একজনের কবিতা ভালো লাগেনাই, তাই একটা তারা কম। :p
ইহা আমাদিগের খুলনাশহরনিবাসী ভাই-ব্রাদারকর্তৃক প্রকাশিত একটি ছোটকাগজ। বোধ করি দুবছর ধরে এটি বের করার চেষ্টা চলছে। সবাই ভয়াবহ অলস হওয়ায় আর হয়ে উঠছিল না। তবুও রোমেল ভাইরে স্লোগান আমরা মনে রেখেছিলাম, “মৃৎ মরে নাই”।
যাহোক, প্রচ্ছদ সুন্দর হইছে। বানানবিভ্রাট ঘটেনাই। একজন ছাড়া সবার লেখা ভালো ছিল। আমাদের বন্ধু আশরাফুল যে কিনা আনসারুল্লাহ বাংলার হাতে নিহত হয় তার কয়েকটি কবিতা এখানে আছে। তাকে নিয়ে রোমেল ভাইয়ের লেখাটা ভালো হইছে। রতনদা সবসময়ই বস পাবলিক। সে লিখলেই একটা ঘটনা ঘটে। মশিরুজ্জামান ওল্ডি দি গোল্ডি, মাহমুদ সানা নবীন কিন্তু ধারালো।
মৃৎ-এর সাথে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন!
এতদিন বইটা না পড়া রীতিমত একটা অপরাধ। সত্যিকারের কালজয়ী লেখা বলতে যা বোঝায় এ হলো তাই।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রগুলো সাদামাটাভাবে শুরু হয়। তাদের আচরণ, গন্তব্য সব সাদামাটা। দরিদ্র আদর্শ দরিদ্র, জোতদার ছেচড়া জোতদার, গ্রাম্য ডাক্তার যথার্থ গ্রাম্য ডাক্তারের মতই ফিসের তাগাদা দেয়। এবং, শেষমেশ তাদের নিয়তিও এমনকিছু আশ্চর্যজনক না। আশ্চর্যের ব্যাপার তাদের হঠাৎ কোনো ব্যবহার, কোনো কথা, কোনো হাসি। ‘শেষের কবিতা'য় রবীন্দ্রনাথ লাবণ্যের প্রথম পরিচয় যেমন পাহাড়ের পটভূমিতে বিদ্যুতঝলকের মত দেখিয়েছিলেন, চরিত্রগুলে তেমন কোনো ঝলকে ঝলকে বোধি দেয়, জানিয়ে দেয় যে মানুষের ভেতরে আরো কোনো মানুষ থাকে যে তার গড় মানবিকতার উর্ধ্বে। মানুষ তারা, এমন মানুষকে বিশ্বাস করতে ভালোলাগে, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
ফলতঃ জোতদার গোপাল পুত্র গৃহত্যাগী যেন না হয় তাই নিজেই গৃহত্যাগী হয়, মতি কেমন বাউন্ডুলের যোগ্য গিন্নি বনে যায়, শশী শেষ মুহুর্তে আবিষ্কার করে কুসুমকে সে ভালোবাসত, যাদব স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেন।
উপন্যাসে অসাধারণ সব ঘটনা সাধারণ জীবনের সাথে মিশে যায়। মনে হয় না বানানো কথা, মনে হয় রোজকার কথাই, আমার দেখার চোখ নেই বলে এমন দেখিনা।
তিনতারা একটি খতরনাক রেটিং। পাঁচতারা মানে অসম্ভব ভালো লাগা, তারজন্যে ব্যাখ্যা লাগেনা। নাইতারা বা একতারা খারাপ লাগা। তাও পার্সনাল প্রেফারেন্স। কিন্তু তিনতারা হলো ভালো লাগা-না লাগার মাঝামাঝি একটা জিনিস। রাজা যযাতির মত স্বর্গের পথে মধ্য আকাশে সাসপেন্ডেড।
পূর্ববর্তী প্রোগ্রেস লগে বলেছি কাফকা আমার হজম হতে চায় না, এবারও হয়নি। খাওয়ার সময় কখনো কখনো মুখরোচক লেগেছিল তবে পুরোটা খেয়ে মনে হচ্ছে তেমন কিছু না।
মাঝে মাঝে সুররিয়ালিজমের মধ্যে স্বস্তা বাঙলা সিনেমার মত রিয়ালিটি ঢুকে যাচ্ছিল, মিশ খেলো না বুঝি।
এসব কারনে ২টো তারা কমলো।
তিনটে তারার একটা বলার ভঙ্গির জন্য, কখনো কখনো বেশ শক্তিশালী লেখা মনে হয়েছে। আরেকটা গল্প কাঠামোর জন্য, তবে পুরোপুরি স্যাটিসফাইড না। আরেকটা বিদগ্ধজনের চাবুক থেকে বাঁচতে। হা হা হা!
