This book introduced Gaia, which I thought as the third foundation and was wrong. Gaia predates the Seldon's plan, And it is good to see that robots are back into business. :D
This book is a little less interesting than other foundation books, but good enough for not to be bored.
“কেবলি জাহাজ এসে আমাদের বন্দরের রোদে
দেখেছি ফসল নিয়ে উপনীত হয়;
সেই শস্য অগণন মানুষের শব;
শব থেকে উৎসারিত স্বর্ণের বিস্ময়
আমাদের পিতা বুদ্ধ কনফুশিয়াসের মতো আমাদেরও প্রাণ
মূক করে রাখে; তবু চারিদকে রক্তক্লান্ত কাজের আহ্বান।”
পুরো বইটা একরকমের ছোট গল্প। অতৃপ্তি রেখে গেলো। উপভোগ্য অতৃপ্তি। একধরনের ঘোর তৈরী করে বইটা। একধরনের ভালোবাসা, যা আমি এবং পামুক দুজনেই শেয়ার করি নিজের নিজের শহরের তার স্বাদ পেলাম। বস্তুতঃ কাব্যের কাজই হলো নিজের কথা সার্বজনীন করে দেওয়া। পামুক সেই কাজটা চমৎকারভাবে করেন।
থিসিস পেপার বা তথ্যমূলক বই ল��খা রবীন্দ্রনাথের ধাতে সয়নি কখনো। তথ্যের সৌন্দর্যের রেখাচিত্র আঁকা, তার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়া তোলা তার বৈশিষ্ট্য। এই বইয়ে তাই ছন্দের আদ্যপান্তের অনুপুঙ্খ বর্ণনা দেখিনা। বরং দেখি মূল ধারণাটির সাবলীল প্রকাশ।
তখনকার সময়ের প্রচলিত বুদ্ধিজিবীদের সাথে তার দ্বিমত ছিল অসংখ্য। ছান্দসিকরা মূলত পাখিপড়া পড়ে পণ্ডিত, সংস্কৃতের ছাঁদে বাঙলা কবিতা শুনে ও ব্যবচ্ছেদে অভ্যস্ত। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ প্রাকিত বাঙলায় শহুরে কবিতার পুরোহিত। তার হাতেই বাঙলার আধুনিক কবিতার সূচনা, গদ্য কবিতার প্রথম অনুমোদকও তিনি। যদিও অনেকেই বলে থাকেন, মূলত পঞ্চপাণ্ডবের যুগে আধুনিক কবিতা এসেছে, আমি মনে করি, আধুনিক গদ্যকবিতার ছন্দ ও সাবলীলতা, বিষয়বস্তুর সাধারণত্ব সবই উপস্থিত ছিল ‘পুনশ্চ' কাব্যগ্রন্থে। রবীন্দ্রনাথ এই বইতে পদ্যছন্দের ব্যবচ্ছেদের সাথে দিলেন গদ্যছন্দের প্রথম পরিচয়।
“তুঁহু নহি বিসরবি, তুঁহু নহি ছোড়বি,
রাধাহৃদয় তু কবহুঁ ন তোড়বি,
হিয় হিয় রাখবি অনুদিন অনুখন,
অতুলন তোঁহার লেহ।”
বইটি ছোট, অল্পকিছু কবিতা আছে। বেঙ্গলের ই-বইতে পেলাম।
আমি ঢাকার ইনটেলেকচুয়াল সমাজের প্রতি খুব একটা উচ্চ ধারণা পোষণ করিনা। এখানে ইনডিভিজুয়ালি ভালো কিছু মানুষ আছেন, সংখ্যায় তারা নগণ্য। অধিকাংশই ফ্রড। আর কবি নামক ফ্রড সবচেয়ে বেশি। বোধহয় সহজ বলে। হয়ত মূর্খ এবং ভালো কবি এমন কম্বিনেশন বিরল নয় বলেই মূর্খরাও চেষ্টা করে।
আমি অন্ততঃ এটা বলতে পারি, আহমেদ মুনির ফ্রড না। সে প্রফেশনালি কবি। প্রফেশনালি মানে আর্থিকভাবে না, কবি হওয়ার স্কিল এর প্রতি তার সম্মান আছে। যে কারনে কবিতাগুলো পড়তে গেলে হোঁচট খেতে হয় না। ছন্দের বাঁধুনি চমৎকার, ভাষা সাবলীল, বিষয়বস্তুতে গাঁজার ঘ্রাণ নেই।
সবগুলোই একইরকম অনন্য না, গড়ে বেশ ভালো কবিতাগুলো। কোথাও কোথাও হয়ত মার্জনীয় পর্যায়ে জীবনানন্দের ঘ্রাণ পেতে পারেন।
হয়ত পাঁচটি নক্ষত্রের মত হয়নি, আমার পার্শিয়ালিটির কারন হচ্ছে সমকালীন কাউকে ভালো লিখতে দেখছি।
তুমি যদি রহিতে দাঁড়ায়ে!
