সারা আকাশ
1951 • 179 pages

Ratings1

Average rating4

15

ভালো সাহিত্যের একটি লক্ষণ হলো, তা একই সঙ্গে সমকালীন এবং চিরন্তন। ১৯৫২ সালে লেখা এই বিখ্যাত হিন্দি উপন্যাসটির দেশকাল এবং প্রেক্ষাপটের সঙ্গে আজকের দিনদুনিয়ার ভিনগ্রহসম পার্থক্য। তবু মানুষ যেহেতু আজও মানুষ রয়ে গেছে, তাই উপন্যাসের মূল বার্তাটি আজকের দিনেও আমার কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থায়, একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে তার নিজের পরিবারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। ছোট থেকে আমরা বড় হই আমাদের পরিবারের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে। বড় হওয়ার পরে সেই পরিবারের প্রতি ঋণ শোধ করি আমরা। ধর্ম ত্যাগ করলেও করা যেতে পারে, কিন্তু পরিবারকে ত্যাগ করা (কিংবা দূরত্ব তৈরি করা) তো মহাপাতকের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়!

উপন্যাসের স্থান এবং কাল : স্বাধীনতার ঠিক পরের ভারতবর্ষের একটি মফস্বল শহর (সম্ভবত আগ্রা)। মুখ্য চরিত্র অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি দম্পতি। মনের দিক দিয়ে পরিণত হয়ে ওঠার আগেই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে, কারণ তাদের পরিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পৃথিবীটা ভালো করে চিনে ওঠার আগেই জীবনের অন্যতম গুরুতর দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের উপর। এর ফলাফল হয়েছে মর্মান্তিক।

নিজের আজন্মপরিচিত পরিবেশ ছেড়ে একজন নারী যখন সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয় (বিয়ের পরে), তখন তার মনের আদল কেমন থাকে? আর যদি নতুন পরিবেশটি হয় সেই নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ? এমনকি যার ভরসায় মেয়েটি নিজের আত্মপরিচয় পাল্টে ফেলেছে, সেই স্বামীটিও যদি পছন্দ না করে তাকে? কিংবা স্বামীটি যদি হয় অস্থিরমতি, দুর্বলচিত্ত, অমানবিক?

নারী পুরুষের সম্পর্কের রসায়ন, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সমাজে পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিমানুষের সম্পর্ক, সমাজের দ্বারা অন্ধভাবে চাপিয়ে দেওয়া প্রথার পরিণতি, আধুনিকতার সঙ্গে গতানুগতিকতার দ্বন্দ্ব— এরকম বেশ কিছু গুরুতর বিষয়কে খুব মুনশিয়ানার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজেন্দ্র যাদব। ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় লেখা এরকম কতো মণিমুক্তোর সঙ্গে আচমকা দেখা হয়ে যায়! উৎকৃষ্টতম ভারতীয় সাহিত্য আসলে লেখা হয়েছে আঞ্চলিক ভাষাতেই।

যদি প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিই (অন্যকে না হলেও, অন্তত নিজেকে); প্রচলিত সমস্ত রীতি-রেওয়াজকে যদি চোখ বন্ধ করে মেনে নিই; বেশিরভাগ মানুষ যা বিশ্বাস করে, তাকেই যদি অভ্রান্ত ভেবে নিই; নিজের বিচারবুদ্ধিকে যদি সংস্কারের পায়ে সমর্পণ করি; যদি সোজা পায়ে না হেঁটে পিছন দিকে হাঁটতে থাকি, তাহলে কি আমি জীবিত মানুষ? ভূতের পা পিছন দিকে ঘোরানো থাকে।

October 9, 2023