বইটি খানিকটা ভ্রমণকাহিনী, খানিকটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা। সদ্য ঘটা ভ্রমণের না, অর্ধবিস্মৃত যৌবনের স্মৃতি বৃদ্ধবয়সের পরিণত চোখে আবার দেখে লেখা। এই বইয়ের সমালোচনা লেখার বড় সমস্যা হচ্ছে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন একবার। মোটামুটি বইটার মান সম্পর্কে ভালো ধারণা তার সমালোচনাতেই পাওয়া যাবে।
আমি যা দেখছি তা হলো, ৪৩ পৃষ্ঠার একটি বই আমার জানাশোনার কয়েকটা জানলা একসাথে খুলে দিলো। বইটা পড়ার আগে বঙ্কিমচন্দ্রের কোনো বড় ভাইয়ের অস্তিত্বই ছিল না আমার কাছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত লেখার ধরণে তিনি বঙ্কিমের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল, রসবোধ এবং কবিত্বেও কমতি নেই। বইটা থেকে বেশকিছু জায়গা হয়ত উদ্ধৃতি দেওয়া যেত তবে তার মেধা ও প্রজ্ঞা এবং তার সাথে লেখার স্বচ্ছলতা বোঝাতে নীচে একটু উদ্ধৃতি দিলাম। এখানে ‘পট'-কে আমরা দৃশ্যকল্প বলতে পারি-
“কোন পটের বন্ধনী কী, তাহা নির্ণয় করা অতি কঠিন; যিনি তাহা করিতে পারেন, তিনিই কবি। তিনিই কেবল একটি কথা বলিয়া পটের সকল অংশ দেখাইতে পারেন, রূপ গন্ধ স্পর্শ সকল অনুভব করাইতে পারেন। অন্য সকলে অক্ষম, তাহারা শত কথা বলিয়াও পটের শতাংশ দেখাইতে পারে না।”
মাই নেম ইজ রেড আমার পড়া ওরহানের দ্বিতীয় বই। আগে ইস্তানবুল পড়ে এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম।
এই বইটার সময়টা ১৬৯১ সালের কয়েকটাদিন। তবে সব মিলে গল্পের ব্যাপ্তি কয়েকশতকের। ঐতিহাসিক উপন্যাস যেমন হয়, ইতিহাস থাকে কম (সেটুকু যথাসম্ভব অবিকৃত রাখা হয়) এবং তার মেজাজে বেশ একটা গল্প বলা হয়। এও তেমনি।
সচরাচর ইতিহাস বলতে যা বুঝি তা হচ্ছে খুনের ফর্দ। সেভাবে দেখলে যে সময়টার কথা বলা হয়েছে পৃথিবী মোটামুটি শান্ত। বিশেষ করে অটোমান সাম্রাজ্য বহিঃশত্রুর ভয়ে ভীত নয়। সুলতান সুলেমানের বেশ শক্ত একটা ভিত্তির ওপর অটোমান সাম্রাজ্য অটল তখন। ইউরোপে রেঁনেসা হয়ে গেছে, ভারতবর্ষে সম্রাট আকবর রাজত্ব করছে এবং কেউই এখন বোকার মত হুঁট করে অন্য রাজ্য আক্রমণে যায় না। একটা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কাঠামো তৈরী হয়েছে। তবুও এটা অটোমান সাম্রাজ্যের একটি ক্রান্তিকাল। সেই সাথে পুরো মুসলিম পৃথিবীরও হয়ত। ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার ফাঁক গলে যেটুকু আলো আসছিল সেটুকুও বন্ধ হলো এই সময়ে।
