Ratings17
Average rating4.2
বসনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রোয়েশিয়ান লেখক ইভো আন্দ্রিচ-এর ঐতিহাসিক উপন্যাস দ্যা ব্রিজ অন দ্যা দ্রিনা। এই একটি বই দিয়েই জগৎজোড়া খ্যাতি পেয়ে যাওয়া আন্দ্রিচ ১৯৬১ সালে নোবেল পুরষ্কার জেতেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস যেহেতু, তাই ইতিহাসের আলোচনা করতেই হচ্ছে কিছুটা। এই লেখাটির শেষ পর্যন্ত আপনি যাননি এখনো, আমি গিয়েছি; আমি জানি, কত দীর্ঘ একটি আলোচনা ফেঁদে বসেছি এখানে! তাই উপক্রমণিকায় আর বাজে কথা খরচ না করে মূল আলোচনায় চলে যাই, ওপরের ছবিটির apology তখনই দেয়া যাবে খন।
'৮০ এবং '৯০-এর দশকে যাঁদের বেড়ে ওঠা, তাঁরা প্রায় সবাই-ই সংবাদপত্র বা টিভিতে দিনের পর দিন একটি সংবাদ দেখে গেছেনঃ বসনিয়ায় প্রাণঘাতী যুদ্ধ চলছে, হাজার হাজার মানুষ নির্বিচারে মারা পড়ছে প্রতিদিন। ভারতবর্ষে যেখানে আমাদের নিবাস, সেখান থেকে বলকান ব্লকের এ অঞ্চলগুলো এত এত ভীষণ দূরে যে সেখানের এ সংঘর্ষের কারণ বা পরিস্থিতি আমরা কখনো আসলে বুঝে উঠতে পারি না; কে কাকে মারছে, কারা যুদ্ধ করছে-এ বিষয়গুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে না। ইসলাম-প্রধান দেশ হবার কারণে শুক্রবারের জুমুয়া'র নামাজের সময় আমরা মসজিদে শুনতে পাই ইমাম সাহেব বসনিয়ার মুসলমানদের ওপর চলা এথনিক ক্লিনজিং-এর প্রতিকার চেয়ে দোয়া করছেন, ওপরওয়ালা যেন বসনিয়ায় আমাদের মুসলমান ভাইদের সব কষ্ট লাঘব করে দেন, সে প্রার্থনা করে আমরাও ‘আমিন আমিন' স্বরে ইমাম সাহেবের সাথে গলা মিলিয়ে বসনিয়ার মুসলমানদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করি। পরের শুক্রবারটি না আসা পর্যন্ত আমরা বসনিয়ার সংঘর্ষ নিয়ে আর বেশী একটা মাথা ঘামাই না। কেন বসনিয়ায় মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেবার প্রচেষ্টা চলছে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের আসলে তাকাতে হবে প্রায় পৌনে এক হাজার বছর বয়েসী লম্বা এক ইতিহাসের দিকে। যে বাঙলাদেশী প্রতিবার রাজনৈতিক ক্ষমতার পালা পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজের দেশের ইতিহাস নতুন করে শেখে, তার কাছে বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস জানতে চাওয়া বাতুলতা। আমরা তাই জানতে পাই না (বা চাই না) রাশিয়ার দোরগোড়ায় সেই সুদূর বলকানে স্লাভদের মাঝে মুসলমান মানুষ কোথা থেকে এলো, আর কেনই বা এতগুলো দশক কি শতক ধরে এত রক্ত ঝরে চলেছে।
১৩৮৯ সনে তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য ব্যাটল অফ কসোভো-তে জয়লাভ করে বলকান অঞ্চলের ওপর বিশাল আধিপত্য বিস্তার করে। ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু বিজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতন অবশ্য এর বেশ আগেই শুরু হয়ে গেছে, তখতের দখল নিয়ে নিজেদের মাঝে খেয়োখেয়ির দরুন। অটোমানরা এসে কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেয়। একে একে বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া ইত্যাদি অঞ্চলগুলো চলে যায় অটোমান মুসলমান শাসকদের পুরোপুরি দখলে। বলকানে অটোমান সাম্রাজ্য গেঁড়ে বসবার পর