Biological and Chemical Warfare in the Ancient World
Ratings1
Average rating5
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
যুদ্ধক্ষেত্রে রাসায়নিক কিংবা জৈব অস্ত্রের ব্যবহার যে রাতারাতি সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে তার বহু নজির ইতিহাসে আমরা দেখেছি। ১ম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত মাস্টার্ড গ্যাস-এর কথা তো আমরা সবাই-ই জানি; রসুন, মুলা, আর সরিষার গন্ধযুক্ত এ গ্যাসটিতে সালফার, ক্লোরিন, ব্রোমিন, নাইট্রোজেন-এর মতো ভয়ানক বিপজ্জনক সব উপাদান রয়েছে। ত্বকের সংস্পর্শে এলে কিছুক্ষণ পরই ভয়ানক জ্বালা ধরায় এ গ্যাস। চামড়া তো পুড়িয়ে দেয় বটেই, সেই সাথে ডিএনএকেও ছিন্নভিন্ন করে দেয় মাস্টার্ড গ্যাস, ফলে পুড়ে যাওয়ার অংশটিতে আর কোষ বিভাজন ঘটতে পারে না, ক্ষতও তাই পুরোপুরি সারে না। ভয়ানক এ গ্যাসটি ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় বহু সৈনিকের চোখ পুড়িয়ে তাদের অন্ধ করে দিয়েছে, নিঃশ্বাসের সাথে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে তাদের শ্বাসনালী। এ গ্যাসের কবলে যারা পড়েছে তাদের বেশীরভাগই প্রাণে হয়তো বেঁচে ফিরেছে, কিন্তু বাকীটা জীবন তাদের পরিণত হয়েছে দুর্বিষহ এক দুঃস্বপ্নে।
শুধুমাত্র মাস্টার্ড গ্যাসেই মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা থেমে থাকেনি নিশ্চয়ই! ১০০ বছরেরও বেশী আগে উদ্ভাবিত এই গ্যাসের পর মানুষ আরো ভয়ানক সব জৈবিক অস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করেছে বিগত দশকগুলোতে। সারিন গ্যাসের কথাও আমরা অনেকেই জানি; ফসফরাসের যৌগ এ গ্যাসটি ভয়াবহতার দিক দিয়ে মাস্টার্ড গ্যাসকে রীতিমতো বালখিল্য বানিয়ে দিয়েছে। কোরান শরীফ হাতে নিয়ে ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড়িয়ে পড়া সাদ্দাম হোসেন আজ লাখো বাঙালি মুসলমানের কাছে আদর্শ বীর মুসলমানের প্রতীক, এবং খলিফা-স্বরূপ। এই সাদ্দাম হোসেনই ১৯৮০ সালের মার্চে তাঁর নিজ দেশের কুর্দিশ মুসলমানদের ওপর সারিন গ্যাস প্রয়োগ করে ভয়ানক এক গণহত্যা চালিয়েছিলেন। সারিন গ্যাস উদ্ভাবিত হয়েছিলো হিটলারের জার্মানীতে, কিন্তু মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে এই অস্ত্রটি ব্যবহার করতে খোদ হিটলারেরও রুচিতে বেধেছিলো! নাজি বাহিনীকে হিটলার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন কিছুতেই যেন সারিন গ্যাস ব্যবহৃত না হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আরো ভয়ানক একটি গ্যাস ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে জনসম্মুখেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন-এর সৎ ভাই কিম জং নামকে হত্যা করা হয়।
এই রাসায়নিক এবং জৈবিক অস্ত্রগুলো সবই তো হাল আমলের। কিন্তু কেউ যদি দাবী করে বসে মানুষ আসলে কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই এমন জৈব রাসায়নিক সব অস্ত্র বানিয়ে আসছে, কেমন হবে? স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এইড্রিয়েন মেয়র সে দাবীটিই করেছেন, এবং নানান প্রমাণ হাজির করে দারুণ আগ্রহোদ্দীপক একটি বই লিখেছেন। দুরন্ত গতির এ বইয়ে মেয়র পাঠককে পরিচিত করিয়েছেন প্রাচীন গ্রীস, রোম, এবং ভারতে প্রচলিত বিভিন্ন রাসায়নিক রণকৌশলের সাথে। মনের ভেতর এখন নিশ্চয়ই কিছু প্রশ্ন আঁকুপাঁকু করছেঃ প্রাচীন সে যুগেও কি তাহলে মানুষ বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করতে জানতো? ভয়ানক কোন জীবাণু ছড়িয়ে শত্রুকে নিকেশ করে দিতো? তিষ্ঠ পাঠক, ক্রমশ প্রকাশ্য!
