Ratings1
Average rating4
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
অনেক আগের কথা। বাড়িতে “দেশ” পত্রিকা নেওয়া হতো বটে কিন্তু আমি সেটা পড়তাম না। আমি পড়তাম আনন্দমেলা আর কিশোরভারতী। মা “দেশ” পড়তো। খেয়াল করতাম পত্রিকা হাতে নিয়ে মা প্রথমেই পড়ে ফেলতো “বাগর্থকৌতুকী” নামের ছোট একটা ধারাবাহিক কলাম। পড়তে পড়তে মায়ের মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠতো। আমি আড়চোখে মা-কে দেখতাম। কলামটাও নেড়েচেড়ে দেখতাম, কিসুই বুঝতাম না। কী সব হিবিজিবি লেখাপত্তর...
চিরুনি তল্লাশি থেকে ইঁদুর দৌড়
মাল তুলতে প্রেস্টিজে গ্যামাকসিন
ইশে মানে— যে আর কী বুঝলেন না জয়গুরু
গণ্ডেরিরাম বাটপারিয়া হেশোরাম হুঁশিয়ার পাজঞ্জরিতে তিরিতঙ্ক লাগে
‘কোনও ব্যাপার না' ‘ওকে'
দেখো মগর প্যার সে
অবজ ধেচুয়া ঘোঙা
ঢাক ঢাক গুড় গুড়, গুড় গুড় ঢাক ঢাক
এত ভংগ বংগ দেশ তবু রংগে ভরা
চমকানোর কিছু নেই, এগুলো হলো বইটির কতিপয় অধ্যায়ের নাম। সেই হিবিজিবি কলামটি যে এত সুস্বাদু, এবং পড়তে পড়তে আমার মুখেও কখন যেন নিজের অজান্তে মুচকি হাসি চলে আসছে, এইসব অনেক পরের ঘটনা। “বাগর্থ” = বাক্ + অর্থ। বাক্ মানে কথা। অর্থ হচ্ছে সেই কথাটির মানে। একটা ছাড়া অন্যের অস্তিত্ব নেই। আমার নাম অরূপ। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ - রূপ নেই যার, কুৎসিৎ (অভিধানে এই মানেটাই প্রথমে উল্লেখ করা আছে)। কিন্তু সত্যিই যদি অরূপ মানে কুৎসিৎ হতো, তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ গান লিখতেন - “অরূপ তোমার বাণী, অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক সে আনি”...?
আক্ষরিক অর্থকে পেরিয়ে গেলে পাওয়া যাবে শব্দটির প্রকৃত অর্থ। অভিধানেই আছে, অরূপ মানে - “নিরাকার”। নিরাকার মানে, যে জিনিসটা আছে ঠিকই, অথচ তাকে চোখে দেখা যাচ্ছে না (আমাকে যদিও চোখে দেখা যায় বলেই জানি)। ঠিক তেমনি, বাংলা শব্দভাণ্ডারে এমন অসংখ্য শব্দ আছে যাদের বাক্ এবং অর্থ নিয়ে কৌতুক করা শুরু করলে কৌতুকের পাহাড় জমে যাবে। কৌতুক মানে আসলে কিন্তু ফাজলামি কিংবা নিছক ঠাট্টা নয়। কৌতুক শব্দটা এসেছে সংস্কৃত “কুতুক” শব্দ থেকে। কুতুক মানে কৌতূহল। বোঝাই যাচ্ছে, কৌতূহল না থাকলে কোনো কিছু নিয়ে আমোদ কিংবা ঠাট্টা করার অধিকার জন্মায় না।