শুরু হয় এক তুঘলকী কাণ্ড; খ্রীষ্টান পরিবারগুলোতে নিয়মিত অটোমান সৈনিকেরা হানা দিতে শুরু করে এবং ৮-১০ বছর বয়েসী বালকদের অপহরণ করে তারা ইস্তাম্বুলে নিয়ে যায়। এই বলকান খ্রীষ্টান বালকদের অটোমানরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়ে যোদ্ধা বানায়, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সব পদেও আসীন হয়। অপহরণ করে নিয়ে আসার পর প্রথম যে কাজটি করা হয়, তা অবশ্যই ধর্মান্তরকরণ। এ ধরণের জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের মাধ্যমেই মূলত বলকানে ইসলামের প্রসার ঘটে। মেহমেত পাশা সকোলোভিচ এমনই একজন বাল্যে অপহৃত বলকান, যিনি পরবর্তীতে অটোমানদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে দিগ্বিজয়ী যোদ্ধা হন, এবং অটোমান সাম্রাজ্যের গ্র্যান্ড ভিজির-এর সিংহাসনে বসেন (ভিজির => উজির, বা সরকার প্রধান; অটোমান সুলতানের পরেই এই পদের অবস্থান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে আজও উর্দুতে ‘উজির-এ-আজম' বলা হয়)।
বসনিয়ার দ্রিনা নদীটি বেশ অদ্ভুত; আর সব নদীর মতো এই নদীর পানি নীল নয়, সবুজ! সার্বিয়ান- বসনিয়ান শহর ভিজেগ্রাদে এ নদীর অবস্থান। এই ভিজেগ্রাদেই মেহমেত পাশার বাল্যকাল কেটেছে, এখান থেকেই ছেলেবেলায় অপহৃত হয়েছিলেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন হবার পরেও মেহমেত পাশা খুব সম্ভব তাঁর সার্বিয়ান-অর্থোডক্স খ্রীষ্টান জন্মপরিচয়টি ভুলে যেতে পারেননি; শেকড়ের টানেই কী না কে জানে, ১৫৭৭ সালে তিনি দ্রিনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করেন। সাড়ে চারশ' বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই সেতু আজও দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। মাঝে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে বলকান যুদ্ধে বেশ অনেকখানি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিলো, আবার তা পুণঃনির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুটি আজ জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে। ইভো আন্দ্রিচ-এর ঐতিহাসিক উপন্যাস এই সেতু এবং এর ইতিহাস নিয়েই। এই সেতুটি আসলে শুধু একা মেহমেত পাশা বা ৬০০ বছরের অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনকালের সাক্ষ্যই দেয় না; বলকান ব্লকে শত শত বছর ধরে যে হানাহানি হয়ে আসছে, সে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এই সেতু। আন্দ্রিচের উপন্যাসে উঠে আসে বলকানের ঐ অঞ্চলে মানুষে মানুষে হানাহানি কিভাবে দ্রিনার সবুজ পানি বারবার রক্তে লাল করেছে। ১৯১৪ সালে ঘটে যাওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট জানতে এবং বুঝতে হলেও আমাদের চোখ কিছুটা ফেরাতে হবে মেহমেত পাশার শখের এই সেতুর দিকেই।
ছবি-সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
