পৃথিবীতে কি আর কোনো প্রাথমিক ভাষাশিক্ষার বই আছে, যে বইয়ের শুরু হয়েছে এই কথাগুলো দিয়ে?
ছোটো খোকা বলে অ আশেখে নি সে কথা কওয়া।
ঋ
ঘন মেঘ বলে ঋদিন বড়ো বিশ্রী।
ন
রেগে বলে দন্ত্য নযাবো না তো কক্ষনো।
কাল ছিল ডাল খালি,আজ ফুলে যায় ভ'রে।বল দেখি তুই মালী,হয় সে কেমন ক'রে?
ওরে কৈলাস, দৈ চাই। ভালো ভৈষা দৈ আর কৈ মাছ। শৈল আজ খৈ দিয়ে দৈ মেখে খাবে।
বাঁশ গাছে বাঁদর। যত ঝাঁকা দেয়, ডাল তত কাঁপে। ওকে দেখে পাঁচু ভয় পায়, পাছে আঁচড় দেয়।
আজ খুব শীত। কচু পাতা থেকে টুপ টুপ করে হিম পড়ে। ঘাস ভিজে। পা ভিজে যায়। দুখী বুড়ি উনুন-ধারে উবু হয়ে বসে আগুন পোহায় আর গুন গুন গান গায়। বেলা হল। মাঠ ধূ ধূ করে। থেকে থেকে হূ হূ হাওয়া বয়। দূরে ধুলো ওড়ে। চুনি মালী কুয়ো থেকে জল তোলে...আর ঘুঘু ডাকে ঘূ ঘূ।
নজর মেঘে ঢাকা
অঝোর শ্যাম
শ্রাবণ বারিধারা
ট্র্যাফিক জ্যাম।
মেজাজি অটোঅলা
ভেজা জিরাফ
কোথায় ধোঁয়া তোলে
চায়ের কাপ...
পুরো চা খেতে হবে।
কুরোসাওয়ার
বৃষ্টি মনে পড়ে।
থামে না আর।
এগোনো ভালো আজ
যে কোনও দিক—
বাতাসে দোল খায়
জলের চিক...
একা সে ঘুরে মরে
ফ্যাকাশে দিন
পাথরে মাথা রাখে
বোতলে জিন
পেরেকে গাঁথা হাত
ছেড়ে কে যায়
না এলে থাকে রোদ
এলে ভেজায়
শহরে নেমে এসো
বহো রে জল—
মানুষ খুঁজে ফেরে
চায়ের ছল...
Man proposes, god disposes discloses.
ইদানিং প্রায়ই এরকম হচ্ছে। বৃষ্টির জন্যে সকালে মাঠে দৌড়তে যাওয়া পণ্ড হচ্ছে। সিঁড়িতে উপর-নিচে দৌড়ানোর চেষ্টা করেছি, বাড়ির বিড়ালগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে, আর rolling eyes কিংবা yawning face ইমোজি ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে আমার দিকে।
গদ্যশৈলীর মৌলিকতা, কাহিনির ভিতরে সম্পৃক্ত দ্বন্দ্ব, চরিত্র নির্মাণ, পাঠকালীন উপলব্ধি— সব দিক দিয়ে বিচার করে আমার মনে হয়েছে, এই উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের একটি সম্পদ। এই উপন্যাসটির সঙ্গে লেখকের অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাসের তুলনা এবং রেটিং-রেটিং খেলায় মত্ত হবো না আমি ; শুধু নিজের ভালোলাগার কারণগুলো খুব সংক্ষেপে লিখে রাখার চেষ্টা করবো এখানে।
উপন্যাসটির একটা মুখ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর নির্লিপ্ততা। আমার কাছে আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম প্রকৃষ্ট লক্ষণ এটা। পাঠকের মতো লেখকও নিজেকে উপন্যাসের চরিত্রদের থেকে আলাদা করে রেখেছেন। নিজের মতামত/দর্শন আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেননি। তিনি স্রষ্টা হয়েও তাঁর হাবভাব স্রষ্টার মতো নয়, পাঠকের মতোই তিনি একজন দর্শক মাত্র। সেই কারণেই, আবু ইব্রাহিম যে মারা যেতে চলেছেন, এই স্পয়লারটা তিনি উপন্যাসের সর্বপ্রথম লাইনেই আমাদের জানিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। মুখ্য চরিত্রের অন্তিম পরিণতির ব্যাপারটা কাহিনির শুরুতেই বিবৃত করে দেওয়ার পরে, একটি নাতিদীর্ঘ এবং নির্লিপ্ত গল্পকথনের সূচনা করেন লেখক। প্রশ্ন হলো, ক্যানো মারা গেছিলেন আবু ইব্রাহিম?