ইতিহাসের মূল আলোচনায় যাবার আগে মেয়র তাঁর বইয়ের প্রথম অধ্যায়টি ব্যয় করেছেন গ্রীক নানা পৌরাণিক কাহিনী বর্ণনা করে, যে গল্পগুলোতে রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগের কথা এসেছে। গ্রীক ডেমিগড হারকিউলিস যে খুব কঠিন ১২টি কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, এ গল্প আমরা অনেকেই পড়েছি (সুকুমার রায় হারকিউলিসের এই বীরত্বের গল্পগুলো খুব সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে গেছেন বাঙালি শিশু-কিশোরদের জন্য; এ গল্পগুলো কারো জানা না থাকলে এখান থেকে সহজেই পড়ে নিতে পারেন)। হারকিউলিসের দ্বিতীয় যে কীর্তি, সেটি ছিলো সাত মুণ্ডু ওয়ালা ভয়ানক বিষাক্ত সাপ হাইড্রাকে নিকেশ করা। গ্রীক পুরাণমতে হাইড্রার বিষ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত দ্রব্যগুলোর মাঝে অন্যতম। হারকিউলিস হাইড্রাকে মেরে তার বিষে নিজের তীরগুলোর মাথা চুবিয়ে নিয়ে তৈরী করে নেন পৃথিবীর প্রথম জৈবিক অস্ত্র।
সাপের বিষে চুবিয়ে তীরের ফলা বিষাক্ত করবার যে রাস্তা হারকিউলিস পৌরাণিক গল্পে দেখিয়ে গেছেন, বাস্তবে এর প্রয়োগ সত্যিই ঘটেছে বহুবার। খ্রীষ্টপূর্ব ১৩০ সালে এশিয়া মাইনরের ক্লারোস মন্দিরের পুরোহিত নিকাণ্ডার-এর লিখে যাওয়া বিষবিদ্যার একটি বই সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকেরা আবিষ্কার করেছেন, যাতে নিকাণ্ডারের সে সময়টাতে গ্রেকো-রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিষধর ২০ রকম ভাইপার ও কোবরা গোত্রের সাপের বিস্তারিত তালিকা মেলে। কাছাকাছি সময়ের এমন আরো বেশ কিছু প্রাচীন চিকিৎসা-বিদ্যা সংক্রান্ত নথিতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ের প্রকৃতি, বিষক্রিয়ার ধরণ, চিকিৎসা-ইত্যাদির বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের সে সময়টাতেই মানুষ যে যুদ্ধাস্ত্রে সাপের বিষের ব্যবহার নিয়ে বিস্তর মাথা ঘামিয়েছে তার প্রমাণ বারবারই উঠে আসে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নমুনায়। এমন কয়েকটি উদাহরণের দিকেই এবার চোখ ফেরানো যাকঃ
খ্রীষ্টপূর্ব ৫ম শতকে মধ্য এশিয়ায় (মূলত বর্তমান উজবেকিস্তানে) সিথিয়ান (Scythian) নামক একটি যাযাবর বাহিনী'র ভীষণ দাপট ছিলো, যাদের কথা হেরোডটাসও বেশ সমীহের সাথে উল্লেখ করে গেছেন। এই সিথিয়ানরা খ্রীষ্টপূর্ব ৫ম শতকে ১ম দারিয়াসের বিশাল পারসিক বাহিনীকে থামিয়ে দিয়েছিলো; এর শ'খানেক বছর পর খ্রীষ্টপূর্ব ৩৩১ সনে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটকেও তারা হারিয়ে দেয়। সিথিয়ানদের এই দুর্দণ্ড প্রতাপের পেছনে মূল রহস্য তাদের অসাধারণ তীরন্দাজ বাহিনী, এবং তাদের বিষাক্ত তীর। সিথিয়ানদের আগে পরে চৈনিক, গ্রীক, পারসিক, স্লাভ, আফ্রিকান, আরমেনিয়ান-এমন বহু সভ্যতাই বিষাক্ত তীর ব্যবহার করেছে, কিন্তু সিথিয়ানদের মতো অমন ভয়ানক আর কেউ হয়ে উঠতে পারেনি। অ্যারিস্টটল, থিওফ্রাস্টাস এবং অলিয়ান-প্রাচীন এই গ্রীক পণ্ডিত ত্রয়ীর বরাতে সিথিয়ানদের বিষ বানাবার কৌশলটি আজ আমরা জানিঃ প্রথমে তারা ভাইপার প্রজাতির সাপের বিষ সংগ্রহ করে