Ratings1
Average rating4
বাংলা অ্যাকাডেমির এই লোকসংস্কৃতি সিরিজটা দারুন। আমার মাতামহ নোয়াখালীর মানুষ ছিলেন। ভারতে বসবাস শুরু করার পরেও তিনি ভারতীয় ছিলেন না ; নোয়াখালীর আলো-বাতাস-জল-মাটি পুরোপুরি ঢুকে ছিলো তাঁর বুকের ভিতর। মাথার ভিতর। এবং অবশ্যই মুখের ভাষা। এসব ছিলো আমৃত্যু। স্বাভাবিকভাবেই, আমার ভিতরেও সামান্য নোয়াখালী ঢুকে আছে।
লোকসংস্কৃতির উপাদান দুরকম হতে পারে। বস্তুগত এবং ঐতিহ্যগত। বস্তুগত উপাদানগুলো চোখে দেখা যায়। যেমন নোয়াখালীর হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি নানাবিধ লোকসামগ্রী। কিংবা সেখানকার বিশেষ খাবারদাবার। যেমন নোয়াখালীর ঘিগজ ধানের মুড়ি, যার রং হালকা গোলাপি। এছাড়া, গাছপালা-লতাপাতা। শিল্পকলা। যারা বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। অন্যদিকে, ঐতিহ্যগত উপাদানগুলো চোখে দেখা যায়না ঠিকই, কিন্তু তাদের প্রভাব থাকে অনেক বেশি। কারণ তারা থাকে মানুষের স্মৃতিতে, সত্তায়।
ঐতিহ্যগত উপাদানের একটা বড় অংশ হলো প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, সংগীত, ইত্যাদি। আমার বেশি উৎসাহ এইসব নিয়ে। এই বইতে খুব যত্ন নিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে এগুলো। যদিও আরেকটু যত্নবান হলে ভালো হতো। প্রবাদের একটা উদাহরণ দিই। “মায় কয়না পুত, মাসিয়ে কয় আঁর ভোইন হুত, আঁর ভোইন হুত!” এর অর্থ - মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। কিন্তু এই বইতে অর্থ দেওয়া আছে - অন্য আত্মীয়রা যতই আদর যত্ন দেখাক না কেন, তারা মায়ের মতো নয়। একেবারেই ভুল বোঝা হয়েছে প্রবাদটা। নোয়াখালীর ভাষা এতই দুরূহ যে অভিজ্ঞ সংগ্রাহকরাও ঘোল খেয়ে গেছেন। তবুও তাঁদের প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই খাটো করার উপায় নেই।
খুব সামান্যই বললাম। আরো অনেক কিছু রয়েছে এই বইতে। বেশ কিছু লোককবিতা কাহিনি কিসসা রূপকথা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। “বসন্ত কাল আইছেরে, গাছে ধৈচ্ছে হুল/ হুল নয়রে হুল নয়, গাছের কানের দুল” (হুল মানে ফুল :p)। আধুনিকতার আড়ম্বরে এইসব লোকজ উপাদানগুলো ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এদের সংরক্ষণ করা ভীষণ জরুরি। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আমার খুব প্রিয় প্রচ্ছদশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। রিভিউ শেষ করার আগে একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করি :
এক থাল সুয়ারি
গইনতে না হারি।
(এক থালা সুপারি, গুনতে না পারি)
কন্ চাই কিয়া?