আবু ইব্রাহিমের জীবনটা আমাদের নিজেদের জীবনের মতোই। তার মতো আমরাও “শর্টকাট” পদ্ধতিতে নিজেদের চারিত্রিক ভীরুতাকে জয় করতে চাই (এবং শেষ পর্যন্ত আরো বেশি ভীরু হয়ে যাই)। তার মতোই আমরা ঘুষ খাবো কি খাবোনা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করি। খুব ইচ্ছে থাকলেও, স্রেফ সাহসের অভাবে আমরা অসৎ (কিংবা লম্পট) হতে পারিনা। সততার ফালতু মুখোশটা নিজেদের মুখের উপর লেপ্টে রেখে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াই। তার মতোই নিজেদের বউয়ের ব্যাপারে “পৃথুলা”, “স্থূলকায়া”, এইসব শব্দ চিন্তা করি, কিন্তু রাত্রিবেলায় বিছানায় বসে উপলব্ধি করি, এই মেদবহুল দেহটা থেকেই আনন্দ সংগ্রহ করে নিতে হবে, আপাতত হাতের কাছে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।
যখন “অপশন” এসে হাজির হয়? প্রাক্তন প্রেমিকা কিংবা অফিসের সহকর্মী। চান্স পেলে তখন সেই বিকল্প দেহটাকে আমরা উপভোগ করতে সচেষ্ট হই। ভুল বললাম। আমরা তো ভীরু এবং কাপুরুষ। সচেষ্ট হওয়ার বিষয়টা কেবল মনে মনেই কল্পনা করি। তাকে ডাকবো। বন্ধুর ফাঁকা ফ্ল্যাটে। দুপুরবেলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি সেই নতুন দেহটাকে কব্জা করতে পারি আমরা? আবু ইব্রাহিম পেরেছিলেন তার “অপশন”কে কব্জা করতে?
জীবনের এইসব হাজাররকম “সম্ভাবনা”কে মগজের মাংসের খাঁজে প্রতিনিয়ত বহন করে চলি আমরা। সফল হওয়ার সম্ভাবনা। দৈহিক সুখলাভের সম্ভাবনা। শহরে নিজস্ব একটি বাড়ির মালিক হওয়ার সম্ভাবনা। পোষা কুকুরের মতো আজীবন পায়ের কাছে লুটোপুটি খাওয়া নিজেদের কাপুরুষতাকে, ভীরুতাকে, জয় করার সম্ভাবনা। বিভ্রান্তিতে ভরা বালের এই বোকাচোখা জীবনটার তেলতেলে ঘৃণ্য খোলস ত্যাগ করে ঝাঁ-চকচকে স্মার্ট জামাকাপড় পিন্দনের সম্ভাবনা। আবু ইব্রাহিম তো আসলে আমরাই। আবু ইব্রাহিমও সম্ভাবনার সুইমিংপুলের সাইডে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলেন, জলের মধ্যে লাফ মারবো কি মারবো না? আবু ইব্রাহিম মারা গেছিলেন। তবে জলে ডুবে নয়।
শহীদুল জহিরের এই উপন্যাসটি তিনি বেঁচে থাকতে বই আকারে প্রকাশ করা হয়নি, যদিও পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিল অনেক আগেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ আমলা। এই উপন্যাসটিতে বেশ খোলামেলাভাবে তিনি আমলাতন্ত্রের ভন্ডামি, দুর্নীতি এবং দ্বিচারিতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসটি পড়লে আন্দাজ করা যায়, তাঁর পেশাগত অভিজ্ঞতার কিছু বাস্তব উপাদান তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন কাহিনিতে। এই কারণেই তাঁর জীবিতাবস্থায় বইটি ছাপা হয়নি। কাক যেমন কাকের মাংস খায়না, তেমনি নিজে আমলা হয়ে সহকর্মী-আমলাদের মাংস খাওয়া যায়না।
যাই হোক, আবু ইব্রাহিম ইজ আপাতত ডেড।
কিন্তু তবুও, লং লিভ আবু ইব্রাহিম। এই কথা তো বলাই বাহুল্য।
দুপুরবেলা ঝমাঝম বৃষ্টির শেষে বিকেলবেলা বইয়ের দোকান থেকে কিনে এনে সন্ধেবেলা উল্টেপাল্টে খানিক নেড়েচেড়ে রাতে খাওয়ার পরে একপাতা দুপাতা করে চোখ বোলাতে বোলাতে রাত বারোটা-কুড়ির সময় চৌষট্টি নাম্বার অর্থাৎ অন্তিম পৃষ্ঠাটা উল্টে ফেলার পরে শেষমেশ ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার কথাটা মনে মনে স্বীকার করতেই হলো চিৎপটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।
