Ratings1
Average rating2
মেনাকমাসঃ তোর যদি মাথায় একটুও বুদ্ধি থাকতো, তাহলে কীভাবে স্বামীর মন জয় করে চলা যায় তারই চেষ্টা করতি সবসময়, এভাবে মুখে মুখে তর্ক করার কথা ভাবতেও পারতি না, একদম সিধে হয়ে যেতি। এরকম বেয়াদবী যদি করতেই থাকিস, তো বলে দিচ্ছি, তোকে সোজা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবো...যখনই বাইরে যাবো, পেছন থেকে ডেকে একশ একটা প্রশ্ন করা শুরু করিস, কোথায় যাচ্ছ, কী কাজ, কার সাথে যাচ্ছ, কতক্ষণ থাকবে, কার সাথে থাকবে...ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান করে মাথাটা ধরিয়ে দিস, একটু যে ফুরুফুরে মন নিয়ে বাইরে যাবো তার আর উপায় থাকে না, মেজাজটাই খারাপ করে দিস প্রতিবার। যেভাবে জেরা করিস, মনে হয় যেন সীমান্তরক্ষীর কাছে জবাব দিতে বসেছি, কী কী মাল নিয়ে এসেছেন, সবগুলো ব্যাগ খুলে দেখান, আপনার আগমনের হেতু কী...অসহ্য! তোকে আসলে বেশী লাই দিয়ে ফেলেছি। শেষবারের মতো সাবধান করে দিচ্ছি, তোর এই দামী দামী কাপড়, জামা, অলঙ্কার, চাকর-বাকর, শাহী খানাদানা-এগুলো সব কোত্থেকে আসে সেটা কিন্তু মাথায় রাখিস। আমার ওপর গোয়েন্দাগিরি যদি বন্ধ না করিস তো দেখবি আমি তোর কী করি...দাঁড়া, তোর যখন এতই গোয়েন্দাগিরির খায়েশ, তাহলে ভালো করে শুনেই রাখ। আমি এখন আমার বান্ধবীর কাছে যাচ্ছি, আজ একটু ফুর্তিফার্তা করবো দু'জনে, খেয়েদেয়ে রাতে আমার আসতে দেরী হবে। বাসায় খাবো না, কিছু বানানোর দরকার নেই। বুঝেছিস? কথা কানে গেছে?
পেনিকিউলাসঃ মালিক কথা শুনাইতাছেন হ্যার বউরে, কিন্তু আসলে উদ্দেশ্য তো আমারে জানান দেয়া। রাইতে বউয়ের লগে না খাইতে বইলে ম্যাডামের কি আর আইবো যাইবো? খাওন তো মাইর যাইবো আমার।
মেনাকমাসঃ এমন টাইট দিলাম, হারামজাদীর গলা দিয়ে এখন আর আওয়াজই বেরোচ্ছে না। তো, কই স্বামীসমাজ, বউটাকে যে এভাবে ধমকে দিলাম, তার অবস্থানটা কোথায় সেটা তাকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলাম, একটু বাহবা তো প্রাপ্যই আমার, নাকি? হাত তালি টালি দিন... (দর্শকদের দিকে ফিরে মেনাকমাস দেখাচ্ছেন তাঁর জামার নিচে মেয়েদের একটি গাউন তিনি পরে আছেন)। দেখুন, বউয়ের এই গাউনটা আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি আমার কলিজার টুকরাকে উপহার দেবো বলে। ফন্দিটা জব্বর আঁটলাম না, ভাইলোগ? সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না, হারামজাদীটারও একটা শিক্ষা হবে। আমারও অবশ্য এই গাউনটার পেছনে একটা ফালতু খরচ হয়ে গেলো...তা যাক, ভালোবাসার রাণীর জন্য শত্রুর পকেট কাটলাম আর কী, এতে দোষ দেখি না।
রোমান নাট্যকার প্লটাস জন্মেছিলেন যীশুর জন্মের আড়াইশ বছর আগে, নাটক লিখে মুখ ভেংচে গেছেন তাঁর সময়ের মানুষদের। গুটেনবার্গ বুড়ো'র বই ছাপাবার মেশিন উদ্ভাবনের পর গত পৌনে ছয়শ বছরে অর্বুদ কোটি বই ছাপা হয়ে গেছে। বই ছাপিয়ে লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও শত শত অক্ষৌহিণীতে গিয়ে ঠেকেছে। পড়ার এতসব উপকরণ ফেলে সাড়ে বাইশশ বছর আগে মরে ভুত হয়ে হেজে মজে যাওয়া এক ভদ্রলোকের বই আজকের দিনে পড়বার কি কোন যৌক্তিকতা আছে? এত প্রাচীন সাহিত্যকর্ম পড়ে আমার কি দুটো হাত বাড়তি গজিয়ে গেলো, নাকি মগজের ওজন কয়েক ছটাক বৃদ্ধি পেলো? সে প্রসঙ্গে একটু পরেই আসছি, আগে প্লটাস এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে সদ্য লব্ধ জ্ঞান এখানে তড়িঘড়ি করে উগড়ে দেই। নতুন একটা গালি শিখলে যেমন নানা ছুতোয় ওটাই প্রথমে ব্যাবহার করতে মন উশখুশ করে, এ-ও কতকটা তেমনই আর কী...