যে ব্যাপারটি আন্দ্রিচ-এর এ বইতে বারবার চোখে পড়ে তা হলো ভিনদেশী, ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতির শাসকদের যাঁতাকলে স্লাভিক জনগণের ক্রমাগত পিষ্ট হয়ে চলা। ২০ শতকের শুরুর দিকে অটোমানরা বলকানে তাদের ৬০০ বছরের শাসনে যতি টানে বটে, কিন্তু তাতে বলকান জনগণের পরাধীনতার পালা শেষ হয় না। এবার সেখানে হাত বাড়ায় অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরীয় (বা হাবসবার্গ) সাম্রাজ্য । অটোমান এবং হাবসবার্গীয়-দুই সময়েই বলকানের জনগণ ভুগেছে, তবে আন্দ্রিচ তাঁর বইতে অটোমান শাসনামল নিয়ে সুক্ষ্ম এবং স্থুল-দু'ভাবেই বেশ অনেকটা খেদ ঝেড়েছেন। ইসলামিক শাসন-ব্যবস্থার সাথে ঐতিহাসিকভাবে অর্থোডক্স-খ্রীষ্টান বলকান এলাকাগুলো কখনো সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেনি। শাসন-ব্যবস্থার বিরোধীদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনের জন্য অটোমানদেরও ছিলো আকাশছোঁয়া খ্যাতি। পান থেকে চুন খসলেই ভয়ানক সব শাস্তির খড়্গ নামিয়ে আনতো তারা। আন্দ্রিচ টুকে রেখেছেন সেইসব বিদ্রোহী স্লাভদের কথা, অটোমান শাসকদের বিরোধীতার জন্য যাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের শিরোচ্ছেদ করে কাটা মুণ্ডুগুলো দ্রিনা নদীর সেই সেতুর ওপর দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা হতো প্রদর্শনীর জন্য। সেতুর প্রবেশমুখে, বা সেতুর ওপরেই এখানে সেখানে এত এত কাটা মাথা নিত্যনতুন শোভা পেতো যে অভ্যেসের দাস মানুষের সেদিকে আর চোখই পড়তো না। কয়েকশ বছর পর যখন এভাবে কাটা মাথা ঝুলিয়ে রাখা বন্ধ করা হয়, তখন নাকি অনেকে খেয়ালই করেনি দুই সময়ের পার্থক্যটা কী!
এছাড়াও, বিদ্রোহীদের পশ্চাৎদ্দেশ দিয়ে চোখা, ভীষণ মসৃণ বাঁশ ঢুকিয়ে পিঠ বা কাঁধ দিয়ে বের করে রোদ কি প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মাঝে ঘণ্টার পর ঘন্টা টাঙিয়ে রেখে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে ঘটিয়ে একটু একটু করে খুন করার কায়দাটিও অটোমান শাসকদের বেশ প্রিয় ছিলো। নারকীয় এইসব শাস্তির বিধান জারী রেখে যে ভয়ের সংস্কৃতিটি অটোমানরা আরোপ করে, তা বলকানের ওপর তাদের ৬শ বছরের প্রায় নিরুপদ্রব শাসনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। শাসক শ্রেণীর সাথে জনগণের সাংস্কৃতিক পার্থক্যটা ৬শ বছরে এত বেড়ে যায় যে, ১৯০৮ সালে যখন অটোমানরা বলকানের পাট চুকায়, তখনও ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স খ্রীষ্টান, এবং ইহুদীরা মুসলমানদের জুজুর ভয়ে থাকতো। হাবসবার্গ খ্রীষ্টান সাম্রাজ্য ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের ওপর এবার পাল্টা ঝাল ঝাড়া শুরু করে খ্রীষ্টানরা। অবিশ্বাস ও প্যারানয়া-যেকোন যুদ্ধের এই-ই তো রেসিপি। দুই ধর্ম বিশ্বাসের এই প্যারানয়া আজও একই শক্তিতে দীপ্যমান, যার হাত ধরেই ১৯৯২ সালে ঘটে যায় বসনিয়ার যুদ্ধ। বলকানের বুক থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেবার হীন এক প্রতিজ্ঞায় নামে সার্ব ও ক্রোয়াটরা।