সাপটিকে মেরে মৃতদেহটিকে পঁচাতো। এরপর মানুষের রক্তের প্লাজমাকে আলাদা করে তার সাথে মেশাতো বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মল। মল ও প্লাজমা'র এ মিশ্রনটিকে মাটির নিচে বেশ কিছুদিন পঁচিয়ে এবার তার সাথে সেই বিষ এবং সাপের পঁচা গলা মরদেহটি মিশিয়ে তৈরী করতো ভয়ানক দুর্গন্ধযুক্ত অব্যার্থ মারণবিষ। আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত আমরা সকলেই বুঝতে পারছি সিথিয়ানদের এই বিষ মূলত ক্ষতিকর সব ব্যাক্টেরিয়ার নিদারুণ এক বাম্পার ফলন মাত্র। বিষের দুর্গন্ধটিও শত্রুপক্ষকে মানসিকভাবে কতটা কাবু করে দিতে পারতো তার একটা আন্দাজ বোধহয় করতেই পারছি!
শুধু বিষ উদ্ভাবন করেই সিথিয়ানরা থেমে থাকেনি, ধনুর্বিদ্যাতেও তারা অসামান্য দক্ষতা অর্জন করে। সিথিয়ানদের ধনুকটিকে প্রাচীন সে যুগের সবচেয়ে আধুনিক বলে গণ্য করা হতো; গ্রীক ধনুকের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে তীর ছুঁড়ে দিতে পারতো এই ধনুক। এছাড়াও, সর্বোচ্চ বিষক্রিয়া নিশ্চিত করবার জন্য তারা তাদের তীরের ফলাটির গায়ে কাঁটা বসাতো যাতে শরীরে বিঁধলে তা খুব সহজে বের করে আনা না যায়। কিলবিলে ব্যাক্টেরিয়াময় তীরের আঘাতে বিষক্রিয়া শুরু হতে ঘন্টাখানেকের বেশী লাগতো না; গ্যাংগ্রিন ও টিটেনাসের যুগপৎ আক্রমণে প্রচণ্ড যন্ত্রণাময় এক মৃত্যুই ছিলো একমাত্র পরিণতি। সিথিয়ানদের বিষের সাথে পাল্লা দেবার মতো একটি বিষই প্রাচীন পৃথিবী প্রত্যক্ষ্য করেছে, সেটির উদ্ভাবক ভারতীয়রা। খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৬ সনে আলেকজান্ডার দি গ্রেট যখন ভারত অভিযানে আসেন তখন হার্মাটেলিয়াতে (খুব সম্ভব বর্তমান পাকিস্তানের মানসূরা) এই বিষের ভয়াবহতা তিনি হাতেনাতে টের পান। সে সময়ের ইতিহাসবিদ অলিয়ান এবং কুইন্টাস কার্টিয়াসের বয়ানে এ বিষটির কথা বিশদে জানা যায়ঃ
প্রাচীন ভারতীয়রা তাদের বিষ সংগ্রহ করতো এক বিশেষ প্রজাতির আদিম ভাইপার সাপ থেকে, যার বৈজ্ঞানিক নাম Azemiops feae। প্রথমে তারা একটি ব্রঞ্জের পাত্রের ভেতর সাপের মুখ রেখে জ্যান্ত সাপটিকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখতো দিনের পর দিন। সাপের মুখ থেকে বিষ গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে হলদেটে কমলা রঙের তরল দিয়ে পাত্রটি পূর্ণ হয়ে গেলে সেটি সরিয়ে নতুন একটি পাত্র এনে রাখা হতো আগের জায়গায়। সাপের গলিত পঁচা মৃতদেহটি যে তরলে পরিণত হতো সেটিই এই নতুন পাত্রে সংগ্রহ করা হতো, ৩ দিন পর যা ঘন কৃষ্ণ বর্ণে রূপ নিতো। ভাইপারের পেটের ভেতর মাসের পর মাস ধরে বিপুল পরিমাণ মল জমা থাকে, যা গলিত সাপটির ব্যাক্টেরিয়ার স্বর্গটিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রা দেয়। এই দু'ধরণের বিষের দু'রকম প্রভাব; কালো বর্ণের বিষটি আঘাতের জায়গার মাংস পঁচিয়ে বছরের পর বছর কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যু ডেকে আনতো, অপরদিকে হলদেটে বর্ণের বিশুদ্ধ বিষটি শরীরে প্রচন্ড খিঁচুনি তৈরী করে কয়েক ঘন্টা এক নরক যন্ত্রণায় ভুগিয়ে তবেই ভবলীলা সাঙ্গ করাতো। অলিয়ান লিখে গেছেন এ বিষটির প্রভাবে নাকি আঘাতপ্রাপ্ত'র মগজ গলে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসতো। কিছুটা হয়তো অতিরঞ্জিত, তবে একেবারে উড়িয়ে দেয়াও যাচ্ছে না; ভাইপারের বিষের যে প্রকৃতি (হিমোটক্সিন), তা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয়না, ফলে বিপুল রক্তক্ষরণ হয়, এবং টিস্যু ধ্বংস হয়ে যায়।