প্লটাস যদিও জাতে রোমান ছিলেন, তিনি তাঁর নাটকগুলো লিখেছেন তাঁর দুই-আড়াইশ বছর আগের গ্রীক নাট্যকারদের কমেডি নাটকগুলোর অনুসরণে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নাকি তিনি সরাসরি গ্রীক বিভিন্ন নাটকের অংশ অনুবাদ করে নিজের নাটকে বসিয়েও নিতেন। ল্যাটিন ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু যীশুর জন্মের ২৪০ বছর আগে, অর্থ্যাৎ, প্লটাস ল্যাটিন সাহিত্যের একেবারে শুরুর দিকের লোক। ল্যাটিন সাহিত্য এবং প্লটাস হাত ধরাধরি করেই বড় হয়েছেন, কৈশোর-যৌবন পার করেছেন। ল্যাটিন ভাষায় শুধু যে সিসেরো (খ্রীষ্টপূর্ব ১০৬-খ্রীষ্টপূর্ব ৪৩), ভার্জিল (খ্রীষ্টপূর্ব ৭০-খ্রীষ্টপূর্ব ১৯), ওভিড (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৩-১৮ খ্রীষ্টাব্দ) এবং হোরেস (খ্রীষ্টপূর্ব ৬৫-খ্রীষ্টপূর্ব ৮)-দের মতো কয়েক হাজার বছর আগের প্রাচীন লেখকেরাই লিখে গেছেন তা নয়। ফ্রান্সিস বেকন, বারুক স্পিনোজা এবং আইজ্যাক নিউটনদের মতো ১৬-১৭ শতকের মানুষেরাও ল্যাটিনেই তাঁদের বইপত্র লিখেছেন। ল্যাটিন সাহিত্যের পথিকৃৎ-দের একজন বলে প্লটাসের আলাদা গুরুত্ব তো আছেই, এছাড়াও, প্রাচীন ল্যাটিন নাট্যকারদের মাঝে প্লটাসেরই সবচেয়ে বেশী সংখ্যক লেখা আজ অব্দি টিকে আছে; তাঁর ১৩০টি নাটকের মাঝে ২০টি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
প্লটাসের সিংহভাগ কাজ হারিয়ে যাবার পেছনের কারণটা বেশ আগ্রহোদ্দীপক। প্লটাসের মূল যে পাণ্ডুলিপি, সেটি আসলে একটি ‘প্যালিম্পসেস্ট'। প্যালিম্পসেস্ট হলো গরু/ ভেড়া / ছাগলের চামড়ার তৈরী পার্চেমেন্টের এমন দলিল, যেখানে আগের লেখা ঘষে মেজে তুলে ফেলে জায়গা খালি করে নতুন করে লেখা হয়েছে। সে আমলে চামড়ার তৈরী পার্চমেন্ট খুব সহজলভ্য কিছু ছিলো না, তাই খরচ বাঁচাতে বিভিন্ন সময়েই মানুষ এ কাজটি করে এসেছে। প্লটাসের মূল পাণ্ডুলিপির লেখা ঘষে তুলে ফেলে সে জায়গায় এক ধর্মযাজক ৪র্থ শতকের খ্রীষ্টীয় ধর্ম সংস্কারক অগাস্টিন অফ হিপো'র (৩৫৪-৪৩০) ধর্মীয় ব্যখ্যা (তাফসীর) লিখেন।
ধর্মবাদীরা বরাবরই গোটা পৃথিবীটাকেই নিজেদের টাট্টিখানা ঠাউরে এসেছেন; যখন যেখানে জায়গা পেয়েছেন, সেখানেই তাঁরা নিজের নিজের ধর্মমতটি হড়হড় করে ঢেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ধর্মমতের এ প্রচারকার্যে কখনো ছলনা, কখনো মিছে মিঠে কথা, আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই গায়ের জোর-এর প্রয়োগ তাঁরা ঘটিয়েছেন। যাদের উদ্দেশ্যে নিজেদের ধর্মমতগুলোর দাওয়াত তাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা আদৌ এ দাওয়াতে শরীক হতে চান কিনা-সে প্রশ্নটির উত্তর কখনো জানবার চেষ্টাও করেননি তাঁরা। কারণ, ধর্মবাদী সবার কাছেই নিজের নিজের ধর্মমতটিই শ্রেষ্ঠ, নিজের ঈশ্বরের বাইসেপটিই তাঁদের কাছে সবচেয়ে পেশিবহুল মনে হয়। নিজেদেরই তৈরি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্বের এ প্রপঞ্চে ভুগে ভুগে তাঁরা আর সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করা শুরু করেন। নিজেদের দলটি ভারী রাখবার চেষ্টায় তাঁদের সারাক্ষণ ব্যাতিব্যস্ত থাকতে হয়, নইলে অন্য ঈশ্বরের অনুসারীদের সাথে মারপিট করে টিকবেন কীভাবে?