মানুষের সৃষ্ট সবচেয়ে আশ্চর্য বস্তু হলো ভাষা। “বাগর্থ” হলো ভাষার মাথার মুকুটের সবচেয়ে মূল্যবান মণি। একটা ভাষা তৈরিই হয় শব্দ দিয়ে, আর সেই শব্দের অর্থ দিয়ে। তারপর আসে ব্যাকরণ, হ্যানা ত্যানা। জ্যোতিভূষণ চাকী ছিলেন বহুভাষাবিশারদ। বাংলা ছাড়াও সংস্কৃত, হিন্দি, পালি, উর্দু, ফারসি, ইত্যাদি ভাষাতেও পারদর্শী। আমাদের বাংলা ভাষার হজমশক্তি তো নেহাত কম নয়। পৃথিবীর নানা ভাষার শব্দভান্ডার থেকে শব্দ গ্রহণ এবং আত্তিকরণ করে বসে আছে আমাদের বাংলা ভাষা। আত্তিকরণ মানে বেমালুম হজম করে ফেলা। এমনকি এই “হজম” আর “বেমালুম” শব্দদুটোও মূলত আরবি ভাষা থেকে এসেছে। তো, ঐশ্বর্যমণ্ডিত এই যে বাংলা শব্দভাণ্ডার, এতে লুকিয়ে আছে কত যে আমোদ, কত মজা, কত কৌতুক, কত মুচকি হাসি, তার কিছুটা উপলব্ধি ঘটে এই বইটা পড়লে।
রোজকার খবরের কাগজ, হরেকরকম বইপত্র, কতরকম অভিধান, দৈনন্দিন মুখের ভাষা, আরো বিবিধ উৎস থেকে লেখক শব্দ (কিংবা শব্দগুচ্ছ) সংগ্রহ করেছেন। তারপর নেড়েচেড়ে দেখেছেন সেইসব শব্দের উৎস, ব্যুৎপত্তি, প্রয়োগ। শব্দের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকে শুধু তো সেই শব্দের অর্থ নয়। কতরকম বিপত্তি, কতরকম ত্রুটি, কতরকম ভ্ৰান্তি, কতরকম “হলদে সবুজ ওরাং ওটাং”। ভাষা কিংবা শব্দ নিয়ে এত মজাদার আলোচনা বাংলায় আমার খুব বেশি চোখে পড়েনি। একজন বহুভাষাবিদের পক্ষেই সম্ভব শব্দতত্ত্বের মতো একটা রসকষহীন বিষয়কে এমন মুচকি হাসিতে রূপান্তর করা।
খুব সামান্য একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমন, রোজকার কথায় মুদ্রাদোষ। যেটা আমাদের সব্বার আছে। কথার মাঝে কেউ বারবার বলে, “ইয়ে”— তো যেটা বলছিলাম, ইয়ে, টাকাটা এনেছো? আমার মানে, ইয়ে, পকেট একদম, যাকে বলে, ইয়ে, গড়ের মাঠ। কিংবা বলে, “চিন্তা করুন”— আমি ওকে, চিন্তা করুন, কত বোঝালাম, কিন্তু আমার কথায়, চিন্তা করুন, কানই দিলো না, সংসারের হাল, চিন্তা করুন, ওকেই তো ধরতে হবে, চিন্তা করুন? কিংবা বলে, “তোমার”— আমি তোমার, ক্রিকেটটা তেমন ভালোবাসিনে, ক্রিকেট তোমার, বড্ডো একঘেয়ে, আর ফুটবল তোমার, উত্তেজনায় ভরা! এরকম আরো অনেক আছে। “কী বুঝলেন?”, “ঠিক কিনা?”, “বললে বিশ্বাস করবেন না”, “good”, “very good”, “হলো গিয়ে”...।
- কাল ফিরলাম।
- good
- মা-কে সঙ্গেই এনেছি।
- good
- এখন থেকে আমার সঙ্গেই থাকবেন উনি।
- good
- বাবা হঠাৎ মারা গেলেন কিনা।
- good good.
এক পিশেমশাই এতবার “ইশে” বলতেন যে তার নামই হয়ে গেছিলো ইশেমশাই!