শ্রীজাতর আগের কোনো কবিতার সঙ্গে মেলানো যায়না এই বইয়ের কবিতাগুলোকে যেমন গরমকালে রোদের মধ্যে অনেকক্ষণ মোটরবাইক দাঁড় করানো থাকলে তারপর হঠাৎ তাতে বসতে গেলে ছ্যাঁকা লাগে। প্যান্ট পরে থাকলেও লাগে (অবশ্য প্যান্ট না পরে মোটরবাইকে কেউ বসতে যাবেই বা ক্যানো)। কিংবা শীতকালে যদি একবালতি ঠান্ডা জল... অবশ্য শীতকালের ব্যাপারটা এই বৈশাখ মাসে একটুও আন্দাজ করা যাবে না। কত তাড়াতাড়ি আমরা ভুলে মেরে দিই সবকিছু। প্রায় সবকিছুই। এই বৈশাখ মাসটার কথাও ভুলে যাবো সামনের আশ্বিনে।
যে-কোনও কবিতার একটু নীচ দিয়ে, বয়ে যাচ্ছে একটা চোরা স্রোত। চক্রান্তের। ঠিক যেমন রেড কার্পেটের ধারে ধারে চোখে-না-পড়া পেরেকগুচ্ছ। ঠিক যেমন বাসের ফুরফুরে জানলার কোণে লেগে থাকা টাটকা বমি। হয়তো লেখা হচ্ছে দীঘির কথা, কিন্তু তার অনেক গভীরে, নরম মাটিতে পুঁতে রাখা আছে বাপি মণ্ডলের লাশ, যা জাল ফেলেও পাওয়া যায়নি। হয়তো লেখা আছে ধানক্ষেতের কথা, কিন্তু তার মাঝখানটায় দলাপাকানো রক্তমাখা সায়া। এইরকম। পংক্তির ঠিক মাঝখানে না-দেখতে পাওয়া একটা মিহি ছুরির গুনগুন সুর লুকিয়ে আছে। কমা-র আগে দাঁড়িয়ে দম নিচ্ছে একটা মাছ কাটার লোলুপ বঁটি। স্তবকের ডানদিকের পরদার আড়ালে সায়ানাইড। কবিতা, যা ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, আসলে একটা অজুহাতমাত্র।
শ্রীজাতর কবিতা যাদের ভালো লাগে, এই কবিতাগুলো তাদের ভালো না-ও লাগতে পারে। আবার লাগতেও পারে। আবার না-ও লাগতে পারে। যেমন এই কবিতাটার কথাই ধরা যাক!
হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে যখন পরমাণু বোমা আছড়ে পড়ছিল, আমি তখন কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে একটা গাড়ির তপ্ত বনেটের ওপর বসে এন্তার ড্রাম পেটাচ্ছিলাম। ঘিরে ছিল মাতাল বন্ধুদল, আর হে পিতা, আমি নিজেই কি কম মাতাল ছিলাম সেই রাত্রে? বোতলের পর বোতল বিয়র কিচ্ছুটি না জানিয়ে আমার গলা বেয়ে হুড়মুড় করে নেমে গেছিল পাকস্থলিতে। ঠিক যেমন প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবে যোনিপথ বেয়ে। দেদার গানবাজনা হচ্ছিল রাস্তার একটা সস্তা পাবের সামনে। গিটারের তুবড়ির সঙ্গে লয় মেলাতে পারছিল না আমার এলোমেলো মাতাল ড্রাম কিট। কিন্তু, হে পিতা, আমিই কি মেলাতে পারছিলাম? আমি কি জানছিলাম না, আমার ড্রামের এক একটা বিট-এর সঙ্গে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত হিলহিলে সাপের মতোই নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে দাঁতক্যালানে তেজস্ক্রিয়তা? একটু একটু উন্মাদনার দুলুনি শরীরে বইয়ে দিতে দিতে আমি কি বুঝতেও পারছিলাম না যে ওরা, আমার এই ড্রামের স্টিকদুটোকে অগুনতি যুদ্ধবিমান বানিয়ে ঢুকিয়ে দেবে আমাদেরই পেছনে? আমি সবটাই বুঝেছিলাম, হে পিতা। কিন্তু আমি, হাড় বিচক্ষণ রিচার্ড ফেইনম্যান, নোবেল পুরস্কারটা আন্দাজ করে উঠতে পারিনি।
সব্বাই ওপেনহাইমারকে গালি দ্যায়। আর একজন ক্রুদ্ধ বাঙালি কবি ফেইনম্যানকে কেমন দিলো! আগে হলে বলতুম, উফ কি দিলো, চারআনা কিলো।
ভালো না-ও লাগতে পারে।
আবার লাগতেও পারে।
কিছুই বলা যায় না।
বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে : “প্রিয় চাবুক, পিয়ের পাওলো পাসোলিনি, আপনাকে”। চেনেন নাকি তাঁকে?
