Ratings1
Average rating3
মহাভারতের অতিপরিচিত কাহিনিগুলো যতবার পড়ি, নব রূপে, নব আঙ্গিকে, ততবার নিত্যনতুন উপলব্ধি জেগে ওঠে মনের মধ্যে। গল্পের আদি-অন্ত জানা থাকলেও মলিন হয়না তাদের আকর্ষণ। পাণ্ডবদের পিতা পাণ্ডু ছিলেন একজন প্রবল প্রতিভাশালী ব্যক্তি। পৌরুষ এবং পাণ্ডিত্যে, শস্ত্র এবং শাস্ত্রে— তাঁর ছিল সমান অধিকার। এত যে পরাক্রমী একজন মানুষ, এত রূপবান এত গুণবান, তবু জন্মগত বিশেষ ত্রুটির কারণে তিনি সন্তানপ্রজননে অক্ষম ছিলেন। কুন্তী এবং মাদ্রী, এই দুই সহানুভূতিশীল স্ত্রীকে পাশে পেয়েও তিনি কাটিয়েছিলেন একটি বিষন্ন এবং বিপন্ন জীবন। এমনিতেই মহাভারতের কাহিনিতে জটিলতার শেষ নেই। পাণ্ডু'র এই শারীরিক ব্যাধি এবং সেই ব্যাধির পরিণাম— মহাভারতের অভিনব এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবং সবচেয়ে রহস্যময়। বলা যেতে পারে, এই বিশেষ ঘটনাক্রমের মধ্যে দিয়েই সমগ্র মহাভারতের সুদূরপ্রসারী ঘূর্ণাবর্তের সূচনা হয়েছিল।
সন্তান উৎপাদনে অক্ষম ছিলেন পাণ্ডু, তবু কীভাবে জন্ম হয়েছিল পাণ্ডবদের পাঁচ ভাইয়ের?
তমাল বন্দোপাধ্যায় মহাভারতের এই কৌতূহলকর অধ্যায়টিকে বেশ সুন্দরভাবে পুনরুজ্জীবিত করেছেন তাঁর কলমে। লেখকের গদ্যভাষা মনোরম, বর্ণনা স্বচ্ছ এবং পরিমিত। পৃথিবীর যেকোনো প্রাচীন মহাকাব্যের বহিরঙ্গের অলৌকিক/অতিলৌকিক খোলসটি অতিক্রম করলে আবিষ্কার করা যায় মানুষের চরিত্র এবং সমাজের চিরকালীন বৈশিষ্ট্যগুলোকে। মহাকালের মন্দিরা সেই একই ছন্দে বেজে যাচ্ছে আজও। আজও মানুষ কায়মনোবাক্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ; কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা স্বার্থের তাড়নায়, পরিত্যাগ করে সেই সুচিন্তিত প্রতিজ্ঞা। আজও মানুষ, সভ্যতার দ্বারা অর্জিত শোভন পরিচ্ছদ এবং মার্জিত আচরণের নিচে লুকিয়ে রাখে তার basic instinct-গুলোকে। আসমুদ্রহিমাচল পৃথিবীকে পদানত করার আস্ফালন দেখায় ; কিন্তু মানুষ আজও পোষ মানাতে পারেনি, এমনকি তার নিজের মনকেও!