Ratings1
Average rating4
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
দুপুরবেলা ঝমাঝম বৃষ্টির শেষে বিকেলবেলা বইয়ের দোকান থেকে কিনে এনে সন্ধেবেলা উল্টেপাল্টে খানিক নেড়েচেড়ে রাতে খাওয়ার পরে একপাতা দুপাতা করে চোখ বোলাতে বোলাতে রাত বারোটা-কুড়ির সময় চৌষট্টি নাম্বার অর্থাৎ অন্তিম পৃষ্ঠাটা উল্টে ফেলার পরে শেষমেশ ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার কথাটা মনে মনে স্বীকার করতেই হলো চিৎপটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।
শ্রীজাতর আগের কোনো কবিতার সঙ্গে মেলানো যায়না এই বইয়ের কবিতাগুলোকে যেমন গরমকালে রোদের মধ্যে অনেকক্ষণ মোটরবাইক দাঁড় করানো থাকলে তারপর হঠাৎ তাতে বসতে গেলে ছ্যাঁকা লাগে। প্যান্ট পরে থাকলেও লাগে (অবশ্য প্যান্ট না পরে মোটরবাইকে কেউ বসতে যাবেই বা ক্যানো)। কিংবা শীতকালে যদি একবালতি ঠান্ডা জল... অবশ্য শীতকালের ব্যাপারটা এই বৈশাখ মাসে একটুও আন্দাজ করা যাবে না। কত তাড়াতাড়ি আমরা ভুলে মেরে দিই সবকিছু। প্রায় সবকিছুই। এই বৈশাখ মাসটার কথাও ভুলে যাবো সামনের আশ্বিনে।
যে-কোনও কবিতার একটু নীচ দিয়ে, বয়ে যাচ্ছে একটা চোরা স্রোত। চক্রান্তের। ঠিক যেমন রেড কার্পেটের ধারে ধারে চোখে-না-পড়া পেরেকগুচ্ছ। ঠিক যেমন বাসের ফুরফুরে জানলার কোণে লেগে থাকা টাটকা বমি। হয়তো লেখা হচ্ছে দীঘির কথা, কিন্তু তার অনেক গভীরে, নরম মাটিতে পুঁতে রাখা আছে বাপি মণ্ডলের লাশ, যা জাল ফেলেও পাওয়া যায়নি। হয়তো লেখা আছে ধানক্ষেতের কথা, কিন্তু তার মাঝখানটায় দলাপাকানো রক্তমাখা সায়া। এইরকম। পংক্তির ঠিক মাঝখানে না-দেখতে পাওয়া একটা মিহি ছুরির গুনগুন সুর লুকিয়ে আছে। কমা-র আগে দাঁড়িয়ে দম নিচ্ছে একটা মাছ কাটার লোলুপ বঁটি। স্তবকের ডানদিকের পরদার আড়ালে সায়ানাইড। কবিতা, যা ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, আসলে একটা অজুহাতমাত্র।
শ্রীজাতর কবিতা যাদের ভালো লাগে, এই কবিতাগুলো তাদের ভালো না-ও লাগতে পারে। আবার লাগতেও পারে। আবার না-ও লাগতে পারে। যেমন এই কবিতাটার কথাই ধরা যাক!
হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে যখন পরমাণু বোমা আছড়ে পড়ছিল, আমি তখন কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে একটা গাড়ির তপ্ত বনেটের ওপর বসে এন্তার ড্রাম পেটাচ্ছিলাম। ঘিরে ছিল মাতাল বন্ধুদল, আর হে পিতা, আমি নিজেই কি কম মাতাল ছিলাম সেই রাত্রে? বোতলের পর বোতল বিয়র কিচ্ছুটি না জানিয়ে আমার গলা বেয়ে হুড়মুড় করে নেমে গেছিল পাকস্থলিতে। ঠিক যেমন প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবে যোনিপথ বেয়ে। দেদার গানবাজনা হচ্ছিল রাস্তার একটা সস্তা পাবের সামনে। গিটারের তুবড়ির সঙ্গে লয় মেলাতে পারছিল না আমার এলোমেলো মাতাল ড্রাম কিট। কিন্তু, হে পিতা, আমিই কি মেলাতে পারছিলাম? আমি কি জানছিলাম না, আমার ড্রামের এক একটা বিট-এর সঙ্গে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত হিলহিলে সাপের মতোই নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে দাঁতক্যালানে তেজস্ক্রিয়তা? একটু একটু উন্মাদনার দুলুনি শরীরে বইয়ে দিতে দিতে আমি কি বুঝতেও পারছিলাম না যে ওরা, আমার এই ড্রামের স্টিকদুটোকে অগুনতি যুদ্ধবিমান বানিয়ে ঢুকিয়ে দেবে আমাদেরই পেছনে? আমি সবটাই বুঝেছিলাম, হে পিতা। কিন্তু আমি, হাড় বিচক্ষণ রিচার্ড ফেইনম্যান, নোবেল পুরস্কারটা আন্দাজ করে উঠতে পারিনি।
সব্বাই ওপেনহাইমারকে গালি দ্যায়। আর একজন ক্রুদ্ধ বাঙালি কবি ফেইনম্যানকে কেমন দিলো! আগে হলে বলতুম, উফ কি দিলো, চারআনা কিলো।
ভালো না-ও লাগতে পারে।
আবার লাগতেও পারে।
কিছুই বলা যায় না।
বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে : “প্রিয় চাবুক, পিয়ের পাওলো পাসোলিনি, আপনাকে”। চেনেন নাকি তাঁকে?
(এটা পাসোলিনি নয়। এটা নোবেলজয়ী ড্রামবাদক।)