একটি দেশের মূল ভিত্তি কী হওয়া উচিৎ? ধর্ম, নাকি ভাষা? আমাদের উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, ও বাঙলাদেশ ভাগ হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে; এই ভাগাভাগির পেছনে বহু ধর্মীয় সংঘাত, হানাহানি, ধর্ষণ ও রক্ত জড়িয়ে আছে। যে দেশগুলোই ধর্মের ভিত্তিতে নিজেদের পরিচয় নির্ধারণ করেছে, বা সেদিকে যাবার পাঁয়তারা কষছে, তারা কেউই আজ ভালো নেই, থাকবার কথাও নয়। একই ধর্মের সব মানুষদের নিয়ে দেশ বানাবার মতো বর্বর, মধ্যযুগীয়, এবং বর্ণবিদ্বেষী আর কিছু আছে কি? এ ধরণের রাষ্ট্রব্যবস্থায় মানব চরিত্রের বৈচিত্র্যতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, এবং সৃষ্টিশীলতার স্থান থাকে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই পরোক্ষভাবে দেশগুলোর রাজনৈতিক আসনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নীতিগুলো ধর্মকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয়। যেহেতু গোটা বিশ্বের সবাই একই ধর্মের অনুসারী নয়, একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে দেশ চালাতে গেলে তাই অন্য পদ্ধতিতে চালনাকৃত দেশগুলোর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, বা যেকোন মানবিক যোগাযোগই কার্যত বাধাগ্রস্ত হয়। ধর্মীয় অনুশাসনে চলা দেশগুলো একদিকে যেমন নিজেদের জনগণকে ধর্মের কলা খাইয়ে প্রতারিত করে চলে, তেমনি বৈশ্বিক ধর্মীয় উন্মাদনাতেও ঘি ঢালে। ভাষার ভিত্তিতে দেশ বানাবার ধারণাটির শামিয়ানা ধর্মের শামিয়ানার চেয়ে ঢের, ঢের বড়-এটাই আমার ব্যক্তিগত মত। কিন্তু... কিন্তু, ভাষার ভিত্তিতে দেশ হলেই কি সব হানাহানি, মারামারি শেষ হয়ে যাবে? মানুষে মানুষে পার্থক্য ঘুচে যাবে?
স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মন্টেনেগ্রো, সার্বিয়া, ও ম্যাসেডোনিয়া-এই ছ'টি অঞ্চলকে নিয়ে মার্শাল টিটো সমাজবাদী ইউগোস্লাভিয়া বানিয়েছিলেন; সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই অঞ্চলগুলোর প্রত্যেকটিই ইউগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজ নিজ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সাবেক ইউগোস্লাভিয়ার এই ছ'টি দেশ জুড়ে যে আড়াই কোটি মানুষ আছে, তাদের মুখের ভাষা ‘দক্ষিণ স্লাভিক' পরিবারের অন্তর্গত (বলকানে আরো দু'রকম স্লাভিক ভাষার প্রচলন রয়েছে; পশ্চিমী স্লাভিকঃ রুশ ও ইউক্রেনীয়, এবং পূর্বীয় স্লাভিকঃ পোলিশ, চেক ইত্যাদি)। ইভো আন্দ্রিচ তাঁর তরুণ বয়েসে দক্ষিণ স্লাভিক ভাষাভাষীদের নিয়ে একটি দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, বলকানের বাস্তবতায় ক্রমে সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসেছেন। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, ও সার্বিয়াতে মানুষ ‘একই ভাষায়' কথা বলে, যাকে এখন বসনিয়ান-ক্রোয়েশিয়ান-সার্বিয়ান বা বিসিএস ভাষা বলা হয়। ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ানরা এই ভাষা লেখেন ল্যাটিন হরফে, অর্থোডক্স সার্বরা লেখেন সিরিলিক হরফে, আর বসনিয়ার মুসলমানেরা এই একই ভাষায় কিছু তুর্কী শব্দ আমদানী করেছেন, ভাষাটিকে ইসলামিক একটি রুপ দেবার জন্য, অনেকটা আমাদের জল-পানি যেমন (অর্থাৎ, নিজেদের ভাষার পার্থক্যের ভিত্তিটি এঁরা আপন আপন ধর্মবিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়েছেন)। যদিও এঁরা সবাই সবার কথা দিব্যি বুঝতে পারেন, তিনটি অঞ্চলের মানুষেরাই নিজ নিজ ভাষাটিকে একটি স্বকীয় ভাষা হিসেবে দাবী করে আসছেন। ১৯৯২-এর বসনিয়ার যুদ্ধে এই তিনটি দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে মেক্সিক্যান স্ট্যান্ডঅফে দাঁড়িয়ে যায়; লক্ষাধিক মানুষ অনর্থক প্রাণ হারায়, ধর্ষিত হয় অগুনতি নারী (বিশেষত বসনিয়ান মুসলমান নারী)। ভাষার একাত্নতা এঁদের একে অপরের কাছে নিজেদের পশু হিসেবে প্রতীয়মান করাবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তবে এই সংঘাতের গোড়ায় কার্যত পানি ঢেলেছে সেই ধর্মবিশ্বাস-ই।