(এটা পাসোলিনি নয়। এটা নোবেলজয়ী ড্রামবাদক।)
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বলে মনে হয় এই বইটিকে। শক্তির কাব্যভাষার অনন্য চিহ্নগুলোর প্রায় সবক'টা খুঁজে পেয়েছি এতে। বইয়ের একদম প্রথম লাইনেই লেপ্টে আছে শক্তির দুরন্ত উপমাসৃষ্টির নমুনা : আজ আমার সারাদিনই সূর্যাস্ত, লাল টিলা— তার ওপর গড়িয়ে পড়ছে আলখাল্লা পরা স্মৃতির মেঘ। কিছু কিছু পঙক্তি প্রবাদের মতো মনে হয় : বুকের ভিতরে কিছু পাথর থাকা ভালো— ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। বইয়ের চতুর্দশপদী কবিতাগুলোর জন্যে উপায় থাকলে আরো দুটো/একটা তারা বেশি দেওয়া যেতো।
যে হৃদয় থেকে তুমি জেগেছিলে সে হৃদয়ে আর যাবার উপায় নাই, সে হৃদয়ে কোলাহল নাই !
১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত, মাত্র বারোবছর-ব্যাপী লেখা সমর সেনের কবিতার পরিচয় দেওয়ার জন্যে খুউব পুরাতন ক্লিশে হয়ে পচে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে এমন একটা শব্দ ব্যবহার করতে ইচ্ছে করছে : “আধুনিক”!
আরো একটা বাংলা শব্দ ব্যবহার করতে ইচ্ছা করছে, যেটা খুব বেশিদিন হয়নি বাংলা শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে, কিন্তু এখনই বুড়ো হয়ে গেছে : “স্মার্ট”।
সমর সেনের কবিতা শুরু হয়েছে বিষণ্ণ প্রেমিকের ইউনিফর্ম শরীরে চাপিয়ে। তাঁর প্রেম কখনোই বর্তমানের জ্যান্ত নরম স্পর্শে (এমনকি সেই স্পর্শের স্বপ্নেও) পুলকিত নয়। অতীতের ধুলোধূসরিত দ্বিপ্রাহরিক সরু পথরেখার মতো ম্লান।
অন্ধকারের মতো ভারি তোমার দুঃস্বপ্ন,তোমার দুঃস্বপ্ন অন্ধকারের মতো ভারি।
ভুলে-যাওয়া গন্ধের মতোকখনো তোমাকে মনে পড়ে।হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাসআর মেঘের কঠিন রেখায়আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে।“নগরজীবনের ক্লান্তি”। এই কথাটা বারবার বলা হয়েছে সমর সেনের কবিতার পরিচয় দিতে গিয়ে। এই ক্লান্তি জীবনানন্দের ম্লান-চোখ-তুলে-তাকানো অসহায়তার ক্লান্তি নয়। এই ক্লান্তি আক্রোশে হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যুবক-কবির নতুন নতুন উপলব্ধিজাত নাগরিক ক্লান্তি।বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা,মাঝে মাঝে মনে হয়,দুর্মুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখেতোমাকে নিয়ে কোথাও সরে পড়ি।
মৃত্যু শুনেছি শেষ কথা নয়,কালস্রোতে ভেসে আসে নবীন জঞ্জাল,আবার সঙ্গোপনে ঘরে রহস্যভরে বিড়ি ধরেবালক বংশধর,তারো পরে টেরি কেটে কাব্য পড়েজানায় অমর প্রেম বখাটে যুবক।
সংসার খালি;দূর ছাই, কিছু ভালো লাগে না,সঙ্গীহীন বুড়ো ভাবে সন্ধ্যায় :সমাজ বদলেছে অনেক, নিরুপায়,নইলে হে হরি,এ বয়সে মন্দ লাগত না আর একটি কিশোরী।পরবর্তীকালে বামপন্থী “ফ্রন্টিয়ার” ম্যাগাজিনের কিংবদন্তিসম দাপুটে সম্পাদক হতে চলেছেন যিনি, সেই সমর সেনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটি কিভাবে ধীরে ধীরে রূপধারণ করছে, তার পরিচয়ও পাওয়া যায় এই বইয়ের অনেক কবিতায়। দেশ তখনও পরাধীন। পতপত করে উড়ছে দুর্ভিক্ষের কালো পতাকা। ক্রোধ নয়, প্রতিবাদ নয়, নিপাট তাচ্ছিল্য এসে জমাট বেঁধেছে কবির কলমে।দুকোটি ক্ষুধার অভিশাপসংহত বাঙলা দেশে।চোরে চোরে মাসতুতো ভাই,নিবিড় মিতালি মহাজন ও শকুনে।দুর্দিন রপ্তানি কিছুদিন বন্ধ করএদেশে, হে দেব ! ক্ষান্ত কর দাক্ষিণ্য দারুন।
ভবলীলা সাঙ্গ হলে সবাই সমান—বিহারের হিন্দু আর নোয়াখালির মুসলমাননোয়াখালির হিন্দু আর বিহারের মুসলমান।
বইয়ের একদম অন্তিম কবিতাটি সমর সেনের কাব্যদর্শনের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করে। (কবিতার বইয়ের স্পয়লার হয়? হলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।)
