Ratings1
Average rating3
রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি ‘এক্সপেরিমেন্ট' করেছিলেন বোধহয় তাঁর লেখা নাটকগুলি নিয়ে। প্রায় প্রতিটি নাটকের গঠনশৈলী গতানুগতিক নাট্যরীতির চেয়ে অন্যরকম। এর মধ্যে ‘রক্তকরবী' এবং ‘মুক্তধারা'-র নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হতে শোনা যায় প্রায়ই। দুটোই রূপক-আশ্রিত নাটক। যদিও ‘রক্তকরবী'-র ব্যঞ্জনা এবং ব্যাপ্তি অনেক বেশি গভীর।
‘মুক্তধারা' নাটকটিতে কোনো দৃশ্যবিভাগ নেই। হরেকরকম চরিত্ররা ক্রমাগত আসা-যাওয়া করে মঞ্চে, দৃশ্যের মাঝে কোনো বিরতি থাকেনা। ফলে পুরো নাটকে একটা নিরবচ্ছিন্ন flow লক্ষ্য করা যায়। নাটকের বিষয়বস্তু হলো, আধুনিক সমাজব্যবস্থায় যন্ত্র এবং কারিগরিবিদ্যার সাহায্যে মানুষের দ্বারা প্রকৃতিকে পোষ মানানোর (অপ)চেষ্টা এবং তার পরিণতি।
১৯২২ সালে রচিত এই নাটকটি আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। একটু বেশিই প্রাসঙ্গিক। নাটকের আখ্যানটি এরকম: একটি প্রাকৃতিক জলস্রোতের উপর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধটির কারণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তবু কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। মানবিক চেতনার চেয়ে অর্থনৈতিক এবং ক্ষমতার স্বার্থই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ কি এগিয়ে আসবেন সেই বন্দী জলধারাকে মুক্ত করে দিতে?
নাটকটি পড়ে বেশ ভালোই লেগেছে। নাটকের সংলাপ খুব জোরালো। তবে নাটকটিকে কেন জানি পূর্ণাঙ্গ বলে মনে হলো না। ক্লাইম্যাক্সও বড্ড তাড়াহুড়ো করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হয়তো মঞ্চায়িতরূপে দেখলে নাটকের বার্তাটি আরো বেশি অর্থবহ মনে হবে। কারণ অভিনয়েই তো নাটকের সার্থকতা। তবু বলবো, একশো বছর আগে লেখা নাটকে একেবারে সমসাময়িক ইস্যুর প্রতিফলন দেখে অবাক হয়েছি। দূরদর্শিতা বটে!