অস্তিত্বের এ লড়াইয়ে নিজের নিজের বিভাজন সৃষ্টিকারী ধর্মমতগুলো প্রচার করতে গিয়ে শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাসকে বারবার তাঁরা গোল্লায় পাঠিয়েছেন। প্লটাসের প্যালিম্পসেস্ট, বখতিয়ার খিলজী'র নালন্দার গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেয়া, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়াতে আইসিসের হাতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বছর পুরনো আসিরীয় সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংস, কিংবা গেলো সপ্তাহেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলাম-এর হাতে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র সঙ্গীতাঙ্গন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া-এগুলো সবই এক সুতোয় গাঁথা (উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সঙ্গীতাঙ্গনটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। সেবারের হামলার পর তবুও কিছু নিদর্শন টিকে ছিলো, এবার সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। পণ্ডিত রবিশংকর ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-এরই ছাত্র। বাঙলাদেশ রবিশংকরের দেশ নয়, তবুও তাঁর ওস্তাদের দেশের জন্য রবিশংকর নিউ ইয়র্কে '৭১-এর অগাস্টে দ্যা কন্সার্ট ফর বাঙলাদেশ-এর আয়োজন করেন। ১৯৮৫ নাগাদ এ কন্সার্টের অ্যালবাম এবং ফিল্ম থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার বাঙলাদেশে পাঠানো হয়)। নিজের নিজের ধর্মমতকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করেন বলেই হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ-মায় গোটা পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়া ৪৩০০টি ধর্মমতের প্রত্যেকটির অনুসারীরাই কখনো না কখনো শিল্প-সাহিত্যের টুঁটি চেপে ধরেছেন, চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন অপরের ওপর নিজেদের হিংসাত্নক মতাদর্শগুলো। প্লটাসরা তাই ইতিহাসে ব্রাত্য হয়ে গেছেন, আর টিকে গেছেন অত্যাচারী ধর্মবাদীরা।
এ বইটিতে প্লটাসের ৫টি নাটক ঠাঁই পেয়েছে। নাম শিরোনামের দ্যা পট অফ গোল্ড সম্ভবত এখানে দুর্বলতম, তবে নাটকটি আবিষ্কৃত হয় অসম্পূর্ণ অবস্থায়; পাণ্ডুলিপির ছেঁড়া টুকরো, ঘষে মেজে তুলে ফেলা পুরনো লেখা, ইত্যাদির সূত্র ধরে হেঁটে অনুবাদক নিজের মতো করে সমাপ্তি টেনেছেন। অনেকটা এই ‘পট অফ গোল্ড'-এর অনুসরণেই নাকি মলিয়ের তাঁর দ্যা মাইজার নাটকটি লেখেন, যা তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্ম বলেই খ্যাত। প্রতিটি বৃহৎ ভাষাতেই যে এক এক জন মহান সাহিত্যিক এসে ভাষাটির গতিপথ নির্ধারণকারী কম্পাসের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তা তো আমাদের মোটামুটি জানাই আছে; তাঁদের ভাষারীতিকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে তাঁদের তাঁদের যাঁর যাঁর ভাষাটির আধুনিক রূপ গড়ে উঠেছে। আমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ যা, ইংরেজ, জার্মান, ইতালীয়ান আর ফরাসীদের কাছে যথাক্রমে শেক্সপিয়র, গ্যেটে, দান্তে আর মলিয়ের কার্যত তা-ই। বলা হয়ে থাকে, সে আমলে লোকজন নাকি ফরাসীকে “মলিয়েরের ভাষা” বলে সম্মান দিতো। সেই মলিয়ের যাঁকে ওস্তাদ মেনে তাঁর নাটকের মাল মশলা ধার করেছেন নিজের নাটকের জন্য, তাঁকে না পড়লে তো চলছিলোই না! এছাড়াও, এই বইতেই সংকলিত প্লটাসের আরেকটি নাটক দ্যা ব্রাদারস মেনাকমাস-এর প্রচ্ছন্ন ছাপ রয়েছে শেক্সপিয়রের দ্যা কমেডি অফ এরর-এ। সাড়ে বাইশ শ বছর পর প্লটাসের নাটক আজকের দিনে কেন পড়বেন তার তিন নাম্বার যুক্তি হলো এটি! দুই আর এক নাম্বার যুক্তিও একে একে পেশ করছি যথাক্রমেঃ
প্লটাস নিজেও যে তাঁর আগের সময়ের গ্রীক নাট্যকারদের কাছ থেকে বেশ স্বাস্থ্যকর পরিমাণেই টুকলিফাই করেছেন, সে তো আগেই উল্লেখ করেছি। প্লটাসের সাথে পরিচিতি ঘটে গেলে অন্যান্য সূত্র মারফত তাঁর পূর্বসুরীদের ব্যাপারেও টুকটাক জানা হয়ে যায়। প্লটাসের বইটি পড়তে গিয়ে আমার তাই পরিচয় হয়ে গেলো প্রাচীন গ্রীক নাট্যকার মেনান্ডারের সাথে। মেনান্ডারের নাটকও প্যালিম্পসেস্টের খপ্পরে পড়ে হারিয়ে গেছে, শুধুমাত্র একটিই নাটকই (ডিসকোলোস/ দ্যা মিসঅ্যানথ্রপ) মোটামুটি পূর্ণ অবয়বে উদ্ধারকৃত হয়েছে ১৯৫২ সালে। মলিয়ের এই নাটকের মূল গল্পটি জানতেন, এবং সেটির ওপর ভিত্তি করেই একই নামে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত নাটকটি লেখেন ১৬৬৬ সালে। এভাবেই প্লটাস পড়তে গিয়ে ওস্তাদের ওস্তাদের ওস্তাদ-এর সাথে পরিচয় হলো আমার। এতসব মহা মহা রথীর সাথে পরিচয় হয়ে আমার বাড়তি দু'টো হাত গজায়নি ঠিক, কিন্তু, হ্যাঁ, তথ্যের ভারে মগজের ওজন একটু বেশী ঠেকছে বৈকি!
এই বইয়ের ৫টি নাটকেই ঘুরেফিরে একটি ব্যাপার বড় হয়ে ধরা পড়েঃ ক্রীতদাস প্রথা। ক্রীতদাসের চরিত্রগুলো তাঁর নাটকগুলোতে প্রায়ই বেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, এবং আর সবকিছু ছাপিয়ে ক্রীতদাসরাও যে মানুষ, তাদেরও যে মুক্ত স্বাধীন জীবনের অধিকার আছে সেটিই উঠে এসেছে। প্লটাস কখনো সূক্ষ্ম, কখনো যথেষ্ঠই স্থূল স্বরে ক্রীতদাস প্রথার বিরুদ্ধে রীতিমতো প্রপাগ্যান্ডা চালিয়েছেন। প্রপাগ্যান্ডা শব্দটি আমরা খুব খারাপ বলেই জানি, তবে প্লটাসের মতো এ ধরণের মহান উদ্দেশ্যে “হোয়াইট প্রপাগ্যান্ডা” পৃথিবী যে একেবারে দেখেনি তা নয়। সাহিত্যে এমন হোয়াইট প্রপাগ্যান্ডা এর আগে একটির সাথেই পরিচিতি ছিলো আমার, জন স্টেইনবেকের “"দ্যা মুন ইজ ড্যাউন"। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা উপন্যাসটির গল্প ছিলো এমনঃ ইওরোপের অখ্যাত এক সাদামাটা গ্রামে নামহীন এক হানাদার বাহিনী অতর্কিতে এসে আক্রমণ করে (নাৎজি?)