হার্মাটেলিয়ায় যে ভারতীয় বিষাক্ত তীরন্দাজদের দেখা পায় গ্রীকরা, তাদের ব্রাহ্মণ বলে চিহ্নিত করেছে তারা। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্রাহ্মণের কী কী কর্তব্য সে ব্যাপারে মনুসংহিতায় অনেক ভালো ভালো কথা এসেছে, বিশেষতঃ ছল-চাতুরী কিংবা বিষ প্রয়োগের ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে। তবে প্রেমে এবং যুদ্ধে সবকিছুই ‘ফেয়ার'। আলেকজাণ্ডার ভারতে আসার কয়েক দশক আগেই রাজা চন্দ্রগুপ্ত'র সামরিক কৌশলবিদ কৌটিল্য যুদ্ধজয়ের এক মহাস্ত্র রচনা করে গেছেন। ‘অর্থশাস্ত্র' নামক এ বইটি ২৩০০ বছর পর আজও দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের পাঠ্য। নিজেকে বাঁচিয়ে চলার জন্য মিথ্যাচার, বেইমানী, বিশ্বাসঘাতকতা, অনৈতিকতা, ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে প্রয়োজন মোতাবেক বাকী সবাইকে গোল্লায় পাঠিয়ে স্বার্থপর পদক্ষেপ নেবার কায়দাটিকে আজ আমরা মাকিয়াভেল্লিয়ান বলে জানি, তবে মাকিয়াভেল্লি'র দেড় হাজার বছর আগেই কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে মাকিয়াভেল্লিয়ান এই রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে রাজামশাই'র মনে যেন নৈতিকতা-অনৈতিকতা'র প্রশ্নটি একেবারেই না আসে, সে ব্যাপারে বিস্তর উপদেশ তো রয়েছেই, সাথে বোনাস হিসেবে আছে বিবিধ প্রজাতির সাপ ও বিচ্ছু'র বিষ এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে ভয়ানক সব রাসায়নিক অস্ত্র তৈরী করবার পুঙ্খানুপুঙ্খ রেসিপি।
কৌটিল্য'র আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০০২ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন সেই সব রেসিপি অনুসরণ করে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরী করতে নামেন। সে সময়ে প্রচলিত কিছু ধারণা যেমন, বুনো শুকরের চোখ এবং জোনাকী পোকার মিশ্রণে তৈরি পোশন খেলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে দেখতে পাওয়া যাবে, কিংবা গর্ভবতী ঊট পুড়িয়ে রোস্ট বানিয়ে তা থেকে প্রাপ্ত স্নেহ দিয়ে এমন জুতো বানানো যাবে যা পায়ে দিলে সৈনিকেরা শত শত মাইল ক্লান্তিহীনভাবে হাঁটতে পারবে (ঊট যদি হাতের কাছে পাওয়া না যায়, তাহলে বিকল্প রেসিপি হিসেবে পাখির বীর্য ও ভস্মীকৃত শিশুর দেহাবশেষ-এর মিশ্রণও ব্যবহার করা যেতে পারে)-ইত্যাদির বাস্তব প্রয়োগে সত্যিই কোন মারণঘাতী রাসায়নিক অস্ত্র প্রস্তুত করা যায় কি না পুনে'র বিজ্ঞানীরা তা পরীক্ষা করে দেখছেন।
রোগ প্রতিরোধে বর্তমান পৃথিবীর আমরা যে কাজটি করি, প্রাচীন সে পৃথিবীর মানুষেরাও ঠিক তাই-ই করতো; অল্প পরিমাণে বিষ, এবং সে বিষটির প্রতিষেধক খাবারের সাথে মিশিয়ে ধীরে ধীরে শরীরে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতো। খাবারের সাথে বিষের প্রতিষেধক মেশাবার এ উপদেশটি মনুসংহিতাতেও আছে। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে আনাতোলিয়া'র (বর্তমান তুরস্ক) শাসক ষষ্ঠ মিথ্রিডেইটিসও এ কাজটি করতেন। মিথ্রিডেইটিসের বাবাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিলো; আজীবন বিষের জুজু তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বলে তিনি তাঁর খাবারের সাথে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে বিষ গ্রহণ করা শুরু করেন। বিষবিদ্যার ওপর তাঁর দারুণ দখলও ছিলো; বিভিন্ন বিষের ওপর বিশদে তিনি লিখে গেছেন, বিষবিদ্যার ওপর তাঁর বইয়ের সংগ্রহও নাকি ছিলো দেখার মতোই। এই মিথ্রিডেইটিসের ৫ম সন্তান যখন তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তাঁকে প্রায় কোণঠাসা করে ফেলে, তিনি তখন বিষপানে আত্নহত্যার পথ বেছে নেন। কিন্তু বহু বছর ধরে একটু একটু করে বিষ গ্রহণ করে করে তদ্দিনে তাঁর শরীরে দারুণ প্রতিরোধ তৈরি হয়ে গেছে, বিষ তাঁর কাঙ্খিত সে মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসতে পারছিলো না! মরিয়া মিথ্রিডেইটিস তখন তাঁর এক সৈনিককে তলোয়ার চালিয়ে তাঁর জাগতিক সব কষ্ট চিরতরে লাঘব করে দেবার জন্য অনুরোধ করেন।
শুধু যুদ্ধ করবার হাতিয়ারেই নয়, খাওয়ার পানিতে বিষ মিশিয়ে আস্ত একটি জনগোষ্ঠীকেই নিকেশ করে দেয়ার নজিরও আছে প্রাচীন পৃথিবীতে। বিষাক্ত পানি দিয়ে গণহত্যা ঘটাবার প্রথম ঘটনাটি খুব সম্ভবত ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব ৫৯০ সালে, ধর্মরক্ষার যুদ্ধ First Sacred War-এ। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের ডেলফিতে অ্যাপোলো'র যে মন্দির রয়েছে যেখানে কী না দেবতা মশাই আকাশ থেকে নেমে এসে তাঁর দৈববাণী শোনাতেন, সে মন্দির দর্শনে এবং হত্যে দিতে প্রাচীন গ্রীকরা তীর্থযাত্রায় বেরোতো। করিন্থিয়ান সাগর থেকে ডেলফি'র মন্দির অব্দি যে রাস্তা, সেটি'র নিয়ন্ত্রণ ছিলো তখন কিরা (Kirrha)-নগরের অধিবাসীদের হাতে। এই কিরাবাসীরা তীর্থযাত্রীদের নানানরকম হয়রানিতে ফেলে তাদের কাছ থেকে উচ্চহারে ট্যাকশো আদায় করে নিতো।
তীর্থযাত্রীদের হয়রানির গল্প শুনে শুনে বিরক্ত হয়ে এথেন্স ও সিসিওন (Sicyon)-এ দু'টি নগর একসাথে হয়ে অ্যাম্ফিক্টিওনিক লীগ নামে একটি দল গঠন করে; কিরাবাসীদের একচেটিয়া ধর্মব্যবসা থামাবার জন্য তারা বদ্ধপরিকর। সময় এবং সুযোগ-উভয়ই অনুকূলে দেখে অ্যাপোলো দেব তাঁর মন্দিরে নেমে এসে অ্যাম্ফিক্টিওনিক লীগের হর্তাকর্তাদের কানে দৈববাণী শোনানঃ কিরাবাসীদের সমূলে উৎপাটন করতে হবে, একজনও যেন বেঁচে না ফিরে। হেলেবোর (Hellebore) নামক বিষাক্ত একটি গাছের নির্যাস সরবরাহের পানিতে মিশিয়ে দেবতার ইচ্ছে পূর্ণ করে অ্যাম্ফিক্টিওনিক লীগ। ধর্মের পতাকা সুউচ্চে ওড়ে, আরো একবার। আগ্রোদ্দীপক ব্যাপার হলো, যে মনুসংহিতায় যুদ্ধে বিষের ব্যবহার নিয়ে অত নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেখানেই আবার ধর্মবিরোধী শত্রুপক্ষে'র পানিতে বিষ মিশিয়ে দেবার উপদেশ রয়েছে। ধর্মরক্ষার ব্যাপারটাই বোধহয় অমন...