ভাষাবিদদের মাঝে একটি কৌতুক প্রচলিত রয়েছেঃ ভাষা (language) এবং আঞ্চলিক টান (dialect)-এর মাঝে পার্থক্য কোথায়? এর উত্তর হলোঃ ভাষা আসলে এমন একটি আঞ্চলিক টান যার সমরশক্তি রয়েছে। অর্থাৎ, নিজের ভাষাটির মর্যাদা স্থাপন করতে গেলে আপনাকে কিছুটা গায়ের জোর খাটাতেই হবে! বলকান অঞ্চলের জন্য এই কথাটি ভীষণভাবে খাটে। চট্টগ্রামে বহুল প্রচলিত স্থানীয় চাটগাঁইয়া ভাষাটি বাঙলাদেশের সিংহভাগ মানুষই বোঝেন না, এবং এটিকে বাঙলাদেশে প্রচলিত বাঙলা ভাষার একটি আঞ্চলিক রূপ হিসেবেই দেখেন। চাটগাঁইয়া ভাষাভাষীরা আবার চট্টগ্রামের বাইরের কাউকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ইতার তন ছিটাইঙ্গা ন আইশ্যে দ্দে, ইতা বৈঙ্গা (“এই ব্যক্তি চাটগাঁইয়া পারে না, সে বহিরাগত!”)। ওদিকে রোহিঙ্গারা প্রায় এই চাটগাঁইয়া ভাষাটিরই খুব কাছাকাছি একটি রূপ আরবী হরফে লিখে সেটিকে রোহিঙ্গা ভাষা হিসেবে স্বকীয়তা দান করেছেন। ধর্ম কিংবা ভাষা কিংবা জাতীয়তাবোধ-মানুষ আসলে কোন না কোন একটার ছুতোয় নিজেকে/ নিজের দলকে অপরের চেয়ে উঁচুতে দেখতে চায়। বসনিয়ায় যে খ্রীষ্টধর্মী সার্বরা রয়েছে, এবং সার্বিয়ায় যে মুসলমান বসনিয়ানরা রয়েছে, তারা তাদের শতাব্দী-প্রাচীন সংঘাতের ইতিহাসটি ভুলতেই পারছে না; অবিশ্বাস এবং সন্দেহের দুষ্ট চক্রে পাক খেতে খেতে বারবারই তারা জড়িয়ে পড়ছে নিত্যনতুন সংঘাতে। ১৯৯২-১৯৯৫, এই ৩ বছর ধরে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার দখল নিয়ে যুদ্ধ এবং গণহত্যার দুঃস্বপ্নের পর শেষমেষ বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগে থাকে বসনিয়ান সার্বরা (রিপুবলিকা সেরপ্স্কা, মানচিত্রের লাল অংশ), আরেকভাগে বসনিয়ান মুসলমানরা (ফেডারেশন অফ বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা)।
ছবি-সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
সার্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি রাদোভান কারাদচিচ বসনিয়ান মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে এখন আজীবন জেলের সাজা খাটছেন, কিন্তু সার্বিয়ায় তাঁকে জাতীয় নায়ক হিসেবে দেখেন এমন মানুষের সংখ্যাও খুব কম নয়। জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম-এ দু'টি বিষাক্ত পিল একসাথে গলাধঃকরণ করে বর্ণবিদ্বেষী কুৎসিত একটি রূপ গ্রহণ করা (মূর্খ) মানুষের চিরাচরিত লক্ষণ। বসনিয়ার যুদ্ধের প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে যাবার পর জাতিগত বিদ্বেষ আজ আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সার্বিয়ান নেতা মিলোরাদ দোদিচ তাঁর পূর্বসুরী কারাদচিচের সিলসিলায় আবার যুদ্ধ লাগাতে চাইছেন, বসনিয়ান মুসলমানদের বের করে দিতে চাইছেন। সুদূর তুরস্ক থেকে আসা শাসকদের হাত ধরে মুসলমান হয়ে যাওয়া স্লাভ এখন বাকী সব স্লাভদের কাছে ‘বৈঙ্গা'।