শুনি না আর সমুদ্রের গান থেমেছে রক্তে ট্রামবাসের বেতাল স্পন্দন। ভুলে গেছি সাঁওতাল পরগনার লাল মাটি একদা দিগন্তে দেখা উদ্যত পাহাড়, বাইজীর আসরে শোনা বসন্তবাহার। ভুলে গেছি বাগবাজারী রকে আড্ডার মৌতাত, বালিগঞ্জের লপেটা চাল, আর ডালহাউসীর আর ক্লাইভ স্ট্রিটের হীরক প্রলাপ,ডকে জাহাজের বিদেশী ডাক। রোমান্টিক ব্যাধি আর রূপান্তরিত হয় না কবিতায়।যৌবনের প্রেম শেষ প্রবীণের কামে । বছর দশেক পরে যাব কাশীধামে ।।
এর পরে আর কোনোদিন কবিতা লেখেন নি তিনি।
শ্রীজাতর “উড়ন্ত সব জোকার” পড়ে খুব চমকে গেছিলাম। একেবারে আনকোরা কাব্যভাষা! তখন তো খুব বেশি কবিতা পড়তাম না। এখন হয়তো অনেক ত্রুটি চোখে পড়বে, কিন্তু নস্টালজিয়ার কারণে বইটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। “জোকার” পড়ার পরে, কবির পরবর্তী বইয়ের জন্যে অধীর অপেক্ষায় ছিলাম। মনে আছে, “ছোটদের চিড়িয়াখানা” বেরোনোর একদিন পরেই কিনে এনেছিলাম বইটা। এবং গোগ্রাসে গিলেছিলাম।
আমি ওপর-ওপর প্রভুভক্ত, ভেতর-ভেতর হিংস্র !
আমার মতে, এই বইটির মাধ্যমেই শ্রীজাত নিজের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পাকাপাকিভাবে। যাকে বলে, “এর পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি”।
কাল রাতে দৈবাৎ একটা কবিতা দেখে এই বইটার কথা আবার মনে পড়ে গ্যালো অনেকদিন পরে। রিভিউ শেষ করার আগে সেই কবিতা পুরোটাই এখানে তুলে দেওয়া যাক।
সমঝোতা, চাঁদের কুচি, নাকিসুরে রবীন্দ্রসংগীতশীতে পুরী, গ্রীষ্মে দিঘা, অভিমান, পালটা অভিমানভিড় থাকলে প্রোটেকশন, ফাঁকায় জানলার ধারে সিটরাতে তাড়াতাড়ি ফেরা, সকাল দশটার মধ্যে চানঘরে দস্যু, বাইরে গেলে একটা বেশ কবি-কবি ভাবরাতে শ-দেড়েক চুমু, দিনে পঁচিশবার টেলিফোনইমেজ, উল্কার গল্প, জন্মদিনে তন্দুরি-কাবাবঘরদোর গুছিয়ে রাখা, রাত না জাগা, সোজাসাপটা মনসিনেমার মতো দুঃখ, ভোরে ওঠা, মিষ্টিমিষ্টি কথাবিয়েশ্রাদ্ধভোটপৈতেহাসিকান্নামাসতুতোমামাতোনারীপুরুষের খেলা, টাকাপয়সা, খুচরো অমরতা...এসব, আমার কাছে, বলো, তুমি আশা করবে না তো?
ভালো লাগছিলো কবিতাগুলো। কিছু কিছু পঙক্তিতে চোখ আটকে যাচ্ছিলো। “মানুষের মাঝে যারা গাছ/ তাদের আপন লাগে”। কিছু কিছু আটপৌরে ভাবনায় সরল গভীরতা উঁকি দিচ্ছিল। “নতুন করে দেখার কিছু নাই/ চাঁদ উঠলে তবু তাকাই কেন?”
খুব একটা ভালো লাগেনি “লেটস গেট পলিটিক্যাল” অংশের কবিতাগুলো। এই অংশের কাব্যভাষায় ক্রোধ এবং দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ আমার কাছে পরিমার্জিত মনে হয়নি। কিছু কবিতায় হুমায়ুন আজাদের স্পষ্ট ঝলক। অবশ্য তাতে আপত্তির কিছু নেই।
কবির পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলো পড়তে আগ্রহী হয়েছি। কবে পড়তে পারবো জানিনা। আমাদের এখানে বাংলাদেশের কবিতার বই পাওয়া দুষ্কর। তবু চেষ্টা করবো জোগাড় করার। “তারারা পড়ছে খসে” কবিতাটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। “পুনর্জন্মে বিশ্বাস নেই কোনো/ এ জীবন গেলো নদীর কিনারে বসে...“।
কালো মেয়ে, তোর জন্য
আজ তুমি হরিণাক্ষী, যেহেতু সৌন্দর্যলোভী গুহামানবেরা
দীঘল হরিণীচোখ খুঁজেছিল যুগ যুগ ধরে
ক্ষুদ্রচক্ষু গুহানারীদের
বিমর্ষ ও অভিমানী মুখে।
নারীচোখে পড়েছিল পুরুষের সৌন্দর্যের টান—
সেই টানে জেগেছিল পৃথিবীতে রূপের সন্ত্রাস,
যার থাবা পড়েছিল প্রকৃতির যৌন-নির্বাচনে।
ঈষৎ আয়তচক্ষু যে রমণী, তারই ছিল বিপুল চাহিদা—
পুরুষের ব্যগ্র আলিঙ্গনে।
এভাবে রতির হাটে রূপের শাসনে, বিবর্তনে
হরিণাক্ষী নন্দনের জন্ম হয়েছিল।
তারই চাপে ধীরে ধীরে, বহু বহু প্রজন্ম পেরিয়ে
ক্ষুদ্রচক্ষু নারীগর্ভে
হরিণাক্ষী নন্দিনীর জন্ম হয়েছিল।
রূপের সন্ত্রাস এই— পুরুষ-কামনা
যা চায়, সে তা-ই পাবে—
উর্বশী, মেনকা, তিলোত্তমা।
স্বয়ং প্রকৃতি তার আজ্ঞাদাসী হবে।
তাহলে তোর কী হবে? কালো মেয়ে, বোঁচা মেয়ে,
ক্ষুদ্রচক্ষু মেয়ে?