নক্ষত্র সরিয়া যায়, তবু যদি তোমার দু — পায়ে
হারায়ে ফেলিতে পথ — চলার পিপাসা! —
একবারে ভালোবেসে — যদি ভালোবাসিতে চাহিতে তুমি সেই ভালোবাসা।
যদি উইকিপিডিয়ায় বাঙলা সাহিত্যের টাইমলাইন দেখেন, দেখতে পাবেন রবীন্দ্রসাহিত্যের পরেই আধুনিক বাঙলা কবিতা। আমাদের বিশেষজ্ঞদেরও তাই মত। কিন্তু আমার মনে হয়, পুনশ্চতে বীজ বোনা হলো আধুনিক বাঙলা কবিতার। সবগুলিই একইরকম আধুনিক না। তবে সাধু বাঙলা প্রভাবিত সাহিত্যের যুগ থেকে রবীন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে বাঙলা সাহিত্যকে টেনে এনেছেন প্রাকৃত বাঙলায়। যেখানে আমাদের কথা আমরা আমাদের ভাষায় বলার সুযোগ পেলাম। আপনারা রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ' প্রবন্ধগুচ্ছ পড়ে থাকলে ইতমধ্যে জানেন যে তাঁর পারিপার্শ্বিক ছান্দসিকদের সাথে তার দ্বন্দ্বের কথা। যেখানে শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছেন তার প্রমাণ মেলে তার উত্তরসূরী কবিদের সাবলীলতায়। সেই সাবলীলতার শুরু বোধকরি পুনশ্চতে। মোটামুটি এই কাব্যগ্রন্থের অর্ধেক কবিতাকেই নির্দ্বিধায় আধুনিক কবিতা বলা চলে। তার বিষয়বস্তুর আটপৌরে ভাব, বলার ভঙ্গির সাবলীলতা তাই নির্দেশ করে।
প্রিয় কবিতা: কোমল গান্ধার, শেষ চিঠি, ক্যামেলিয়া, সাধারণ মেয়ে, বাঁশি, রঙরেজিনী।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় প্রশান্তি আনে। শুধু প্রশান্তিই কী আনে? এই বইটা পড়লে বোঝা যায় উদ্ভট সব মজার আইডিয়া কেমন তার মাথাতেও ঘুরপাক খেত। খানিকটা ননসেন্স রাইমগোছের ছড়া আছে কয়েকটা। কয়েকটা যাপিতজীবনের কৌতুকাশ্রয়ী। ওভারঅল চমৎকার একটা বই।
সুকুমার রায় বাঙলা ননসেন্স পোয়েমের মায়েস্ত্রো৷ এই বইয়ের সব কবিতাই ননসেন্স পোয়েম না। তবে কবিতাগুলো দুর্দান্ত৷ চমৎকার ছন্দ সহজেই কানকে উদ্দীপ্ত করে। মানুষের সহজাত যে ভালোবাসা ছন্দের প্রতি, তার উপর ভর করে সুকুমারের ছেলেমানুষি আইডিয়াগুলো তৈরি করে সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ননসেন্স রাইম/পোয়েম৷
প্রথমত বলে রাখি, বইটা একদম ছোট। মাত্র তিনটি প্রবন্ধ, প্রথমটি বড়, বাকিদুটো ছোট ছোট।
রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম, মোটামুটি একটা বিতর্কের ব্যাপার। তিনি দেশপ্রেমিক ছিলেন সে বিষয়ে তার নিন্দুকরাও নিঃসন্দেহ কিন্তু তিনি ইংরেজপ্রেমী ছিলেন কিনা তা নিয়ে ভক্তসমাজেও একটু দ্বিধা আছে।
