Ratings1
Average rating5
রণজিৎ দাশের কবিতা পড়ে আমি আবিষ্কারের আনন্দ লাভ করেছি! বৈশাখদিনের ছুটির দুপুরবেলা অতর্কিত বৃষ্টিপতনের শব্দ ছিল চারিদিকে। ভেজা ঘাসের সবুজ কিন্তু তীক্ষ্ণ উজ্জ্বলতাকে পায়ে মাড়িয়ে কবিতাগুলো হেঁটে যাচ্ছিল পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা অতিক্রম করে।
দুঃখের ভিতরে আমি সুখ খুঁজি, পথ থেকে পথেরাংতা কুড়ানো এক ফুটপাতবালকের মতো...দুঃখকে সুখের মতো ব্যবহারও করতে শিখেছিযেভাবে সাপের বিষ, সূক্ষ্ম মাপে, অসুখ সারায়এভাবেই ঘুরে ঘুরে, আজীবনকেবলই পৌঁছেছি এক পথের জলসায়গভীর শীতের রাতে, যেখানে কাছে ও দূরেঅসংখ্য দুঃখের স্তূপ জ্বলে, আর গরিবেরা আগুন পোহায়যেখানে শ্রোতারা খুব শান্ত, অন্তর্মুখীঘুমচোখে বুঝে নেয়—গানটি দুঃখের, কিন্তু গায়িকাটি সুখী।
শহরে যখন কেউ পাগল হয়, তখন সে ট্রাফিক পুলিশ হয়ে যায়। নিজের খেয়ালে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে, দিনের পর দিন। নিখুঁত তার হাতের মুদ্রা, অটুট তার গাম্ভীর্য। কেবল তার নিয়ন্ত্রিত গাড়ি-ঘোড়াগুলি সম্পূর্ণ অলীক। সেসব গাড়ি-ঘোড়া কাউকে চাপা দেয় না, কোনো প্রিয়জনকে বাসস্টপে নামিয়ে দিয়ে যায় না...
যে বাক্য পেয়েছি স্বপ্নে, তাকে খুব সাবধানেতোমার ঘুমন্ত পিঠে নিঃশব্দ আঙুলে লিখে রাখি।বাক্যটি তোমার মধ্যে মিশে যায়, স্নায়ুকোষে, চুম্বকের টানে।ভোরবেলা জেগে উঠে, আমার ঘুমন্ত পিঠে, বিদ্যুৎ-আঙুলে,তুমি যে বাক্যটি লেখো, সেটিই দ্বিতীয় পঙক্তি, সহস্র জোনাকি !কবিতার জিহ্বা দিয়ে তুমি-আমি চুম্বনে লিপ্ত হয়ে থাকি।
তোমার মনে জমেছে এত বিষ, তুমিআমাকে ছোবল মারোআমিই সেই মহিষ, যার গহনকালো পিঠেমাঠের সকল গোখরো এসে নিশীথবিষ ঢালেতবেই তাদের শঙ্খ লাগে, মাথার মণি জ্বলে...তোমার মনে জমেছে এত বিষ, তুমিআমাকে ছোবল মারোআমিই সেই আকাশ, যার গহনকালো পিঠেতারা ফোটে, রাত্রিভর, একটি ছোবল একটি তারা,এভাবে, হাজারো
তরুণী কেবলই তার প্রেমিক পালটায়, সেমুহূর্তেই বুঝে নেয় পুরুষের ভীরুতা ও ফাঁকিআমি শুধু তরুণীর প্রতিটি মুডের জন্যআবহসংগীত ধরে রাখি।যতদিন সে না খুঁজে পাবে তার প্রকৃত প্রেমিক,ততদিন আমি তার স্বপ্নের ভিতরে অক্লান্ত বাজিয়ে যাব শুদ্ধ ও বিষন্ন মিউজিক।
‘হয়তো আমাদের এই গ্রহ অন্য কোনো গ্রহের নরক।' বলেছিলেন হাক্সলি, শিউরে ওঠার মতন কথা। হয়তো সেজন্যেই এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ দুঃখী, অধিকাংশ জন্তু হিংস্র, অধিকাংশ পোকা হিজড়ে, এবং অধিকাংশ জল লোনা। হয়তো সেজন্যেই এই নরক শাসন করে এক উলঙ্গ দানবী, যার নাম ‘অতৃপ্ত বাসনা'। হয়তো এমন আরেকটা গ্রহ আছে, যেটা আমাদের গ্রহের নরক। হয়তো সেই গ্রহের বর্ণনাই লিখিত হয়ে চলেছে আমাদের বেদ-বাইবেল-কোরানে, দান্তে ও মিলটনে, ব্যাংকের পাসবুকে আর রাতের দুঃস্বপ্নে, নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের ছোট ছোট পদস্খলনে।