প্রেমিক পাবি না তুই বসন্ত-উৎসবে?
রূপের বাজারে তোর অন্তহীন অপমান হবে?
মানবো না সৌন্দর্যের এই স্বৈরাচার।
পালটে দেবো কবিতার অলংকার, প্রতীক, উপমা–
ভেঙে দেবো রূপের শাসন।
আমার কবিতা হোক, কালো মেয়ে, তোর জন্য বিদ্রোহী নন্দন।
তুষার রায় ছিলেন ষাটের দশকের একজন উজ্জ্বল ও সুপরিচিত কবি। মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন বিস্মৃতির অন্তরালে। আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটেছিলো তিনলাইনের ফিচেল কিন্তু অর্থবহ একটি ছড়ার মাধ্যমে :
পুলিশ ওরে পুলিশ,কবির কাছে আসার আগেটুপিটা তোর তুলিস।
তারপর আমিও ভুলেছি তাঁকে। তিনিও আমাকে। বছরদেড়েক আগে, কোনো এক পত্রিকার পৃষ্ঠায় হঠাৎ একটি কবিতা পড়ে মনে মনে ভাবি, “আপনাকে তো কালটিভেট কর্ত্তে হচ্চে মোশাই...“। পুরো কবিতাটা তুলে দিই এখানে :
বিদায় বন্ধুগণ, গনগনে আঁচের মধ্যেশুয়ে এই শিখার রুমাল নাড়া নিভে গেলেছাই ঘেঁটে দেখে নেবেন পাপ ছিল কিনা।এখন আমার কোন কষ্ট নেই, কেননা আমিজেনে গিয়েছি দেহ মানে কিছু অনিবার্য পরম্পরাদেহ কখনো প্রদীপ সলতে ঠাকুর ঘরতবু তোমরা বিশ্বাস করোনিবার বার বুক চিরে দেখিয়েছি প্রেম, বার বারপেশী অ্যানাটমি শিরাতন্তু দেখাতে মশায়আমি গেঞ্জি খোলার মতো খুলেছি চামড়ানিজেই শরীর থেকে টেনেতারপর হার মেনে বিদায় বন্ধুগণ,গনগনে আঁচের মধ্যে শুয়ে এই শিখাররুমাল নাড়ছিনিভে গেলে ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেনপাপ ছিল কিনা।
কবির কোনো বইই খুঁজে পাচ্ছিলাম না কলেজ স্ট্রিটে। একেতেই লকডাউন, তার উপর ঘূর্ণিঝড়। অনেক খোঁজার পরে পেলাম তাঁর কাব্যসংগ্রহ। কবিতাগুলো পড়ে খুব অবাক হলাম। ফস্ করে ভেবে ফেলি, এতটা ব্যতিক্রমী কাব্যভাষা নিয়ে এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলেন? ব্যতিক্রমী এবং বৈপ্লবিক। ব্যর্থ প্রেমের কবিতা তো ঢের পড়েছি। কিন্তু প্রেমহীনতার এরকম অব্যর্থ অভিব্যক্তি আমি আর দেখিনি। এটা কী? ক্রোধ? নাকি ক্রোধের পরের শীতলতা? নাকি অপ্রাপ্তির ধিকিধিকি অভিমান?