গোড়ার কথাটা হলো, রবীন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিক। যদি তখন দূরগ্রহবাসী জীবের ধারণা তাঁর পর্যন্ত পৌঁছত বোধকরি তিনি মহাজাগতিকও হতেন। ন্যায়-অন্যায়, আদর্শ এসব বিচারে তিনি ইংরেজ-দেশীয় বিচার করতে পারতেন না। তা করা একপেশে এবং অন্যায়। যে দোষে তিনি ইউরোপীয়দের দোষী সাব্যস্ত করেছেন বহুবার। তাঁর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দূরদর্শিতা। একটি জীর্ণ, ক্লিষ্ট দুর্ভাগা জাতির সত্যিকারের মুক্তি যে শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞান ছাড়া অসম্ভব, পুরাতন যুগের আচারে আবদ্ধ সমূহ বিপদ তা তিনি বুঝতেন। তাই যেনতেনভাবে স্বরাজের চেয়ে তিনি শিক্ষাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন সবসময়। আমরা দূর্বল, এরজন্য কারো অধিকার নেই আমাদের পরাধীন করে রাখার, কিন্তু আমাদের দূর্বলতাই যে তাদের সুযোগ তৈরী করে দিলো তা অনস্বীকার্য।
অন্যদিকে ইউরোপীয় আদর্শিক দ্বিচারিতা, যেখানে একজন ভারতীয় বা নিগ্রোর সাথে একজনের ইংরেজের বিশাল বিভেদ, যেখানে তারাই আবার নিজেদের সভ্য বলে দাবী করে, তার প্রতি আছে তীব্র শ্লেষ।
‘শেষ লেখা' রবীন্দ্রনাথের শেষবয়সের লেখা। মূলত, মৃত্যু ও জীবনই এই কবিতাগুলোর উপজীব্য ব্যাপার।
মৃত্যু যত ঘনিয়ে আসে, মানুষের মৃত্যুচিন্তা তো বাড়ে। এরসাথে যোগ হয় স্মৃতিকাতরতা। মৃত্যুর অজ্ঞেয়তা মৃত্যুকে করে ভীতিময়। এজন্য অধিকাংশ লেখকরাই মৃত্যুর ব্যাপারে লিখতে বসলে, জীবনের হিসাব কষতে বসলে শোকে আপ্লুত হন। একটা প্রবণতা থাকে ইহজীবনকে সামান্য/ক্ষণস্থায়ী/মায়া বলে পরজীবনকে ধ্রুব বলে স্বীকৃতি দেওয়ার।
Except রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনব্যাপী অসংখ্য শোক পেয়েছেন। লিখেছেন সেগুলো নিয়ে। কিন্তু তাঁর কাছে পরকাল ধ্রুব নয়, ইহকাল মায়া নয়। এই জীবন, এই অস্তিত্ব সবই তাঁর কাছে সত্য। অজ্ঞেয়তার ভয়ে নিজেকে স্বান্তনা দিতে গিয়ে ফাঁপা বুলিতে প্রবঞ্চনা তিনি করেননি। কবিতাগুলোতে এই বিষয়টা ভালোভাবেই চোখে পড়েছে।
কবিতাগুলো আকারে নাতিদীর্ঘ, সুসংহত পদবিন্যাসে তাঁর জীবনব্যাপী চর্চার ছাপ রয়েছে। সহজ কথাটি সহজে বলা রবীন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য, তার সাথে যুক্ত হয়েছে দুর্দান্ত পরিমিতি।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে ১১নং কবিতাটি। আর সবচেয়ে পছন্দের লাইনগুলো:
“সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।”
রবীন্দ্রনাথের জাপানপ্রীতির কথা সুবিদিত৷ শুনেছিতার সংগ্রহে একটি সামুরাই কাটানা'ও ছিল৷ বইটা বাঙলা ১৩২৩ সালের শুরুর দিকের। অর্থাৎ তাঁর শেষবয়স বলা যায় না৷ তখনও তিনি সংশয়বাদী হয়ে পারেননি৷ সুপাঠ্য হলেও ধর্মচিন্তাগুলো ভালোলাগেনি৷
রবীন্দ্রনাথের অন্তর্দৃষ্টি প্রখর। একটি জাতির সামগ্রিক দর্শন তিনি সহজে বুঝতে পারতেন। তাই বইটিতে চীনের পরাশক্তি হওয়া ও জাপানের আগ্রাসী মনোভাব দুটোর ব্যাপারেরই ভবিষ্যৎবাণী পাওয়া যায়।