কৌটিল্য'র অর্থশাস্ত্রের ১৪ নাম্বার খণ্ডের ১ম অধ্যায়ে বিভিন্ন বিষের প্রস্তুতপ্রণালী'র পাশাপাশি বিষাক্ত গ্যাসের ব্যবহারের কথাও এসেছে, এসেছে নদীর পানিতে বিষ ঢেলে জলজ সকল প্রাণী'র প্রাণহরণের কায়দাও। ভুলক্রমে যদি কেউ নিজ দলের লোকেদেরই আক্রান্ত করে বসে তার জন্য নিদানও দিয়ে গেছেন। কাছাকাছি সময়ের আরেক ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রীয় পণ্ডিত সুশ্রুত তাঁর বই সুশ্রুত সংহিতায় কয়লা, খনিজ পাথর, অ্যালকোহল ইত্যাদি ব্যবহার করে বিষাক্ত পানি পরিশোধনের উপায় বাতলে দিয়ে গেছেন, সাথে অবশ্য যথোপযুক্ত মন্ত্রোচ্চারণ চাই, তা না হলে এর সবই বৃথা।
গত কয়েক হাজার বছর ধরেই যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যবহৃত প্রানীটি নিঃসন্দেহে ঘোড়া। দেশ-কাল-জাত ভেদে ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সামনে পদাতিক বাহিনী বারবারই অসহায় আত্নসমর্পণ করেছে। প্রতিপক্ষ দলের ক্যাভালরি বাহিনী যদি ভীষণ শক্তিশালী হয়, আর আপনার হাতে যদি কোন্ ঘোড়াই না থাকে, তাহলে সে যুদ্ধে আপনার জেতার কোন সুযোগ আছে কি? এর উত্তরঃ “আছে”! ঘোড়া ঊটের গন্ধ সইতে পারে না, এবং কার্যত প্রাণীটিকে এড়িয়ে চলতে ভালোবাসে। খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৬ সালে পারস্যের রাজা সাইরাস লিডিয়ার রাজা ক্রোসাস-এর বিখ্যাত ঘোড়সওয়ার বাহিনীকে সম্পূর্ণই অচল বানিয়ে দেন তাঁর পোষা ঊটদের যুদ্ধক্ষেত্রে ছেড়ে দিয়ে। গন্ধ থেকে বাঁচতে এলোমেলো ছুটতে থাকা ঘোড়ারা নিজেদের সওয়ারদেরই পিষ্ট করে মারে। এরপর থেকে প্রাচীন বহু যুদ্ধেই ঘোড়সওয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঊটের ব্যবহার বেড়ে যায়।
ঘোড়ার পর যুদ্ধক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় প্রাণীটি খুব সম্ভবত হাতি। গ্রীকরা ভারত অভিযানে এসে প্রথমবার হাতির দেখা পায়, এবং এর দানবিক ক্ষমতায় প্রাথমিকভাবে হতচকিত হয়ে পড়ে। পাঞ্জাবের রাজা পুরুকে হারিয়ে আলেকজাণ্ডার ভারতে তাঁর ঘাঁটি শক্তিশালী করেন। পুরু তাঁর দলে যোগ দিয়ে অন্য ভারতীয় রাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করা শুরু করেন। ভারতের রাজাদের অন্যতম বড় ভরসা ছিলো তাদের বিশাল হস্তিবাহিনী। পুরু'র উপদেশে আলেকজাণ্ডার এই হস্তিবাহিনীর মুখোমুখি হন পালে পালে শুকর সাথে নিয়ে। অত্যন্ত সূক্ষ্ম রুচির ভীষণ বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে হাতি'র সুখ্যাতি রয়েছে; হাতি সুরেলা গান পছন্দ করে, রং নিয়ে খেলতে ভালোবাসে, সুন্দরী নারীদের প্রতিও আকর্ষণ তার কম নয়। অত সূক্ষ্ম রুচির প্রাণীটি'র নোংরা জিনিসে রাজ্যের আপত্তি। শুকরের গন্ধ, এবং আওয়াজ হাতির মোটেই পছন্দ নয়। হাতিকে এভাবে শুকর দিয়ে বিরক্ত করে মেরে বহু যুদ্ধ জয় করা সম্ভব হয়েছে।
