উপন্যাসের ছদ্মবেশে যেন একটি থিসিস লিখেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন চরিত্রকে যেন নিরীক্ষার উপাদান (‘study participant') হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিষয়বস্তু নির্মাণে কখনও প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছেন, কখনও সেন্টিমেন্টের, কখনও নিজের সিদ্ধান্তে নিজেই যেন দ্বিধায় পড়ে গেছেন লেখক। মূল চরিত্র রাজকুমার আদৌ কোনো একক চরিত্র নয়, বরং মানুষের অনেকরকম চিন্তাভাবনা, চালচলন, বিকৃতি এবং বিপন্নতা নিয়ে গড়া একটি কম্পোজিট চরিত্র। আমাদের নিজেদের অনেক আচরণ এবং ব্যক্তিগত মতামতের মতোই রাজকুমারকে কখনও মনে হয় দুর্বোধ্য, কখনও কলুষিত, কখনও আপত্তিকর, কখনও আত্মবিশ্বাসী, আবার কখনও আত্মগ্লানিতে মুহ্যমান। রাজকুমার কাল্পনিক হয়েও জীবন্ত। দুর্বোধ্য হয়েও চাক্ষুষ। আমাদের সবার মতো। মানুষের মতো। দোষেগুণে দ্বিমাত্রিক নজরে তাকে বিচার করতে গেলে মস্ত ভুল হবে।
এই অদ্ভুত জটিল অথচ ভাবনার তীব্র খোরাক জোগানদায়ী উপন্যাসটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। চেতনা এবং বুদ্ধিবৃত্তির খুব গভীরে প্রবেশ করার সামর্থ্য না-থাকলে যার-তার দ্বারা এমন উপন্যাস লেখা কখনও সম্ভব নয়।