Ratings1
Average rating5
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
আজকে সকালে লছমন ফোন করেছিলো। অনেকদিন পরে। আমি তো ওকে প্রায় ভুলেই মেরে দিয়েছিলাম, কিন্তু ও আমাকে ভোলেনি। আমার নম্বরটাও হারায়নি। খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী হাল, দাজু?” (কুমায়ুনি ভাষায় দাজু মানে দাদা)। “নেহি জি আনা হ্যায় ইস বার?”
ইস বারের কথা তো এখনও কিছুই ঠিক হয়নি। কিন্তু আমার মনে পড়ে গ্যালো সেই উস বারের কথা। আমার প্রথমবার কুমায়ুন হিমালয় যাওয়ার কথা। মনে পড়ে গ্যালো হাওড়া থেকে রওনা দেওয়ার প্রায় চল্লিশ ঘণ্টা পরে, ট্রেন যখন কাঠগোদাম স্টেশনে ঢুকছে, সেই সকালবেলাটার কথা। ট্রেন থেকে নেমে টের পেয়েছিলাম, আমার পিঠের ভয়ানক ভারী রুকস্যাকটা হঠাৎ অনেক হালকা মনে হচ্ছে। পিছুটানের ভার কমে গেলে, বারবার দেখেছি, এভাবেই রুকস্যাকের ওজন কমে যায়।
এই কাঠগোদাম স্টেশনে তারপর আরো অন্তত ৪/৫ বার গেছি। নৈনিতাল কিংবা আলমোড়া যেতে হলে। কর্ণপ্রয়াগ কিংবা বাগেশ্বর যেতে হলে (বাগেশ্বরের মহারানির নামেই অবনীন্দ্রনাথের “বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী”)। কিংবা আরো আরো দূরে। সুন্দরঢুঙ্গা গ্লেসিয়ার। পিন্ডারি গ্লেসিয়ার। আরো অনেক দূরে। মিলাম গ্লেসিয়ার। কুমায়ুনের বেশিরভাগ জায়গায় যেতে হলে কাঠগোদামেই (কিংবা পাশেই হলদোয়ানিতে) নামতে হবে আগে। তারপর স্টেশনের বরফশীতল জলের কলে চোখমুখ ধুতে হবে। মুখ ধুয়ে স্টেশনের দোকান থেকে খেতে হবে এককাপ গরম চা। তারপর আরেক কাপ। তারপর? তারপর আবার কি? চরৈবেতি চরৈবেতি!
লছমনের সঙ্গে কথা শেষ হলে আমি দৌড়ে নিচের ঘরে গিয়ে বের করলাম এই বইটা। প্রতিবার আমাকে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে গেছেন ইনি। কবেকার কথা? গতজন্মের? আরেহ ন্না! এই জন্মেরই কথা! আমি যে কেমন ভাগ্যবান সেটা আমার মাঝে মাঝে মনেই থাকেনা। চম্পাবতে বসে জিম করবেটের “ম্যানইটার্স অভ কুমায়ুন” আর ক'জন পড়েছে? (চম্পাবতেই শেষবার ধরা পড়েছিলেন সেই হতভাগ্য শার্দুল শিরোমণি)। কিংবা মাইনাস তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গ্লেসিয়ার পার হতে গিয়ে পা পিছলে আলুর দম হয়েছে ক'জন? কিংবা ফিকে কমলারঙের বিকেলবেলায়, থোকা থোকা নীল রঙের ফল ফুটে থাকা একটা জুনিপার গাছের নিচে দাঁড়িয়ে, পিথোরাগড় শহর থেকে পঞ্চচুল্লির পর্বতশিখরে সূর্যকে দাউ দাউ আগুন ঢালতে দেখেছে ক'জন? ঘটনাগুলো ঘটবার অনেক আগে, যখন বাড়িতে বসে বেরিয়ে পড়ার চিন্তাভাবনার পালা চলছিল, তখন এই বইটা আমাকে তথ্য জুগিয়েছে, ভরসা দিয়েছে, সাবধান করেছে, মন্ত্রণা দিয়েছে। এই বইটার কাছে আমার অনেক ঋণ।
আবার কবে যাবো এখনও জানিনা। লছমন আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে। বলা হয়নি, লছমনের পুরো নাম লছমনপ্রসাদ কান্ডারি। বারতিনেক আমাদের গাইড ছিলো সে। বাংলায় কান্ডারি মানে নৌকার মাঝি। কেমন সার্থকনামা মানুষ! On the road and hanging by a song! না, কানে হেডফোন গুঁজে শোনা গৃহবন্দী গান নয়। ঘামে ভেজা ক্ষুধার্ত শরীর যখন আর একটা পদক্ষেপ নিতেও আপত্তি জানায়, বোতলের জল যখন তলানিতে এসে ঠেকে, বাঁপাশের গহীন জঙ্গলের ভেতর থেকে তখন যদি হঠাৎ ভেসে আসে অশ্রুতপূর্ব কোনো পাখির অদ্ভুত অপার্থিব সুরেলা ডাক। সেই অবস্থায়, সেই মুহূর্তে, পৃথিবীর আর কোনো গান এত মধুর মনে হয়না। এত শক্তি জোগায় না। আবার কবে শুনবো সেই গান? আবার কবে বলবো, বারবার উচ্চারণ করলেও যে-কথাটা কখনও পুরোনো হবার নয় :
THE MOUNTAINS ARE CALLING. AND I MUST GO!