ইভো আন্দ্রিচ তাঁর এ গোটা বইয়ে মুসলমানদের প্রায় পুরোটা সময় হয় ‘তুর্কী' নয় ‘আরব' বলে সম্বোধন করেছেন। বিদেশী একটি সংস্কৃতি যে ৬শ বছরেও তাঁর নিজের সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়নি, এক হবার চেষ্টা করেনি, এমন একটি আক্ষেপই সম্ভবত মোটা দাগে উঠে আসে শেষ পর্যন্ত এ বইয়ে। বসনিয় সাহিত্য সমালোচকরা আন্দ্রিচের প্রতি মুসলিম-বিদ্বেষ-এর অভিযোগ টানেন, আন্দ্রিচ একেবারে দুধে ধোয়া তুলসী পাতাও হয়তো নন, কিন্তু আন্দ্রিচকে কৃতিত্ব দিতেই হয় একটি কারণে। এ বইটি লিখে বসনিয়ার জনগণের ৬শ বছরের সংঘাতের ইতিহাস জানিয়ে আন্দ্রিচ মূলত আমাদের মনে করিয়ে দেন, ধর্মের পার্থক্য এ অঞ্চলের ওপর যে গভীর ক্ষত তৈরী করে দিয়ে গেছে বিগত শতকগুলোতে, এর প্রভাব খুব সহজে চলে যাবে না, আরো বহু বহু দশক ধরেই সম্ভবত এই সংঘাত টেনে যেতে হবে। এ লেখা শুরু করেছিলাম টুইটার থেকে প্রাপ্ত একটি ছবি দিয়েঃ গত বছর নভেম্বরে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই ম্যাচে ইউক্রেনীয় দর্শকেরা রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে রাশিয়ার পতাকাটি উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছিলো, কিন্তু সেটি তখন আবার দেখতে সার্বিয়ার পতাকার মতো দেখায়। খেলা দেখতে আসা বসনিয় দর্শকেরা ইউক্রেনীয়দের সার্ব ভেবে আক্রমণ করে বসে। বলকানের ইতিহাস যাঁর জানা আছে, তিনি কি এতে মোটেই অবাক হবেন?
আন্দ্রিচ যে এ বই লিখে আমাদের মনে করিয়ে দিলেন এই সংঘাত আরো বহুদিন চলবে, এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণকে দাঁড় করানো যায়ঃ সত্য স্বীকার করে নেবার ক্ষেত্রে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর ভীষণরকম কৃপণতা। ইসলামিক বিশ্বের প্রতিটি দেশেই গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, নাগরিকের ভোটাধিকার, রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার পৃথকীকরণ, ও শাসকদের জবাবদিহিতা-এ বিষয়গুলো চরমভাবে অপব্যবহৃত হয়; এই দেশগুলোর মাথা যাঁরা, নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে মধ্যযুগীয় প্রথাতেই তাঁরা দেশ চালিয়ে থাকেন, ফলে তাঁদের দেশগুলোর জনগণেরা সত্য-সন্ধানী হতে পারে না, সত্যের চর্চা করতে শেখে না, এবং কার্যত সত্য কথাও বলতে তারা জানে না। যেখানে সত্যের চর্চা ছিনতাই হয়ে গেছে, সেখানে কোন বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা হতে পারে না, কোন ঘটনার সঠিক কার্যকারণও সেখানে জানা যায় না। এইসব কারণে গোটা ইসলামিক বিশ্বই জ্ঞানচর্চার দিক থেকে, এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগ ইসলামিক বিশ্বের; এঁরা যদি নিজেদের ধর্মবিশ্বাসটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে শুধু সেটিকেই অন্ধভাবে আঁকড়ে ধরে রেখে বাকী বিশ্বকে শত্রু ঠাউরে নিজেদের অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঠেলে যাবার চিরাচরিত ঐতিহ্যটি চালিয়ে যান, পৃথিবীর বাকী ৩ ভাগ মানুষের জনজীবনের ওপরও তা বিরূপ ভূমিকা রাখা শুরু করবে।
