Ratings1
Average rating5
পূর্ণেন্দু পত্রীকে যেকোনো একটা পরিচয়ে বেঁধে ফেলা কিংবা আটকে রাখা অসম্ভব। তিনি ছিলেন কলকাতার নাগরিক-ইতিহাসের একজন উৎসাহী গবেষক। একজন মৌলিক সিনেমানির্মাতা। প্রেমেন্দ্র মিত্রের “তেলেনাপোতা আবিষ্কার”কে তিনি সেলুলয়েডে ধরতে চেয়েছিলেন!! বাংলা প্রকাশনীর ইতিহাসে সম্ভবত সবচাইতে ভার্সাটাইল এবং অভিনব প্রচ্ছদশিল্পী ছিলেন তিনি। চমৎকার গদ্যলেখক এবং ঔপন্যাসিক। এরকম নানাবিধ কাজকর্মে পারদর্শিতা ছাড়াও তিনি এমন কিছু ঘটনার উদ্যোগী ছিলেন, যেগুলো বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। সত্যজিৎ রায় যখন পথের পাঁচালী বানিয়েছিলেন, আপামর বাঙালি দর্শকদের মধ্যে আক্ষরিক-অর্থে তিনি ছিলেন প্রথম মানুষ যিনি নবীন পরিচালকের প্রতি নিজের সমুগ্ধ প্রশস্তি অর্পণ করেছিলেন এবং তাঁকে সম্বর্ধনাজ্ঞাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই পঞ্চাশের দশকে বাংলা সিনেমার অবস্থা ছিল আজকের থেকেও বাহাত্তর-গুণ যাচ্ছেতাই। সমকালীন একজন অখ্যাত অকুলীন বাঙালি সিনেমানির্মাতার প্রতি এইরকম অকপট শ্রদ্ধার প্রকাশ আজকের দিনের ফুটোমস্তান “ফিলিম ক্রিটিক”দের দ্বারা স্বপ্নেও ভাবা যায় না!
কলকাতা শহরের সম্ভবত সবচেয়ে সুদর্শন স্থাপত্য ছিলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের “সেনেট হল”। বারোক এবং নিওক্ল্যাসিক্যাল শৈলীর যুগলবন্দিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটিকে ১৯৬০ সালে “আধুনিকতার প্রয়োজনে” নির্মমভাবে ভেঙে ফেলা হয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষের মতো বেশ কয়েকজন সমসাময়িক মানুষের লেখায় দেখতে পাই, সেনেট হলের হত্যাযজ্ঞের সেই ঘটনার ছবি দিনের পর দিন নিজের স্টিল-ক্যামেরায় তুলে রাখছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী। ছবি তুলছিলেন এবং অঝোরে কাঁদছিলেন। ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একজন শিল্পীর অসহায় যন্ত্রণা! পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার আলোচনায় এইসব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা টেনে আনছি ক্যানো? কারণ একজন কবির প্রকৃত পরিচয় মুদ্রিত থাকে কেবল ফুল পাখি নদী চাঁদ প্রেম বিরহের রমণীয় ক্যানভাসেই নয়, তাঁর সমসাময়িক ক্ষতবিক্ষত পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও। গভীর রাতে সাদা পৃষ্ঠায় সুচিন্তিত প্রেমের কবিতা লিখবার আগে, কবি নিজের ফুসফুসে ঢুকিয়ে নেন সারাদিনের ধুলো ধোঁয়া নাগরিক-দুর্গন্ধ বিষবাষ্প সূর্যপোড়া ছাই!
নারীরা পুরনো হয়, যুবকেরা বেঁকে যায় দুঃখে দুর্বিপাকেজননীরা তুলে নেয় মৃত্যুর সংসার কোলে-কাঁখেগভীর ফাটল তবু পৃথিবীর মাঠে পড়ে থাকে।
এখনও বিষাদ পাবে বলেপুরুষ নারীর কাছে যায়নারীরা নদীর কাছে যায়নদীরা মাটির কাছে আসেমাটি আকাশের দিকে চায়।তোমার বিষাদগুলি করতলে তুলে নিতে দাওওষ্ঠপুটে রাখি।
ফুলের কাছে নারীর কাছেবুকের বিপুল ব্যথার কাছেবেদনাবহ যে সব কথা বলতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম।তারাই যখন ফিরে আসেকেউ ললিতে কেউ বিভাসেস্পন্দনে তার বুঝতে পারিবুকের মধ্যে বড়ে গোলাম!
উৎকৃষ্ট মানুষ তুমি চেয়েছিলেএই যে এঁকেছি।এই তার রক্ত-নাড়ি, এই খুলি,এই তার হাড়।এই দেখ ফুসফুসের চতুর্দিকে পেরেক, আলপিনসরু কাঁটাতার।এইখানে আত্মা ছিলগোল সূর্য, ভারমিলিয়নভাঙা ফুলদানি ছিল এরই মধ্যেছিল পিকদানিপিকদানির মধ্যে ছিলপৃথিবীর কফ, থুতু, শ্লেষ্মা, শ্লেষঅপমান, হত্যা ও মরণ।উৎকৃষ্ট মানুষ তুমি খুঁজেছিলেএই যে এঁকেছি!ক্ষতচিহ্নগুলি গুণে নাও!