Ratings1
Average rating5
সামান্য কয়েকপৃষ্ঠার এই বইটা পড়ে (বই না বলে পুস্তিকা বলাই ভালো), কত যে ভাবনা আসছে মাথায়!
শ্রীজাত তাঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন,
“শঙ্খ ঘোষের ‘কবির বর্ম' গায়ে চাপিয়ে ঘুরে মরছি কলকাতায়...“
শঙ্খবাবু নিজেও অন্যত্র লিখেছেন,
“এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ, তবে কেন
শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে !”
কাকে বলে “কবির বর্ম”?
“অনেকে ভুল বুঝবে, অনেকে ঠিক বুঝেই তাদের ভিন্ন রুচিগত কারণে আমাকে এড়িয়ে যাবে, অনেকে তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে মারবে আমার মুখের ওপরে, সমূহ অকৃতজ্ঞতার ঝলক তুলেও চলে যাবে অনেকে...।”
তবুও, “থাকবে না কি এইটুকু বিনয় যে অন্যদের বলতে দাও তাদের নিজের মতো কথা, আমি বলবো শুধু আমারটা, যেটুকু আমি পারি?”
“দেখো, এই হচ্ছি আমি। এইটুকুই, এর চেয়ে বেশি নয়, কমও নয় এর চেয়ে। আর তারপর কে আমার কী বিচার দিল, সে শুধু তার দায়।”
এই বিনীত আত্মপ্রত্যয়কেই “কবির বর্ম” বলে, যা আমরা মাঝেমাঝে গায়ে চাপাতে বিস্মৃত হই।
এই বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধটি পড়ে আরো একবার উপলব্ধি করলাম— তিনি “নির্জনতম কবি” হওয়া সত্ত্বেও, “নিরালম্ব শূন্যতা”কে, শিশিরপতনের মতো অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে, জীবনযাপনের ক্লান্তিকে, নিজের কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বারবার তুলে ধরলেও, ক্যানো জীবনানন্দ দাশের “অনেক নিঃশব্দের মধ্যে গোপনে গোপনে জড়ো হয়ে আছে বহুতর আর্ত শব্দের উৎক্ষেপ”। এবং ক্যানো, শুধু গলাবাজি করে বিপ্লব বিপ্লব বলে চেঁচামেচি করলেই, গরম গরম ভাষণের আঘাতে চেয়ার-টেবিল-চায়ের গেলাস-বিস্কুটের বয়ম ভেঙে ফেললেই “বিপ্লবী” হওয়া যায় না।
তৃতীয় প্রবন্ধে রাইনার মারিয়া রিলকের “লেটারস টু এ ইয়ং পোয়েট” বইয়ের বক্তব্যের অনুষঙ্গে দেখিয়েছেন, কাউকে কিছু “উপদেশ” দেওয়ার কাজটা আসলে কতটা অবান্তর, অপ্রয়োজনীয়, যান্ত্রিক। কারণ,
“আমার যদি ইচ্ছে হয় প্রেমেরই কথা বলি, আমার যদি ইচ্ছে হয় প্রকৃতিতে যাই ; আমার যদি ইচ্ছে হয় সহজ কথা বলি, আমার যদি ইচ্ছে হয় দুরূহতায় যাই ; আমার যদি ইচ্ছে হয় অলংকারে বলি, আমার যদি ইচ্ছে হয় নিরাভরণ হই ; আমার যদি ইচ্ছে হয় ছন্দ দিয়ে বলি, আমার যদি ইচ্ছে হয় ছন্দ ছেড়ে যাই ; আমার জন্য নির্ধারিত পথ রাখেনি কেউ, আমারও পথে চাই না আমি কাউকে।”
প্রাণিত সুষমাময় গদ্যে এমন স্পষ্ট কথা শঙ্খ ঘোষ ছাড়া আর কে বলতে পারেন?