তুমি সেই লাল ডিভানেতে শুয়ে বুঝলে নাআমি তো তৃষ্ণার্ত হরিণ হয়ে নামতাম জলেতুমি খেতে চাইলে, নিজের মিটুলি খুবলে—রাখতাম তোমার ঠোঁটের সামনে,তোমার জন্যে রেসের ঘোড়া হয়ে বাজি মারতাম প্রত্যহতোমার একটি চুম্বনের জন্য শাহেন শাহ হয়েপাঁচ লক্ষ দিনার কিংবাউপযুক্ত পাছায় গুনে ঠিক পাঁচ লাথি,তুমি কিছু বুঝলে নাঅর্থহীন হলুদ সাবমেরিন হয়ে চলে গেলেঝোলাগুড় নিয়ে মরিশাসেআমি মরি হতাশ্বাসে, তুমি...তুমি কিছু বুঝলে না— বোবা কালাবেডপ্যান তুমিতুমি ভাঙা বাথরুমে ঝকঝকে মুতের বেসিন।
চমক আমার ভালো লাগেনা এমনিতে। কিন্তু তাঁর কবিতায় এরকম নির্বিকার চমক তিনি বারবার দিয়েছেন। যেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। তাঁর অসহনীয় ক্রোধ আমি টের পেয়েছি। কিন্তু তিনি যেন ক্রোধের মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা-বাছা বলে সেই ক্রোধকে শান্ত করেছেন। পরিমিত করেছেন। কীসের ক্রোধ? সবচেয়ে বড় ক্রোধ যা থাকে মানুষের। নিজের উপর ক্রোধ।
তবে কেন লিখেছি কবিতা, গান কেন হয়েছে রচিততারকা খচিত ওই আকাশেতে কেন তবে ওঠে চাঁদবিষাদ দুচোখ ছোঁয় সে কবির অশ্রু ঝরে নিভৃত নয়নেশেষের শয়নে তবে শুতে দাও, আমাকেও লাশ করোফাঁসি দাও গাছের ডালেতে, বুলেটে ঝাঁঝরা করোআমাকেও ওইভাবে, শোনোতারপর কখনো পাতক, তুমি শর্ত করো হবে না ঘাতক।
চপেটাঘাতের মতো ছিটকে আসা অসন্তোষ দেখে মনে হয়েছে, এরকম তো মাইরি আর কাউকে লিখতে দেখিনি :
আপনারা থাকুন এই থকথকে হড়হড়ে জীবনআর কলাবাগানের রাজনীতি নিয়ে,জেনে নিয়ে থোড় মোচা নটে শাক কতোবার মুড়োবে ছাগলেফের গজাবেই জেনে— জেনে নিয়ে আপনারা থাকুন!
ষাটের দশকে বসে, বুদ্ধদেব বসু, কৃত্তিবাস কিংবা আনন্দবাজারের সমস্ত অমোঘ হাতছানি অগ্রাহ্য করে নিজের মতো লিখে গেছেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এরকম অভাবনীয় কবিতা। তারপর কি তিনি শীতসন্ধ্যায় কুয়াশাভ্রমিত ময়দানের ভেজা ঘাসে খালিপায়ে দাঁড়িয়ে একলা পড়ে শুনিয়েছেন এইসব কবিতা, নির্বান্ধব কোনো বিষন্ন বাদামওয়ালাকে?
অস্ত বেলায় আকাশ এমন লালদেখছি ধূসর বেলায় দাঁড়িয়ে একা,একাই এসেছি একা চলে যাবো কাল।
কবিতার এমন তছনছ ভাষ্যকারকে নিয়ে ক্যানো শুনিনি কোনো আলোচনা এতদিন? কে লেখে নিজের প্রেমিকার প্রতি এমন দৃপ্ত অঙ্গীকার?
আমি ম্লান মুখ তাড়িখোর জানি আমিরসে তীব্র বিষ আছে,তবু নীল মাছি হয়ে দেখো আমিমরে ভাসবো তোমার সায়রে।
ভাগ্যিস খুব বেশি কবিতা লেখেননি তুষার রায়। নইলে হাড়েমজ্জায় এরকম দৃঘাংচু হয়ে বসে থাকতাম, এখন যেমন বসে আছি, জৈষ্ঠ্যের আধপাগল এই সন্ধ্যাবেলায়। আর মাথার ভেতর গগনচুম্বী চিলের মতো চক্রাকারে ঘুরে যেতো এরকম আরো কতো লাইন :
গনগনে আঁচের মধ্যে শুয়ে এই শিখাররুমাল নাড়ছিনিভে গেলে ছাই ঘেঁটে দেখে নেবেনপাপ ছিল কিনা।
❝ প্রেম বলে দোষ দাও? এই দোষ পেয়েছি আগেও !
