Ratings1
Average rating2
দেশের মাহাত্ম্যের কথা জানিনা, ধর্মের মাহাত্ম্যের কথা জানিনা। কিন্তু দেশ এবং ধর্মের নামে মানুষের উপর মানুষের অত্যাচারকে, অপমানকে, খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারি।
দেশ আর ধর্ম বায়বীয় বিষয়, কিন্তু মানুষ তৈরি হয় রক্ত-মাংস-হাড়-স্নায়ু-চেতনা দিয়ে। দেশকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিলে দেশ ভেউ ভেউ করে কাঁদতে বসে না (উপন্যাসের একটি চরিত্র নিজের দেশকে এই গালিটি দিয়েছেন)। কিন্তু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিলে মানুষের কেমন লাগে? নিজেদের পবিত্র উপাসনাস্থল ভেঙে দিলে মানুষের কেমন লাগে? জাত তুলে গালি দিলে মানুষের কেমন লাগে? নিজের মা-বোনের গণধর্ষণ হলে মানুষের কেমন লাগে?
উপমহাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, রাজনীতি আর ক্ষমতা নিয়ে ব্যবসা করা কতিপয় হারামজাদার হাতবাক্স সেই ইংরেজ আমল থেকে সাধারণ মানুষকে দোহন করে আসছে— দেশ এবং ধর্মের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার কোরে। “দেশভক্তি” টপিক নিয়ে নানান কিসিমের নাটক চলছে ভারতে। ভালোই বুঝি বাংলাদেশেও চলছে। একই গুয়ের গন্ধ ডানদিক থেকে শোঁকা আর বাঁ দিক থেকে শোঁকা। গু তো গু-ই।
মসজিদ ভাঙে এই দেশে, মাজা ভাঙে বাংলাদেশের হিন্দুদের। সেই মসজিদভাঙা পার্টির লোক এখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আজকে একুশ কোটি মুসলিম জনসংখ্যার দেশের নির্বাচিত সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি। কিন্তু একদা প্রকাশ্য জনসভায় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে টিটকিরি মেরেছিলেন : “হাম পাঁচ, হামারা পচ্চিশ” (মুসলমানরা চারটে শাদি করে, তাই “আমরা পাঁচজন”, আর মুসলমানরা অনেক বাচ্চা পয়দা করে তাই “আমাদের সন্তান পঁচিশটা”)।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপরে সংঘটিত অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে উপন্যাস লিখতে গিয়ে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন। সাম্প্রতিক ভারতে কোনো হিন্দু নারী-সাহিত্যিক মুসলমানদের দুঃখ কষ্ট দুর্ভাবনাকে নিয়ে উপন্যাস লেখার সাহস দেখিয়েছেন কি?
যদিও এভাবে তুলনা করা উচিত নয়। সাহস কোনো তুল্যমূল্য বিচার করার বস্তু নয়। তাছাড়া ভারতবর্ষ বোধহয় আরও অনেক জটিল দেশ। এই দেশে অন্য ধর্মের মানুষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয় না। উঁচু জাতির হিন্দুরাই নিচু জাতির হিন্দুদের বাঁশ দ্যায় নিয়মিত। সেই নিচু জাতির হিন্দুরা আবার তাদের চেয়ে যারা আরেকটু নিচু, তাদের দ্যায়। এইভাবে ক্রমশ নিম্নতর পর্যায়ে দেওয়াদেয়ি চলতে থাকে। জারা হাটকে, জারা বাঁচকে, ইয়ে হ্যায় ইন্ডিয়া মেরি জান!
কিন্তু আলোচ্য এই উপন্যাসটা গুছিয়ে লিখতে পারেননি তসলিমা। একটা জরুরি বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে বড্ডো বেশি মোটাদাগের অভিব্যক্তি দেখিয়ে ফেলেছেন। চরিত্রগুলো খাপছাড়া, লক্ষ্যহীন। কাহিনিটা এলোমেলো। সম্ভবত উপন্যাসটা লেখার সময় তিনি নিজেই খুব “হাইপার” হয়ে ছিলেন। পারিপার্শ্বিক উত্তপ্ত ঘটনা চাক্ষুষ করলে যেকোনো সংবেদনশীল মানুষই হাইপার হয়ে যাবেন, এটা ঠিক কথা।
কিন্তু সাহিত্যিকরা তো সাধারণ মানুষ নন। উপন্যাস লেখার সময় তারা এরকম ল্যাজেগোবরে হয়ে গেলে উপন্যাসের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়না। একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটা নিম্নমানের উপন্যাস লিখেছেন তসলিমা নাসরিন। তবু তাঁর সাহসের কথা চিন্তা করে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।