গল্পটা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এবং আগ্রাসনের। আগ্রাসনটা ���র্মীয়। দ্বন্দ্বটা ইউরোপীয় চিত্রকলার সাথে অটোমান চিত্রকলার। মনে রাখা দরকার রেঁনেসা পরবর্তী ইউরোপ যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মত শিল্পীর আবির্ভাব তার বর্ণচ্ছটা কম না। এদিকে মুসলিম চিত্রকলার মূল উদ্দেশ্য বই অলঙ্করণ। দুইধরনের চিত্রকলার দর্শনে বিশাল ফাঁরাক। এই দ্বন্দ্বটা বইটার মূল বিষয়গুলোর একটা। আর চিত্রকলার ওপর যে ধর্মীয় নিপীড়ন দেখা গেলো তার সময়কালও ঘটনার অনেক আগে থেকে বিস্তৃত। হীরাট নগর ছিল মুসলিম শিল্পচর্চার পীঠস্থান। সেই শহর একরকম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় (পিরিমকুল কাদিরভের ‘বাবর' বইতে তার বেশ ভালো বিবরণ আছে)। কামাল-উদ-দীন বেহজাদের মত মায়েস্ত্রোরা ছিলেন হীরাটে। মূলত এরকম বারবার বিতাড়িত শিল্পীরা বিভিন্ন সুলতানদের কাছে কাজ করতে করতে, তার সাথে চাইনিজ চিত্রকলার মিশেলে একসময় অটোমান চিত্রকলায় রূপ নেয় যার মৃত্যু বইটার উপজীব্য।
বইটার গল্প বোনার পদ্ধতিটা ভালো লেগেছে। চরিত্রগুলো গভীর, মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতগুলো আবেদন রাখে। বইয়ের গল্পটা আমি বলতে চাই না। ঝালটা নিজের মুখে খাওয়াই সমীচীন।
পুরো একমাস লাগলো! মাঝে অবশ্য আরো কয়েকটা বই পড়া হয়েছে। রাশিয়ান লেখা সবসময়ই ভালো লাগে আমার। কারণ হয়ত প্রগতির দুর্দান্ত বাঙলা অনুবাদ। ওগুলো সরাসরি রুশ থেকেই অনুবাদ হত, ইংরেজির গলি ঘুরে না। আমেজ অক্ষত থাকত অনেকটাই। ইংরেজিও এখন খারাপ লাগছে না। রাশিয়ানদের সাথে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ঘঠনে বোধহয় একটু বেশিই মিল আছে। আপন মনে হয় বেশি তাদের। কেউ যদি গোর্কিকে জীবনঘনিষ্ঠতার জন্য আলাদা করে দেখেন তো ভুল করবেন, রাশিয়ান লেখামাত্রই জীবনঘনিষ্ঠ। অন্যান্য বিভিন্ন দেশি সাহিত্যের তুলনায় মধ্যবৃত্তের আরামের আতিশয্যে করা আবেগের বাচালামি একটু কমই এদের। চেখভকে আলাদা করা যায় ওর রসোবোধ দিয়ে। একটু কম সিরিয়াস সে অনেক গল্পে। অনেক গল্প নিছকই হাসির গল্প। আর সবগুলোই সুপাঠ্য।
বইটা আসলে পাঁচতারা পাওয়ার মত। একটা তারা বাদ হচ্ছে বইয়ের শুরুতে কড়ারকমের গ্রন্থসত্ত্বের ঘোষণা এবং অতিসাম্প্রয়দায়িক শ্রীশ্রীআনন্দমুর্ত্তির একটা ঘোষণার জন্য।
লেখা হয়েছিল শিশুপাঠ্য হিসেবে বোধকরি। আমাদের ক্রমক্ষীয়মান (নাকি ক্রমক্ষীণায়মান?!) ভাষাচর্চার যুগে বালেগদেরও (‘বালেগ' এর সাথে ‘বাল' শব্দের কোনো সম্পর্ক নাই।) প্রচুর জানার আছে বইটা থেকে। বইটা সুপাঠ্য বটে। মাঝে মাঝে পুনঃকথন দোষে দুষ্ট। বাকি ৪ খন্ড হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
একটু স্পয়লার দিই। ‘পুরি'-র (যে পুরি খাই আরকি) সংস্কৃত হচ্ছে ‘সোমালিকা'। :P