ব্যাক্টেরিয়া, সাপ, বিচ্ছু, হাতি, ঘোড়া, শুকর, ঊট...যুদ্ধে আর কী কী প্রাণী'র ব্যবহার দেখেছে পৃথিবী? কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে শকুন, কাক, কবুতর, বেড়াল, বেজি, এবং বাঁদরের মাধ্যমে শত্রুশিবিরে আগ্নেয় পদার্থ ফেলে আসার উপদেশ দিয়েছেন। এই প্রাণীগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব, তাই তাদের এমন বোমারু ভূমিকায় নামানোটা মোটেই অসম্ভব কিছু নয়। ১৬১০ সালেই চৈনিক জেনারেল তেশ-কি-কোয়াং নাকি কয়েকশ বাঁদরকে দিয়ে বন্দুক চালানো শিখিয়ে সি-চু পাহাড়ের ওপর থেকে জাপানী আক্রমণকারী বাহিনীর ওপর গুলি চালিয়েছিলেন! ২০০৩ সালে যখন আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে তখন মরোক্কো আমেরিকান বাহিনীকে দু'হাজার প্রশিক্ষিত বাঁদরের একটি বাহিনী দিয়ে সাহায্য করবার প্রস্তাব দিয়েছিলো যারা কী না ল্যান্ড মাইন অকেজো করতে কিংবা বিস্ফোরণ ঘটাতে জানে!
আগুনের ব্যবহার ছাড়া কোন যুদ্ধের কথা আজ আমরা ভাবতে পারি না। বোমা-বারুদ, কামান, গোলা-ইত্যাদির সবই আসলে আগুনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ব্যবহার। আগুন ব্যবহার করে দুর্গের পাথরের দেয়াল পুড়িয়ে ফেলার অদ্ভুত নজিরও আছে প্রাচীনকালের যুদ্ধে। পাইন গাছের নির্যাস থেকে পিচ নামের একধরণের দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুত করা হতো যা তীরের ফলায় মেখে তাতে আগুন জ্বালিয়ে ছুঁড়ে মারলে ভয়ানক এক বিস্ফোরণ ঘটাতো। এই পিচ এবং সালফার একসাথে মিশিয়ে আদিম বোমা'র ব্যবহার করেছে গ্রীকরা পেলোপনেজিয়ান যুদ্ধের সময়। সালফার পোড়ালে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা কয়েক মিনিটের ভেতর খুব কষ্টদায়ক মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
রোমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু হ্যানিবাল ভিনেগার ব্যবহার করে পাথরের দেয়াল ধসিয়ে দিতে পারতেন। পাথরকে খুব উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করে তাতে বিশুদ্ধ ভিনেগার (মূলত রেড ওয়াইন; সে যুগে ভিনেগারের সবচেয়ে বড় উৎস) ঢাললেই ভীষণ বিক্রিয়া করে পাথর ফেটে চৌচির হয়ে যায়। লাইমস্টোন এবং মার্বেল-এ দু'ধরণের পাথরের জন্য এটি বেশী কার্যকর ছিলো, আর হ্যানিবালের সময় বেশীরভাগ দূর্গ বানানোও হতো এই দু'টি পাথর দিয়েই। যে ভিনেগার দিয়ে পাথর ভেঙে ফেলা যায়, সেই ভিনেগারই দুর্দান্ত অগ্নিনির্বাপক হিসেবে কাজ করে। গ্রীক এবং রোমান ইতিহাসবিদেরা বারবার ভিনেগারের আগুন নেভাবার ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। আগুন সংক্রান্ত ব্যবহার ছাড়াও ভিনেগারের স্বাস্থ্যগত প্রয়োগও রয়েছে; প্লিনি উল্লেখ করেছেন হাঁচি কাশি কিংবা শ্বাসকষ্টের সময় ভিনেগার বেশ উপকার দেয়। মজার ব্যাপার হলো, বর্তমানের এই দিনে বিভিন্ন মিছিল বা আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেবার জন্য পুলিশ যখন কাঁদানে গ্যাস কী মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়, আন্দোলনকারীরারা প্রতিরক্ষায় নাক মুখ ঢাকে ভিনেগারে ভেজানো রুমাল দিয়ে!