ব্যঙ্গকৌতুক রবীন্দ্রনাথের কিছু স্যাটায়ারধর্মী লেখার ছোট্ট একটি সংকলন৷ বিষয়বস্তু বহুমাত্রিক। দেশহিতকল্পে বাঙালির করা বিভিন্ন উদ্ভট কাজের প্রতি ঠাট্টা যেমন আছে, তেমনি ‘ডেঞে পিঁপড়ের মন্তব্য'-এ পাওয়া যায় ‘White men's burden' নিয়ে তীব্র পরিহাস৷
লোকটা ম্যাচিউরিটি পাওয়ার আগেই মরে গেলেন। তারপরও, যথেষ্ট ভালো। সবচেয়ে ভালোলেগেছে ‘ঐতিহাসিক' কবিতাটি।
বানোয়াট গল্প আনোয়ার সাদাত শিমুলের ৮টি অণুগল্পের সংকলন। গল্পগুলির বিষয়বস্তু সাধারণ জীবন, সাধারণ মানুষের সাধারণ দুঃখকষ্ট এবং আনন্দ। গল্পগুলি আণবিক এবং কয়েক নিঃশ্বাসে বইটি শেষ হয়ে যাবে। তাই গল্পগুলোর বিষয়বস্তু বলার প্রয়োজন নেই, তাতে গল্প পুনঃকথনই হবে হয়ত। :D
পড়ার সময় ভালো লাগলো। বুদ্ধির ঝলকে তাজ্জব বনে যাইনি, কোনো সাররিয়াল জগতে মাথা কুটতে হয়নি। পড়লাম, বোধগম্য হলো, হৃদয়ঙ্গম হলো এবং ভালো লাগলো। সহজ কথাটা সহজে বলা সবচেয়ে কঠিন। এই কঠিন কাজটা করেছেন লেখক এবং বুঝতেও দেননি এটা করে ফেলেছেন। গল্পের আড়ালে বুদ্ধির ধারালো কোণাগুলো যত্ন করে ঢাকা আছে।
সবাই জানেন যে চর্যাপদ বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। তবে, এই বাঙলা আমাদের প্রচলিত বাঙলার এত পুরাতন আত্মীয় যে বিশেষজ্ঞ না হলে পড়া কঠিন। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের চমৎকার অনুবাদে তাই চর্যাপদ হয়েছে সুখপাঠ্য এবং তার ব্যক্তিগত কবিত্বগুণে প্রাণবন্ত।
বইয়ে সবগুলোই কবিতা (এ আর নতুন কী! গদ্যসাহিত্যে বাঙলার কেবল বয়ঃসন্ধির কাল বোধকরি। খুব বেশি হলে যৌবনের প্রারম্ভ।)। কবিতাগুলো মোটেও এলেবেলে না। কয়েকটা দুর্দান্ত প্রেমের কবিতা, কয়েকটি সহজিয়া জীবনের বয়ান আর কতগুলো শ্লেষোক্তি। কবিগণ বড় মানুষ, বড় লোক না। তাই উঠে এসেছে বাঙলার আপামর মানুষের দুঃখ-কষ্টের কাব্য।
এই কাব্যগ্রন্থে আছে ১৫টি কবিতা। বিষয়বস্তু মানুষ, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মানুষের ব্যথা এবং প্রধানত নারী। নারীচরিত্রগুলো মূখ্য অধিকাংশ কবিতায়, তাদের ব্যথাই উপজীব্য।
কবিতাগুলো অধিকাংশ একইভাবে লেখা। অসমপার্বিক, অনুপ্রাসনির্ভর। একটু দুর্বল কোনো কোনো জায়গায়। তবুও মানোত্তীর্ণ রবীন্দ্রনাথ বলেই হয়ত। মানুষের শুদ্ধতম আবেগ না ছবিতে না কবিতায় বা আর কোনো শিল্পমাধ্যম কোনোকিছুতেই শতভাগ প্রকাশ করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ যা পারতেন তা হলো অন্য সবারচেয়ে সহজ করে সুক্ষ্ম আবেগগুলো প্রকাশ করতে।
প্রিয় কবিতা: আট বছর আগের একদিন।
ধুর মিয়া, জীবনানন্দের বইয়ের আবার রিভিউ লাগে? সে রিভিউয়ের উর্ধ্বে।