বোঝাই যাচ্ছে বইটা রবীন্দ্রনাথের ইরানভ্রমণ নিয়ে। সাথে নাতিদীর্ঘ ইরাকভ্রমণ আছে। যা বর্ণিত হলো তাতে বিষাদ জাগে। বিষাদ জাগে এইজন্য যে একসময় এই দুটো দেশ ভারতবর্ষের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ছিল। এখন মধ্যপ্রাচ্যের পৈশাচিকতা তাদের ভেতরেও কম না। বোঝা যায় “ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্র” রটনার কিছুটা সত্যি বটে। তবে দুরাচারের বীজ সে ধর্মের ভিতরেই ছিল।
রবীন্দ্রনাথ বইটায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা করেছেন। এই বইটা খুব বেশি জনপ্রিয় নয় বলেই হয়ত এই বিষয়ে তার মতামত সম্পর্কে প্রশ্ন হলে বইটার রেফারেন্স আসে না। সত্তরের রবীন্দ্রনাথ, পরিপক্ক রবীন্দ্রনাথের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে ফাঁকিবাজি এবং দুরাচার সম্পর্কে যে সম্যক ধারণা ছিল তা বোঝা গেলো। ধর্মগুলো যে বিশেষশ্রেণীর স্বার্থে টিকিয়ে রাখা এবং এই যুগের তুলনায় নিতান্তই অব্যবহারযোগ্য তা সোজাসুজিই বলেছেন। এমনকি সবশেষে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচার জন্য ধর্মের প্রয়োজনের যে যুক্তি দেওয়া হয় তাও তিনি অস্বীকার করেছেন। তারমতে আধুনিক বিষয়বুদ্ধি যেকোনো ধর্মবুদ্ধি থেকে ভালো।
দিশেহারা লাগলে রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বড় আশ্রয়। আমি রবীন্দ্রনাথের কাছে ফিরে যাই বারে বারে।
কেননা রবীন্দ্রদর্শনের মূল কথাটাই হলো ‘প্রশ্ন করো'। সামনে যে আছে, যা আছে তাকে এবং নিজেকেও। জানার ইচ্ছের বিনয় থাকুক, অমান্য করার তেজ। বড়মানুষ হওয়া মানে আসলে ভালোভাবে মানুষ হওয়াটাই। রবীন্দ্রনাথ যদি কবি নাও হতেন, কোনোকিছুই না হতেন, শুধু তাঁর জীবনদর্শনই যথেষ্ট ছিল তাঁকে বড় মানুষ করতে। তাঁর অনেক দীনতা ছিল এবং তিনি তা জানতেন। আত্মসমালোচনায় তিনি কঠোর।
বইটায় রবীন্দ্রনাথের রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠার মোটামুটি একটা রেখাচিত্র পাওয়া যায়। একজন সফল মানুষের কী পরিমাণ ব্যর্থতা ও লজ্জার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় তার ভালো একটা ধারণা পাওয়া যায়।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসার ক্ষমতা। সকলের জন্য তাঁর কাছে ভালোবাসা ছিল। মানুষের প্রতি ছিল আস্থা। তিনি নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানুষ, পৃথিবীর মানুষ। আমার মনে হয়, সেসময়ে ভিনগ্রহীদের সম্পর্কে তাঁর ধারণা থাকলে তিনি মহাজাগতিকও হতেন নিশ্চয়ই।
বিশুদ্ধ দুষ্টুমির কাহিনী। বৈচিত্র্যবিনাশী লেখাপড়ার প্রতি দুর্দান্ত বিদ্রোহের গল্প। অসম্ভবরকমের প্রিয় বই।
বইটা চমৎকার। প্রফেট যতটা না প্রফেট তারচেয়ে বেশি পোয়েট। এইসব বইয়ের সমস্যা হচ্ছে লোকে এগুলো থেকে এত ক্যোট করে যে ক্রমে ক্লিশে হয়ে ওঠে। এজন্যই আমি ক্যোট করা থেকে বিরত থাকবো। তবুও বলা চলে আধ্যাত্মিকতার অনেককিছুই আমার অবিশ্বাসের জায়গায় থাকলেও আমি উপভোগ করেছি। অনেক ব্যাপারে একমতও। বইটা সংক্ষিপ্ত। পড়তে রেকমেন্ড করবো।