। নিরস্ত্র গ্রামবাসী হানাদার সেই সৈনিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মৌনতা আর অসহযোগীতা দিয়ে। একান্ত প্রয়োজন না পড়লে গ্রামের কেউ এই বাহিনীর কারো সাথে কথা বলে না, তাদের রাস্তা এড়িয়ে চলে। ভয়ানক বর্ণবাদী এক জীবন দর্শন নিয়ে চলা আক্রমণকারী এই হানাদার বাহিনীর সদস্যরাও যে দিন শেষে মানুষ, এবং গ্রামবাসীদের অসহযোগ ও ঘৃণা যে তাদেরও ছুঁয়ে যেতে পারে, মানবিক সাহচর্যের অভাব যে তাদের আক্রমণাত্নক সেই মানসিকতাটাকেই ভোঁতা করে দিতে পারে, এটাই স্টেইনবেক তাঁর ছোট্ট এই উপন্যাসে দেখান। যুদ্ধের সময় এ বইটির হাজার হাজার কপি প্লেন থেকে নাৎজি দখলকৃত এলাকাগুলোতে বিলানো হয়, জার্মানদের মনোবল ভেঙে দেবার জন্য। ‘অসীর চেয়ে মসীর জোর বেশী'-এ কথাটি তাত্ত্বিকভাবে আমরা সবাই জানি বটে, তবে স্টেইনবেক সেটি হাতেকলমে করেই দেখিয়ে দেন।
কলমের জোর কত বেশী হতে পারে ঠিক এই আলোচনাতেই প্লটাস গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মবাদীরা তো কথায় কথায় গলার রগ ফুলিয়ে আপন আপন কিতাবটিকেই সকল মানবিকতা এবং নৈতিকতার উৎস হিসেবে দাবী করে বসেন। ক্রীতদাসদের স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রপাগ্যান্ডা দিয়ে প্লটাস মনে করিয়ে দেন নৈতিকতা বা মানবতা শেখার জন্য ধর্মগ্রন্থের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন মানুষ হবার। খ্রীষ্টধর্ম বা ইসলাম আসার বহু বহু আগেই প্লটাস ক্রীতদাসদের নিয়ে মাথা ঘামিয়ে গেছেন, দেখিয়ে গেছেন মানবিক আচরণ কাকে বলে।
প্লটাসের নাটকগুলোর অন্যতম একটি বিশেষত্ব হলো চরিত্রগুলো মাঝে মাঝেই চতুর্থ দেয়াল ভেদ করে দর্শকের সাথে টুকটাক বাতচিৎ করে নেয়। প্লটাস তাঁর সমসাময়িক নাট্যকারদের নাটকের বিষয় এবং মান নিয়েও যথেষ্ঠই ভাবিত ছিলেন। ব্রাদার্স মেনাকমাস নাটকের শেষে সমাপনী বক্তব্যে তাঁর সেই ভাবনাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছেঃ
দর্শকেরা, আপনেরা যারা কষ্ট কইরা আইলেন নাটকখান দেইখা কি সুন্দর উপদেশ-ই না পাইলেন! নোংরামি, ফাতরামির বালাই নাই, মাইয়া-পোলার লদকা-লদকির সিনও নাই। চরিত্রগুলান কেউ ধান্দাবাজির কাম করে না, বাপের পকেট কাইটা নেশাও তারা খায় না। এমুন নাটক এই জামানায় দেখছেন আর কয়টা? নষ্টামির-ই কাহিনী হালায় দশটার ভিতর নয়টা। প্রেম-পিরিতি, পরকীয়ার কাহিনি আইজকাইল যা দ্যাহায় মুরুব্বীরা ভি ভুইলা সব হাঁ কইরা গিল্লা খায়। নীতিকথার নাটক দেইখা যদি না হন বেচ্যান যদি মনে হয় লেখক হালায় একটা মাল-ই তাইলে আর বয়া দেরী করেন ক্যান দেন না হালায় জোরসে দুইখান তালি।।
"Spectators, you have seen today A highly edifying play: No sex, no secret love affairs, No baby smuggled in backstairs. Here is no fraud or knavery, No boy buys girl from slavery Behind his father's back. Such plays Are far from common nowadays. Playwrights no longer use the pen To improve the minds of decent men. If we have pleased, not wearied you, If you think virtue worth reward, Kind friends, you all know what to do... Just let us know it-and applaud."