পৃথিবী'র মরু অঞ্চলগুলোতে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের ইরান ও ইরাকে সেই আড়াই হাজার বছর আগেই মানুষ ন্যাফথা'র সন্ধান পায়; মরুভূমি'র বালুর নিচে প্রচণ্ড তাপে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল জমে জমে ন্যাফথা নামক ভীষণ দাহ্য একটি পদার্থে পরিণত হয়। অগ্নি সংযোগ করাবার ক্ষমতার দিক দিকে ন্যাফথা হাল আমলের উদ্ভাবন নেইপাম-এর কাছাকাছিই প্রায়। ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বাবা গুরগুর নামক স্থানে ন্যাফথা'র একটি ঝর্ণা আছে যেটি খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ সাল থেকে জ্বলে আসছিলো। ১৯২৭ সালে এসে এটিকে নেভানো হয়। এ ধরণের আরো অনেক ঝর্ণাই রয়েছে, যেগুলোকে দৈবিক নিদর্শন হিসেবে দেখিয়ে ইলাইজাহ এবং নেহেমিয়াহ ইত্যাদি চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাইবেলে কিছু গল্প ফাঁদা হয়েছে।
ন্যাফথা'র সাথে কয়লা, পাইন গাছ থেকে প্রাপ্ত পিচ, দস্তা, রিয়ালগার নামক খনিজ থেকে প্রাপ্ত আর্সেনিক-ইত্যাদি মিশিয়ে ভারতীয় এবং আরবরা ভয়ানক সব বোমা বানিয়েছে। ইসলামের নবী মুহম্মদ ৬৩০ সালে তায়েফে তাঁর শেষ যুদ্ধে ন্যাফথা ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। মুহম্মদের মৃত্যু'র পর ইসলামের মসনদ নিয়ে পরবর্তী খলিফারা যে গৃহযুদ্ধ চালিয়েছেন তাতেও এই ন্যাফথা-বোমার বিস্তর ব্যবহার হয়েছে। আগুন দিয়ে মানুষ মারবার শিল্পটিকে মুসলমানরা যেমন উন্নত করেছে, তেমনি অগ্নি নিরোধক অ্যাসবেস্টস-এর আবিষ্কারও তাদের হাতেই। ৮০০ শতকের দিকে তাজিকিস্তানের মুসলমানেরা এই রহস্যময় পদার্থটি'র সন্ধান পায় যাতে আগুন ধরে না। তারা এর নাম দেয় “হাজার আল-ফাতিলা”।
মেয়র তাঁর এ বইতে একটি ব্যাপার বারবার দেখিয়েছেন, সেটি হলো poisoner is poisoned-বিষ যে তৈয়ার করে, নিয়তির পরিহাসে তার নিজেকেই সে বিষে নীল হতে হয়। প্রাচীন গ্রীস, রোম, ভারত, ও আফ্রিকা থেকে শুরু করে হালের আমেরিকার উদাহরণ টেনে এ সতর্কতাবাণীটি তিনি ঘুরেফিরেই শুনিয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর ব্যাপী জৈব-রাসায়নিক অস্ত্রের ইতিহাস দেখালেও মেয়র একাধিকবার উল্লেখ করেছেন এ ধরণের বিষাক্ত অস্ত্রের ব্যবহারের প্রতি মানুষের একধরণের অরূচি'র কথা; সচরাচর নাকি মানুষ এতটা ক্ষতিকর অস্ত্র ব্যবহার করতে চায় না! প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা আমাদের আধুনিক এই জীবনে মেয়রের এই দাবীটি কতদিন সত্যি থাকে তাই-ই এখন দেখবার বিষয়...