এই বইতে তৎকালীন ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থার বেশ স্পষ্ট একটা চালচিত্র পাওয়া যায়, পাওয়া যায় রিফর্মেশনের কথাও। কিন্তু যে সমস্যাগুলো সেদিন ছিল আজ তার থেকে খুব বেশি উন্নতি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। বরং, কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। প্রথমত, অভিভাবকরা কিছুমাত্র সচেতন হন নি। বরং দীর্ঘ কেরাণীগিরির ইতিহাস তাদের ক্যারিয়ারিজমের পালে আরো হাওয়াই দিয়েছে। উত্তরোত্তর বাস্তবতা বিবর্জিত, অবৈজ্ঞানিক, কূপমণ্ডুক শিক্ষার ভুত আমাদের ঘাড়ে আরো বেশি চেপে বসেছে।
হরিশংকর জলদাস আমাকে পড়তে বলেছিলেন আমার একজন সহকর্মী। দীপনপুরে আড্ডার অপেক্ষায় পড়ে ফেললাম এই বইটি। এটি একটি ছোটগল্পের সংকলন।
বস্তুত আমার বইটি একটুও ভালো লাগেনি। চতুর্দশী বালিকাদের দিনলিপির মত লেখা মনে হয়েছে আমার কাছে। গল্পগুলো অনেকটাই ব্যক্তিগত। ব্যক্তি লেখক জোড়েসোরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। সমস্যা সেখানে না, সমস্যা হচ্ছে গল্পের সুর কেটে যাচ্ছে, তখন ব্যাপারটা চোখে পড়ে বেশ।
কয়েকটা ছোটগল্প পড়ে লেখকের বিচার করতে চাই না, বইটার বিচার করলাম।
বইটা পড়ে ফেললাম অল্প সময়ে, ছোট পাতার মোটে ৪৭ পাতার একটি বই। স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধের বই। তার কবি হয়ে ওঠার পথঘাটের বেশ হদিশ মেলে। হাঙরি জেনারেশনের জনক বলা হয় তাকে, বইটিতে যেভাবে সব দায় শক্তি চট্টপাধ্যায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে হাত ধুয়ে ফেললেন তা পুরোটাই সত্য কিনা আমি বলতে পারি না। কবিরা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন না। পলায়নপরতা তাদের কমবেশি সবারই থাকে। যাহোক, গদ্য ততটা সুন্দর না, তবুও সুপাঠ্য বলা চলে।
বইটা এখন আউট-অব-প্রিন্ট। পড়েছি গ্রন্থ ডট কম-এ রাখা দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে।
প্রথমদিকে কয়েকটা চ্যাপ্টারে একই কথার পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে খুব অল্প পরিসরে। বইটার বস্তুত চোখে পড়ার মত সমস্যা এটুকুই। তা বাদে বাঙলায় বিবর্তনের সম্পর্কে একটি সঠিক প্রাথমিক ধারণা পেতে বইটা অবশ্যপাঠ্য ধরে নেওয়া যায়। তাছা বিবর্তনবাদের বিবর্তন ও তার ইতিহাসও বলেছেন বেশ চমৎকারভাবে।
ভাষা মোটামুটি সুখপাঠ্য ও সাবলীল।
খানিকটা হ্যান্ডবুক, খানিকটা ইশতেহার। যা বলা হয়েছে নতুন কিছু না। বরং বলা চলে মানুষে জ্ঞান অন্বেষণের দীর্ঘ যাত্রায় মানুষ যে পদ্ধতিতে সফল হয়েছে সেগুলো সংকলন করা হয়েছে। ক্ষুদ্রদেহ। অবশ্যপাঠ নয়, পড়লে রিফ্রেশার হিসেবে কাজ করতে পারে কারো কারো ক্ষেত্রে।
