Ratings1
Average rating4
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল,কার্নিশে কার্নিশ,ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে।
(শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
মধ্যরাতে কলকাতা শহর শাসন করতেন যে-চারজন যুবক, কিংবদন্তি সেই অশ্বারোহী চতুষ্টয়ের একজন ছিলেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। পেশা ছিলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টগিরি। কিন্তু বাংলা কবিতার বিশিষ্ট মাইলফলক “কৃত্তিবাস” কবিতাপত্রিকার প্রত্যক্ষ উদ্যোগীদের একজন ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের মুখ্য কবিদের মধ্যেও তিনি একজন। তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়। অথচ শরৎকুমারের কবিতায় তিলপরিমাণ নেই তাঁর সেইসব শালপ্রাংশু বন্ধুকবিদের প্রভাব। নির্ভার নিজস্বতার এ এক আশ্চর্য উদাহরণ।
বিখ্যাত বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁর কবিতার সংখ্যা যৎসামান্য। তাঁর কাব্যভাষাতেও নেই সুনীল কিংবা শক্তির কবিতার মতো শব্দ কিংবা উপমা কিংবা বর্ণনার বর্ণময় সমারোহ। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে একটা নিবিষ্ট বার্তা আছে, যেটা আমার ভালো লেগেছে। অনুচ্চস্বরে প্রায় মন্ত্রের মতো তিনি লিখেছেন একটি পাখি এবং একটি ছাতিমগাছের কথা।
একটি পাখিসারা সকাল উড়ে বেরিয়েছেকাড়াকাড়ি, মারামারি, চুরি, ছিনতাইছোটোখাটো লুঠতরাজ সেরে, দ্যাখোনির্জন দুপুরে ছাতিমডালে ঠোঁট ঘষছে,আপন মনে গুমরোচ্ছে অনুশোচনায়।আর ছাতিম গাছতার সহজ বাহু তুলে, দুলে দুলে, দ্যাখোফিশফিশ করে বলছেক্ষমা, ক্ষমা। ক্ষমা।
তোমার প্রপিতামহ, শাকাহারী, জাদুঘরে আমি তার কংকাল দেখেছি,তিনঘর জোড়া এক সরীসৃপ।বহুকাল অবলুপ্ত। দলত্যাগী তুমিছোট হতে-হতে টিকে গেলে। ধূর্ততুমি, গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকে আত্মরক্ষা করো, যেন কিছুই ঘটেনি। ...
যে মুহূর্তে পরিত্যক্ত দেহ থেকে, তুমি আবর্জনা—কেন লিপ্ত হতে আসো, কেবল উত্যক্ত করতে আসো?
স্বনির্ভর হতে হবে। ওপরে আকাশস্নিগ্ধ প্লাইকাঠে মোড়া, অন্নময়আবদ্ধ জীবন নিচে, মাঝখানেকাকধর্মে নিয়তই সংগ্রাম রয়েছে।
ধুৎ! এই সূর্যোদয়!এর জন্যে এতো কষ্ট এতো হুটোপাটিছেঁদো প্লাস্টিকের বলের মতো ঠান্ডা বিবর্ণ একটা জিনিশময়লা মেঘের স্তূপ থেকে কষ্টেসৃষ্টে উঠে এলো...
আমারও গোপন কথা কিছু ছিল, তুমি জেনে যাও।দেখা হলে যে-কথা লজ্জায়বলিনি, চিঠিতে লিখতে পারিনি যে-কথাআমাকে দেখেই তুমি বুঝে নাও।
ভালোবাসা, একদিন তোমাকেও আবার দ্বারস্থ হতে হবেআমি ঘর অন্ধকার করে বসে আছি।এবার এসো না যেন ভিক্ষুকের মতো, তুমি রাজার দুলালকরাঘাত কোরো বন্ধ দরজায়— একবার দুবার তিনবার।আমি সাড়া দেবো না প্রথমে হয়তো, হয়তো অভিমানকণ্ঠরোধ করে থাকবে, দেহমন উচাটন, তুমিজানো না বন্ধুরা ফেলে পালিয়েছে। আমিসঙ্গহীন লোকেদের ভিড়েবসে আছি, ভাবছি—