Ratings1
Average rating4
রোজ কত মানুষ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। হারিয়ে যায়। রেলস্টেশনের দেয়ালে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবিসহ বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। বালক, যুবক, মাঝবয়েসি, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, মহিলা, পুরুষ, মানসিক ভারসাম্যহীন। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ওয়েবসাইটের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান দেখলাম, ২০১৯ সালে বেপাত্তা হয়ে গেছে চার লক্ষেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আজ আর জীবিত নেই। এদের মধ্যে অনেকেই এখনও নিরুদ্দেশ, কারণ তাদের খুন করে ফেলা হয়েছে।খুন করার পরে কারো দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছে মাটির গভীরে। শহরের ভেতর লাশ পোঁতার উপায় নেই। সেখানে তো জায়গাই নেই। তাই পোঁতা হয়েছে শহরের উপকণ্ঠে। শহরের মানুষ বাড়ছে। জায়গা কমছে। শহরের উপকণ্ঠে গড়ে উঠছে উপনগরী। উপনগরীতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গগনচুম্বী অট্টালিকা। নতুন অট্টালিকা বানানোর জন্য ভিত খনন করা হচ্ছে। ভিত খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গ্যালো আস্ত নরকঙ্কাল। রেলস্টেশনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিজ্ঞাপনে তো মুখের ছবি দেওয়া থাকে। তবুও তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। নরকঙ্কালের মুখ কই?হালফিলের পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলা রহস্যকাহিনি/থ্রিলার আমি পড়ি না। পড়লে আমার একইসঙ্গে হাসি পায় এবং বিরক্ত লাগে। একমাত্র ব্যতিক্রম রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের গোয়েন্দা কানাইচরণ সিরিজ। এর আগে এই সিরিজের প্রথম বই [b:কলকাতা নুয়া 53295778 কলকাতা নুয়া Rajarshi Das Bhowmik https://i.gr-assets.com/images/S/compressed.photo.goodreads.com/books/1588173875l/53295778.SY75.jpg 81308087] পড়ে আমি চমৎকৃত হয়েছিলাম। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-সৃষ্ট শবর দাশগুপ্ত চরিত্রটির কথা মাথায় রেখেও বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে যথার্থ পুলিশ-প্রোসিজুরাল গোত্রের রহস্যকাহিনি আজপর্যন্ত একটাও লেখা হয়নি। কানাইচরণ হলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপযুক্ত পুলিশি-গোয়েন্দা। এই সিরিজের নতুন বইটি পড়ে আমার মুগ্ধতা আগের বইটিকেও ছাপিয়ে গেছে।লেখকের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, কানাইচরণ চরিত্রটিকে তিনি বাস্তবসম্মতভাবে সৃষ্টি করেছেন। সকল চরিত্রদের চলাফেরা-কথাবার্তা, কাহিনির পটভূমিকা, অপরাধ ও অপরাধীর গতিপ্রকৃতি, সাসপেক্ট, মোটিভ ও অ্যালিবাইয়ের গোলকধাঁধা, এবং সবশেষে রহস্যসমাধানের প্রক্রিয়া, প্রতিটি ক্ষেত্রে রহস্যগল্পসুলভ টিপিক্যাল অতিনাটকীয়তাকে সচেতনভাবে বর্জন করেছেন লেখক। অথচ তার ফলে কাহিনির বাঁধুনি আলগা, কিংবা রহস্যের উপভোগ্যতায় ঘাটতি হয়নি। পুলিশের প্রকৃত কর্মপদ্ধতি ও তদন্তের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো যেরকম নিখুঁত ডিটেইলে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক, তা এককথায় বিস্ময়কর!উপন্যাসটা পড়া শেষ করে আমার মনে হয়েছে, রহস্যকাহিনির ছদ্মবেশে আসলে লেখক একটি সমসাময়িক বাস্তবসম্মত সামাজিক ভাষ্য রচনা করতে চেয়েছেন। পাঠশেষের মুগ্ধতা একটু ঝিমিয়ে এলে মনে একটা প্রশ্ন জাগে। [b:পাইয়া ফিরিঙ্গ ডর 54448389 পাইয়া ফিরিঙ্গ ডর Paiyya Firingi Dor Rajarshi Das Bhowmik https://i.gr-assets.com/images/S/compressed.photo.goodreads.com/books/1594265217l/54448389.SY75.jpg 84969463]-এর মতো ব্যতিক্রমী ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখেন যে-লেখক, সেই একই লেখক, পাশাপাশি অবলীলায়, কানাইচরণের মতো অভিনব গোয়েন্দাচরিত্র সৃষ্টি করতে পারেন কীভাবে? এমন একটি দুর্দান্ত চরিত্র উপহার দেওয়ার জন্যে লেখককে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই! অত্যন্ত সুলিখিত এই উপন্যাসটি নিয়ে আরো বেশি আলোচনা হওয়া জরুরি।“আমি ভাবি, ভবিষ্যতে কোনোদিন, আমাদের ধ্বংসও কি আমাদের মতোই ছাপোষা হবে?”