পবিত্র সরকারের ([a:Pabitra Sarkar 7325817 Pabitra Sarkar https://s.gr-assets.com/assets/nophoto/user/u_50x66-632230dc9882b4352d753eedf9396530.png]) বইগুলোর মধ্যে এটাই প্রথম পড়লাম। কোনো লেখকের বই প্রথমবার পড়ার একটা মজা আছে। লেখককে একদম আনকোরাভাবে জানা। আত্মজৈবনিক লেখা হলে তো কথাই নেই।পবিত্র সরকার একজন বিদগ্ধ ভাষাপণ্ডিত। যারা বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করেন তারা চেনেন। এই বইতে স্থান পেয়েছে গোটাদশেক প্রবন্ধ, আরো একটি পরিশিষ্টে। প্রবন্ধগুলো, বইয়ের নাম শুনেই বুঝতে পারছেন ঢাকাকেন্দ্রিক। বস্তুত বাংলা একাডেমীর ‘প্রমিত বাংলা ব্যকরণ' বইটির সম্পাদনার কাজে বছরদুয়েক ধরে দফায় দফায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে।স্বচ্ছল লেখা, বয়স এবং তারমতে মাস্টারি করা স্বভাবের জন্য কখনো কখনো একটু প্রগলভ মনে হতে পারে, কিন্তু শেষমেশ চমৎকার, সংযত লেখা। রসবোধ চমৎকার। আমার ভালো লেগেছে বইটা।
তো, নিষিদ্ধ বই সপ্তাহের জন্য পড়া শুরু করেছিলাম। তারমধ্যে শেষ করিনি অবশ্য।
২ তারকা ইনফরমেশনের জন্য।
তা বাদে, অনুবাদ বাজে, বক্তব্য অসংলগ্ন। খৃস্টান ধর্ম ‘মানবমুক্তি'র পক্ষে! সিরিয়াসলি! আর ইউ কিডিং মি! এরকম অনেক পক্ষপাতিত্বমূলক কথাবার্তা আছে বইতে। ব্যাপারগুলো খুব একটা যুক্তির ধারপাশ দিয়ে গেছে বলেও মনে হয়নি। অনেকটাই আবেগিক, প্রবন্ধের নির্মোহতা অনুপস্থিত।
কাগুজে বইয়ের বেশ ভালোরকম বিরোধী আমি, ইবুকের পক্ষে। তারপরও কিনতে হয় কেননা কিছু কিছু বই এখনো ইবুকে পাওয়া যায় না। আপদধর্ম। যাহোক, দীপনপুরে কবিতার বই দেখছিলাম। কবিতার বই দেখার একটা উপায় আছে আমার। একটা বই খুলে যদৃচ্ছ পাঁচটি কবিতা পড়ি। গড় করি কেমন লেগেছে। না, এমন ভাবিনে যে সবগুলোই ভালো লাগবে। পাঁচটার মধ্যে দুটো ভালো লাগলেই কিনে ফেলি।
সেইমতে, কিনে ফেলেছিলাম। নির্মলেন্দু গুণ আজকাল ছেনালস্বভাবের (বয়সের দোষে হয়ত), কিন্তু কবিতায় তিনি কবি। অনেক অনেকের চেয়ে (যারা কিনা আজকাল ঢাকার আকাশ-বাতাশ কাঁপিয়ে কবিতা লিখছেন।) তাদের চেয়েও অনেক গভীর ও সৎ কবি।
কবিতাগুলো বড্ড বেশি ব্যক্তিগত। ব্যক্তিটি পুরুষ হওয়ায় খানিকটা পৌরুষিকও বটে। কিন্তু, চমৎকার কবিতা।
ভালো লেগেছে।
বইটা প্রিয়, অনেক প্রিয়।
ছোট একটা ছেলে, রোগা, ডেঙ্গুতে পায়ে জোর কম। বাবাকে ঠিকমত চেনার আগে বাবা গেলেন মারা। ঠাকুরদাকে দেখেওনি। বাবার রাজত্বহারা কয়েকবছর পরই।
অনাদরে বা অবহেলায় না, বেশ আদরেই কিন্তু এলেবেলে ভাবে বড় হলেন। লিখলেন শঙ্কু, লিখলেন ফেলুদা, সন্দেশে আবার ফিরলেন, বানালেন ছবি।
বইটায় কোনো হাহাকার নাই। হাহাকার বইয়ের সাবলীলতায়। আহারে জীবন!