অটোমান বা যেকোন ইসলামিক শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের ইতিহাস ইসলামিক বিশ্বের কোথাওই স্বীকৃত নয়; নিজেদের ধর্মের ভাইরা কখনোই কোন খারাপ কাজ করতে পারেন না-এমন একটি আত্নসৃষ্ট প্রপঞ্চে গা ডোবাতে মুসলমান জনগণ ভালোবাসেন। তাঁদের এই ভ্রান্তিবিলাসের জন্যই আর্মেনিয়ার ওপর চালানো তুরস্কের বা ইয়েমেনের ওপর চালানো সৌদি আরবের, বা বাঙলাদেশের ওপর চালানো পাকিস্তানের গণহত্যার কোন বিচার আন্তর্জাতিক কোন আদালতে হয় না, যেমনটা হয়েছে রাদোভান কারাদচিচ বা তাঁর দোসর স্লোবোদান মিলোসেভিচের। তুরস্কে বা পাকিস্তানে বা সৌদিতে উপর্যুক্ত গণহত্যাগুলোর ব্যাপারে কথা বলা কার্যত রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল। মুসলিম দেশগুলোর মাঝে যেহেতু কোন ঐক্য নেই, এরা একজোট হয়ে মুসলমানদের ওপর চলা কোন অবিচারের প্রতিবাদও তাই করতে পারে না, ফলে অত্যাচারিতের ওপর অত্যাচার বাড়তেই থাকে। বসনিয়ায় নতুন করে যে ধর্মীয় টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে ইসলামিক বিশ্ব আদৌ ভাবিত নয়, যেমনটি তারা নয় চীনের উইঘুরদের নিয়েও। ইরান, সৌদী-আরব, তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, সিরিয়া, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান-ইসলামিক বিশ্বের চাঁই এই সবক'টি দেশ রায় দিয়েছে চীন উইঘুরদের মোটেই অত্যাচার করছে না। বসনিয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু হবে না, কারণ ধর্মের ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে এরা কেউই রাশিয়ার (বা চীনের) অর্থনৈতিক আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
ইভো আন্দ্রিচ-এর এ বইটির প্রেক্ষাপট নিয়েই সব কথা খর্চা করে ফেললাম, বইটি কেমন সে আলোচনায় যাবার সুযোগ পাইনি। এক কথায় বলতে গেলে বইটি আসলে খুব সুখপাঠ্য কিছু নয়। উপন্যাসের যে চিরাচরিত ধারা, সেটির চেয়ে বেশ অনেকটাই ব্যতিক্রম এ বই, কারণ এটি লেখা হয়েছে বেশ অনেকটাই নন-ফিকশন বা প্রবন্ধের আকারে। স্থায়ী কোন চরিত্র নেই, ৩১৫ পাতার বইতে সংলাপও সাকুল্যে ১০ পাতার মতো। শিল্পমান বিবেচনায় বইটি আসলে বেশ কম নাম্বারই বোধহয় পাবে, অন্তত ইংরেজী অনুবাদে পড়ে আমার তাই মত! আগ্রহোদ্দীপক, বর্ণিল এক ঐতিহাসিক সময়ের গল্প ধরেছেন আন্দ্রিচ, সেই সময়ের মায়াতেই বইটি এগিয়ে যায়, আন্দ্রিচের লেখনশৈলীতে বেশী একটা নয়। মুসলমানদের কাছ থেকে নিন্দা কুড়নো, ‘মুসলিম-বিদ্বেষী' তকমা এঁটে যাওয়া, এবং নিজ বইতে স্লাভিক মুসলমানদের তুর্কী কিংবা আরব বলে যাওয়া আন্দ্রিচ নোবেল জেতার পর যা টাকা পেয়েছিলেন, তার সবটাই তিনি বসনিয়ার গ্রন্থালয়গুলোতে বই কেনার জন্য দান করে দেন, নিজের জন্য কিছুই রাখেননি। ঐতিহাসিকভাবেই মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়ার গ্রন্থাগারের প্রতি তাঁর এই মায়া সম্ভবত ইঙ্গিত দেয় দিনশেষে তিনি মুসলমান-ক্যাথলিক-অর্থোডক্স-ইহুদী ভেদে একটি দক্ষিণ-স্লাভিক ঐক্যই দেখতে চেয়েছেন, ফালতু ধর্মীয় দলাদলি নয়।