Ratings2
Average rating5
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
সুকুমার রায় বাঙলা ননসেন্স পোয়েমের মায়েস্ত্রো৷ এই বইয়ের সব কবিতাই ননসেন্স পোয়েম না। তবে কবিতাগুলো দুর্দান্ত৷ চমৎকার ছন্দ সহজেই কানকে উদ্দীপ্ত করে। মানুষের সহজাত যে ভালোবাসা ছন্দের প্রতি, তার উপর ভর করে সুকুমারের ছেলেমানুষি আইডিয়াগুলো তৈরি করে সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ননসেন্স রাইম/পোয়েম৷
খেতে ভালোবাসতেন সুকুমার রায়। খেতে যারা ভালোবাসে তারা খাওয়াতেও ভালোবাসে। প্রতি সোমবার সুকুমারের গড়পারের বাড়িতে গুণীজনের সাহিত্য-আড্ডা বসতো। আড্ডার নাম ছিল “Monday Club”, যেহেতু সোমবারের আড্ডা। কিন্তু আড্ডার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার বহর এতোই প্রবল হয়ে ওঠে যে সেই ক্লাবের নাম পাল্টে হয়ে যায় “মন্ডা ক্লাব”। সেই সুকুমার যে একদিন “খাই খাই” লিখবেন তাতে আর আশ্চর্যি কিসের?
যারা সুকুমারকে শুধুই “ননসেন্স” পদ্যের লেখক হিসেবে গণ্য করেন, এই বইটা পড়লে তাদের ভুল ভাঙবে। এই বইয়ের ছড়াগুলোতে ননসেন্স নয়, বরং সেন্সের ছড়াছড়ি রয়েছে (আরে! শিবরামের মতো কথা বলে ফেললাম যে!)। প্রথম যে ছড়াটি, “খাই খাই”, এটি বাংলা ভাষার ব্যবহারযোগ্যতার অনবদ্য পরিচয় দেয়। কিভাবে? শুধুমাত্র “খাওয়া”— এই ক্রিয়াপদটা ব্যবহার করে আটান্ন লাইনের একটা আস্ত ছড়া লিখেছেন সুকুমার। খাওয়া মানে কি শুধুই ভোজন? আরো কত কি যে খায় মানুষ। মহাজন সুদ খায়। দারোগা ঘুষ খায়। পালোয়ান ডিগবাজি খায়। তেলে জলে মিশ খায়। “ভয় খেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা”। কেউ বেত খায়, কেউ গালি খায়। খোকা কাঁদলে মা চুমু খায়। আরো কত কত কত খাওয়ার ফিরিস্তি আছে এই পদ্যে। কিন্তু সুকুমারের ম্যাজিক শুধু ফিরিস্তি দিয়েই থেমে যায়নি। তাঁর অসম্ভব উচ্চমার্গীয় কল্পনাশক্তি এবং ছন্দসৃষ্টির পারদর্শিতা একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। দুনিয়ার সকল মহার্ঘ্য বস্তুর মতো এই ছড়াটার মর্মও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু কখনও অবকাশমতো তলিয়ে ভাবলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কত শক্তিশালী আমাদের এই বাংলাভাষা, কত শক্তিশালী এই ভাষার কারিগররা। কত ভাগ্যবান আমরা।
আরো অনেকগুলো ছড়া আছে এই বইতে। প্রতিটা ছড়াই সরস মাধুর্যে টলমল করছে। আর, ছন্দের সে কি বাহার! জলের মতো সহজ কিন্তু সন্দেশের মতো উপাদেয়। অথচ গভীরতায় অনন্য। অনেকেই বলেন সুকুমার শুধুই ছেলেভোলানো হাসির ছড়া লিখেছেন (সেদিন একজায়গায় দেখলাম অক্ষয় মালবেরির লেখক মণীন্দ্র গুপ্তও এই কথা বলছেন। অন্য কেউ হলে ব্যাটা আহাম্মক বলে গালি দিতাম। শুধু অক্ষয় মালবেরি লিখেছেন বলে গুপ্তমশাইকে ছাড় দিলাম)। যারা এমন কথা বলেন, তারা কি “জীবনের হিসাব” (যেখানে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই এবং নিরক্ষর বৃদ্ধ মাঝির কথোপকথন রয়েছে), কিংবা “নিঃস্বার্থ” (যেখানে মানবচরিত্রের নির্লজ্জ হিপোক্রিসির বিষয়টি হাস্যরসের মোড়কে পরিবেশন করা হয়েছে), কিংবা “হিংসুটিদের গান” (সুকুমারের লেখা শ্রেষ্ঠ ছড়াগুলোর অন্যতম, ছড়ার বিষয়বস্তুটি ছড়ার নামকরণেই প্রকাশিত)— এই ছড়াগুলো কি তারা পড়েন নি?
যাই হোক, অনেক কথাই তো বলে ফেললাম। আবোল তাবোল কিংবা হযবরল-র পাশাপাশি এই বইটা নিয়েও আরো বেশি বেশি আলোচনা হওয়া উচিত। আমার মতো জানলা খুলে বাইরে তাকিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীর সুখশান্তিকে নিছক অগ্রাহ্য করে সন্ধেবেলা গলা ছেড়ে আবৃত্তি করা উচিত :
ভাবলে গাধা—এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেঁষে। এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে চড়ল সে তার হাঁটুর উপর দুই পা তুলে চেপে। সাহেব ডাকেন ‘ত্রাহি ত্রাহি' গাধাও ডাকে ‘ঘ্যাঁকো' (অর্থাৎ কিনা ‘কোলে চড়েছি, এখন আমায় দ্যাখো!')
তারপর? তারপর কী হলো?