বইটা বেশ। প্রথমত সাইজে ছোট, লেখকের গড়ে তো রিয়ালিটিতে একজন ব্যর্থ বিপ্লবী কাহিনীর নায়ক। রিয়ালিটিটা ইন্টারেস্টিং, হীরক রাজার শাসনপদ্ধতির সাথে বেশ মিল আছে। বইয়ের মেসেজটা ততোধিক ইন্টারেস্টিং, রুম ১০১ মেরে ফেলে না, ভালোবাসা ভুলিয়ে দেয়।
বইয়ের ডিটেইলসে যাওয়া ঠিক হবে না। ছোট বই, পড়ে ফেলা ভালো।
সবচেয়ে ভালো বইগুলো পড়া শেষ করেই বোধহয় কিছু বলা কঠিন। এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে যে নিজেকে আলাদা করে দাঁড় করিয়ে তার ভালোমন্দ বিচার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বইটায় আমার খারাপ লাগেনি কিছুই। কষ্ট লেগেছে, মানুষের নীচতায়, হীনতায়। গোর্কির লেখা বরাবরই মেদবর্জিত। নিপাট সত্যভাষণ গোছের। রিয়ালিস্ট লেখার মহাযজ্ঞের প্রথমদিককার সাগ্নিক তিনি। রিয়ালিস্ট মানেই কিন্তু নীরস না। কোনোকিছুই কি আসলে আনরিয়েল? প্রবল পরাবাস্তব লেখাও লেখকের নিজের রঙে রাঙানো বাস্তবতার আখ্যান।
গোর্কির আত্মজৈবনিক লেখা এটি। তার বাবার মৃত্যু থেকে মায়ের মৃত্যুর সময়কাল পর্যন্ত এই বইয়ের পরিধি। রুশ গণমানুষের জীবনযাপন উপজীব্য। গণমানুষ সবসময়ই দরিদ্র ও শ্রীহীন। এখানকার অধিকাংশ চরিত্রও তাই। এরমধ্যেও সৌন্দর্য থাকে। গোর্কির চোখ ছিল সেই সৌন্দর্য দেখার। চমৎকার মাতামহী আর তার অজস্র গল্প, বাবা-মায়ের প্রেম ও সংসার, দারিদ্র, শিক্ষা, অপমান এমনকি রাস্তার টোকাইদের জীবনযাপন, এই সবকিছুর যে কোণাওয়ালা, ধারালো সৌন্দর্য, ভয়াবহ ক্ষুধার বিভীষিকাময় সৌন্দর্য, সেই সৌন্দর্যে উপাখ্যান ‘My Childhood'।
গল্পগুলো চমৎকার। একটু কবিতার ঢঙ আছে কোথাও কোথাও। বলার ভঙ্গী সাবলীল। সবগুলো গল্পই একরকম না। বিষয়বস্তু হিসেবে মূলত থাকে পরিবার, বলার ঢঙে মধ্যবিত্ত চরিত্রই মনে হয়েছে তাদের। তাদের জীবনযাত্রা, স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতাগুলো নিয়েই গল্পগুলো আবর্তিত হয়েছে। একটা বলা চলে ভূতের গল্পও আছে, তাতেও এর ছাপ বিদ্যমান।
গল্পগুলো আমার ভালো লেগেছে। চুলচেরা বিশ্লেষণের বিদ্যা আমার নেই। কখনো কখনো কোনো কোনো বাক্য দীর্ঘ মনে হয়েছে। দীর্ঘবাক্য সহজেই আবেদন হারায়, গতিরোধ করে। অপরিপক্ক হাতে এমন দেখা যায় তবে লেখক সেটা পাশ কাটিয়েছেন। নিজের পরিপক্কতার পরিচয় রেখেছেন। দীর্ঘবাক্যগুলো তাদের কাব্যিক মূর্ছনায় উতরে গেছে।
পত্রিকার সাহিত্যপাতা আজকাল পড়িনা। বিবমিষা তৈরী হয়। এমনসময় সমকালীন কারোর বই একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে পারলে বেশ ভালোই লাগে।
ম্যাক্সিম গোর্কির আত্মজৈবনিক লেখাগুলোর দ্বিতীয় খণ্ড এটি। বোধকরি ‘মাই এপ্রেন্টিসশিপ' নামও বইটি প্রচলিত। প্রথম বইটির শেষ থেকে এটি শুরু।