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচিত হয় এই বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর হাবসবার্গ সাম্রাজ্য যখন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে এক করে ঘোষণা করে তারাই এই অঞ্চলের নতুন মালিক, বসনিয়ান সার্বদের মোটেই পছন্দ হয় না এই প্রস্তাবনা। ৬ শতকের পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ থাকা স্লাভরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা দাবী করে। হাবসবার্গ সাম্রাজ্যের রাজপুত্র আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ তখন সশরীরে সারায়েভো গিয়ে হাজির হন তাঁর দাবীটি জোরালো করবার জন্য। সারায়েভো'র রাস্তা দিয়ে আর্চডিউক সার্বিয়ার জনগণের সামনে গাড়ীবহর হাঁকিয়ে শোডাউন করবেন-এমনটাই ছিলো পরিকল্পনা। নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ মূহুর্তে ভিন্ন এক রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কিন্তু গাড়ী বহরের দুই চালক ছিলো জাতে চেক, গাড়ী ডানে ঘোরাবার জার্মান ভাষার নির্দেশ তারা বোঝেনি। বামের রাস্তায় ১৯ বছরের সার্বিয়ান তরুণ গাভ্রিলো প্রিন্সিপে পিস্তল হাতে প্রস্তুত হয়েই ছিলো, আর্চডিউকের বুকে দু'টো গুলি সেঁধিয়ে দিতে বেশী কষ্ট করতে হয়নি।
শুরু হয়ে যায় ৪ বছর মেয়াদী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, যাতে প্রাণ হারায় ৪ কোটি মানুষ, চিরদিনের জন্য তছনছ হয়ে যায় অগুনতি মানুষের জীবন, আর ২ দশক পরেই ডেকে নিয়ে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
Bellissimo. Ringrazio Daniela che mi ha supportato nella concentrazione, Arianna che ha sempre creduto in me, Cecilia che mi ha concesso il tempo di leggerlo, Andrea che dalla pagina 1 mi dice “io non ce l'avrei mai fatta” e BG che me l'ha consigliato e aspetta speranzoso la mia review.
È obiettivamente uno dei libri meglio scritti che abbia mai letto. Sorprendente per scenografia e sensibilità. Ha un unico problema, che è un po' pesante per i miei standard.
Fun fact: In 1961 this book and LOTR were nomineted for Nobel price, and guess which one won... This one.
Now that I have your attention, I can start mansplaining.
Even though I think LOTR is not that great of a book, the incredibly detailed world that Tolkien made made such an impact on literature and all other media can be hardly be explained by words. This book is also very detailed and narrative but is realistic and brutal as much as LOTR is not, and pretty much forgotten outside countries of former Yugoslavia and literature snobs( I think).
The book takes historical approach of telling the story of the bridge and settlement around it (Višegrad) across several centuries. As bloodsheds, wars, and different authorities take over, and characters change frequently the bridge stands as a striking monument defying the time itself, like a sleeping stone giant.
It is a slow read mind you. Like a grampa telling you story of the old days, but it is interesting and will warm you and tuck you in its pages in that dark and raw way that eastern European books do.
Cheers.