়ের নাম যে জানতে পেরেছি! নামের পাশাপাশি সেইসব বইয়ের ইতিহাস-ভূগোল-জীবনবিজ্ঞান-ভৌতবিজ্ঞানও জানতে পেরেছি। সঙ্গে আছে অজস্র ছবি। তাছাড়া, শুধু ১০০০টা বইতেই শেষ নয়। প্রতিটা বইয়ের ব্যাপারে আলাপ করার সময় একই ধাঁচের আরো চারপাঁচছয়সাতটা বইয়ের খবর দিয়েছেন। কোনো বইয়ের ভালো অডিওবুক থাকলে, সেটাও জানিয়েছেন। সিনেমা থাকলে, খোঁজ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে, চমৎকার একটা বই! এরকম বই তো আগা থেকে গোড়া একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা সম্ভব নয় (বইটার পৃষ্ঠাসংখ্যাও প্রায় ১০০০)। মাঝেমাঝে উল্টেপাল্টে দেখি। প্রতিবারই নতুন কিছুর খবর পাই। প্রতিবারই পুলকিত হই।
শুধু পুলক নয়, একটু আফসোসও হয়। ইশ, বাংলা বইয়ের ব্যাপারে এমন একটা বই যদি কেউ লিখতো!