বইটায় গোর্কির কৈশরের কর্মজীবনের ছবি পাওয়া যায়। যদি ছবি আঁকা হত তবে পাওয়া যেত বিষাদময় অসংখ্য রঙের সমাহার।
এই বইয়ের গোর্কির স্বপ্নেও ভাবার অবকাশ ছিল না প্রথাগত শিক্ষা নেওয়ার। তবে প্রচণ্ড জ্ঞানের ক্ষুধা, গল্পের ক্ষুধা ছিল তাঁর। আর ছিল পায়ের তলায় সর্ষে। কখনো একজন জুতোর দোকানের কর্মী থেকে আর্কিটেক্টের শিক্ষানবীস, সেখান থেকে স্টীমারের রসুইয়ের কর্মী, পাখি ব্যবসায়ী, ধর্মীয় বই আর ছবির দোকানে কাজ, ছবি আঁকতে শেখা, আবার শিক্ষানবীস... এভাবেই চলতে থাকা। এরমাঝে বই পড়ার অদম্য ইচ্ছে। সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসা, বইয়ের জন্য অপমানিত হওয়া, বইয়ের জন্য স্নেহ পাওয়া, বই থেকে স্বপ্ন দেখা।
আর আছে মানুষ, হরেকরকমের। আইকনের ওয়ার্কশপের শিল্পীরা, জাহাজের খালাসিরা, সামরিক মানুষজন, উঁচু ও নীচুতলার দেহপসারিনী, দিনমজুর। কদাকার মানুষ, ভিতরে ও বাহিরে, সুন্দর মানুষ। গোর্কিকে দেখা যায় মানুষ বোঝার ভয়াবহ চেষ্টারত। এ যেনো জীবনপণ!
আরো দেখা যায় ক্রমশই নড়বড়ে হতে থাকা ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তি।
মৃত্যু আছে, দৈন্য আছে, মানুষে অকারণ নিষ্ঠুরতা, মানুষের অবাধ ভালোবাসা সব আছে। একজন মানুষের হঠাৎই পচে যাওয়া, একজনের তিলে তিলে মৃত্যু, একজনের সবসময় আনন্দের সাথে বাঁচা। আবার সবকিছুতেই এক বিষাদের রঙ। বুঝি এই রঙটাই রাশিয়ার দারিদ্র্যের মূল রঙ ছিল।
‘গোর্কি' মানে ‘তিক্ত'। এই বইতে তার তিক্ততার একটা কৈফিয়ত পাওয়া গেলো, “Why do I relate these abominations? So that you may know, kind sirs, that is not all past and done with! You have a liking for grim fantasies; you are delighted with horrible stories well told; the grotesquely terrible excites you pleasantly. But I know of genuine horrors, everyday terrors, and I have an undeniable right to excite you unpleasantly by telling you about them, in order that you may remember how we live, and under what circumstances. A low and unclean life it is, ours, and that is the truth! I am a lover of humanity and I have no desire to make any one miserable, but one must not be sentimental, nor hide the grim truth with the motley words of beautiful lies. Let us face life as it is!” এই কথাগুলোকে বাস্তববাদী লেখার মূল সুরও বলা চলে।
এই বইটির শেষে গোর্কির বয়স হয় সবে পনের। পনেরটা বছর তার জন্য সহজ ছিল না। এই দুর্বিষহ জীবন গোর্কিকে করেছে ‘গোর্কি'।