Ratings6
Average rating3.5
এখন যে দেশটির নাম জিম্বাবুয়ে, ১৯৮০ সালের আগে পর্যন্ত দেশটি “দক্ষিণ রোডেশিয়া” নামে পরিচিত ছিল (বিভূতিভূষণের “চাঁদের পাহাড়” উপন্যাসে এই নামটির উল্লেখ আছে)। এক দীর্ঘ অমানবিক অত্যাচারের অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে দুর্ভাগা এই দেশটির ইতিহাসের সঙ্গে (অতীত এবং সমসাময়িক— দুটোই)। স্থানীয় আফ্রিকান মানুষদের প্রতি ইয়োরোপীয় আগন্তুকদের অকথ্য শোষণের সেই কটু ইতিবৃত্তান্ত জীবন্ত হয়ে উঠেছে ডোরিস লেসিংয়ের এই অসামান্য উপন্যাসে।
What is madness, but a refuge, a retreating from the world?
শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক অপশাসনের বিশ্বস্ত বিবরণ নয়, উপন্যাসটি একই সঙ্গে মানুষের সঙ্গে মানুষের, মানুষের সঙ্গে সমাজের, এবং মানুষের নিজের সঙ্গে নিজের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কেরও একটি দুর্দান্ত খতিয়ান। সময়: গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন একজন ইয়োরোপীয় নারী, যিনি নিজের অভ্যস্ত নাগরিক জীবন ত্যাগ করে বিয়ে করেছিলেন একজন গ্রাম্য দরিদ্র কৃষককে।
এই নারীচরিত্রটির বিচিত্র জটিল অন্তর্দ্বন্দ্বের সামনে আমাকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন ডোরিস লেসিং। উপন্যাসটি পড়ার সময় আগাগোড়া অস্বস্তির মুখোমুখি হয়েছি আমি, উশখুশ করেছি, কিন্তু লেখক আমাকে রেহাই দেননি। মানুষ কিংবা প্রকৃতির ব্যাপারে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণসম্পন্ন এই উপন্যাসটির অভিঘাত আমি সহজে মুছে ফেলতে পারবো না।
বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে ঢাকা এবং তীব্র দাবদাহে পুড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এই অঞ্চলটিকে আমি চিনতাম না। এখানকার কৃষ্ণ-গাত্রবর্ণের মানুষদের চিনতাম না আমি। এই মানুষগুলোর সার্বক্ষণিক প্রভু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শ্বেত-গাত্রবর্ণের ইয়োরোপীয় মানুষদের ব্যাপারে যদিও কিছুটা চেনাজানা ছিল (উপমহাদেশের কারই বা নেই?)। প্রকৃতি, মানুষ, সময় এবং সমাজের বহুমাত্রিক সম্পর্কের আয়তনকে পাঠকের অনুভূতির আয়নায় নিখুঁত স্পষ্টতায় প্রতিবিম্বিত করা— এর চেয়ে খুব বেশি দাবি সাহিত্যের প্রতি নেই আমার। উপন্যাসটি এই দাবি সর্বাংশে পূরণ করেছে।