জল থেকে, হাওয়া থেকে, পাশের নিঃশ্বাস থেকে আসে—
জ্বর থাকে কয়েকদিন, কয়েকমাস, কয়েক যুগেও
সারে না অনেকক্ষেত্রে। সারেও বা। লিখতে লিখতে
যেরকম কবি
একটি বিশ্বাস ভেঙে চলে যায় অপর বিশ্বাসে ... ❞
বিক্রম শেঠ একজন প্রতিষ্ঠিত ঔপন্যাসিক হওয়ার পাশাপাশি একজন উঁচুদরের কবিও বটে। পুশকিনের “Eugene Onegin” বইয়ের বিশিষ্ট ছন্দকে অনুসরণ করে তাঁর লেখা কাব্য-উপন্যাস “The Golden Gate” পাঠকদের তরফ থেকে প্রভূত প্রশংসা এবং বিস্ময় অর্জন করেছে। “দ্য গোল্ডেন গেট”কে যদিও সেই অর্থে “কবিতার বই” বলা যাবে না। “All You Who Sleep Tonight” কিন্তু পুরোদস্তুর কবিতার বই।
শীর্ণ চেহারার এই বইতে স্থান পাওয়া নাতিদীর্ঘ আকারের কবিতাগুলো পড়লে, একটা বৈশিষ্ট্য খুব সহজেই খেয়াল করা যায়। তা হলো— গভীর অনুভূতি ও গহন চিন্তাকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করার প্রবণতা। ভাষা সহজ, প্রকাশভঙ্গি সহজ, কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে, ছন্দকে যথাযথভাবে সাজিয়ে এভাবে কবিতা লেখা মোটেই সহজ কাজ নয়। ভালো কবিতার বোধহয় এটাও একটা অন্যতম লক্ষণ। তাতে বাহাদুরি কম থাকে। কিন্তু পাঠকের চেতনাকে স্পর্শ করে যায়।
All you who sleep tonightFar from the ones you love,No hand to left or right,And emptiness above—Know that you aren't alone.The whole world shares your tears,Some for two nights or one,And some for all their years.
রানু যা ভানুদাদার, যা যিশুর মেরি ম্যাগডেলান,
সুমনের যা গিটার, যা দেবব্রতর কণ্ঠে বাঁধভাঙা গান
যা রহস্য ফেলুদা'র, যা লেখা গার্সিয়া লোরকার
যা তারকভ্স্কির ছবি, যা দিয়েগো আর্জেন্তিনার
যা দীর্ঘায়ু পতঙ্গের, শ্যামের যা রাই
যা কিছু অদম্য চাওয়া, অথচ পাওয়ায় বাধা...
আমার জীবনে তুমি তা-ই।
এগুলো কবিতা নয়।
মিছিলের স্লোগান, নির্বাচনী দেয়াল-লিখন, কিংবা ইস্তাহারে ছাপার উদ্দেশ্যে দ্রুতহাতে, নড়বড়ে ছন্দে লেখা কাব্যিক আস্ফালনকে কবিতা হিসেবে চালানো হয়েছে। সাম্যবাদী কিংবা সমাজবাদী ভোকাবুলারির সার্থক প্রয়োগ সুভাষ মুখোপাধ্যায় পরবর্তীকালে অনেকবার অনেক কবিতায় করেছেন। কিন্তু কবিজীবনের একদম শুরুর দিকে প্রকাশিত এই বইয়ের কবিতাগুলো পড়ে খুব হতাশ হলাম।
অনুবাদক দুজনের একজন কবি, আরেকজন পুলিশ। মদ খেতে খেতে এবং পুকুরে মাছ ধরতে ধরতে তাঁরা অনুবাদের কাজ করেছেন। যুগলবন্দির এই খবর শুনে মনে হয় না গালিব খুব খুশি হতেন। অনুবাদের ছিরি দেখে তো নিশ্চয়ই আরো না-খুশ হতেন।
সম্মুখে রাখো মদের পাত্র এবং মদিরা যতনভরেতারপর দেখো, কেমন মুখর আমার মুখের বাক্যি ঝরে।
হুয়ি তমন্না বেতাব জব সাকি ভাগ গ্যয়ি ম্যায়খানা ছোড়কে ইয়া রব, ইয়ে দোনো মিলকে ক্যায়সা হাল কিয়া তেরা, গালিব।
“নীল দিগন্তে ফুলের আগুন— সেই আগুন পোড়াচ্ছে কবে?
ত্যাগে আমার ভাগ বসেছে, এই বসন্তে বৃষ্টি হবে।”
“শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু কবিতার
জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।”
“নাদের আলি, আমি আর কত বড় হবো?
আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিনপ্রহরের বিল দেখাবে?”
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল,কার্নিশে কার্নিশ,ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে।
(শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
মধ্যরাতে কলকাতা শহর শাসন করতেন যে-চারজন যুবক, কিংবদন্তি সেই অশ্বারোহী চতুষ্টয়ের একজন ছিলেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। পেশা ছিলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টগিরি। কিন্তু বাংলা কবিতার বিশিষ্ট মাইলফলক “কৃত্তিবাস” কবিতাপত্রিকার প্রত্যক্ষ উদ্যোগীদের একজন ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের মুখ্য কবিদের মধ্যেও তিনি একজন। তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়। অথচ শরৎকুমারের কবিতায় তিলপরিমাণ নেই তাঁর সেইসব শালপ্রাংশু বন্ধুকবিদের প্রভাব। নির্ভার নিজস্বতার এ এক আশ্চর্য উদাহরণ।
বিখ্যাত বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁর কবিতার সংখ্যা যৎসামান্য। তাঁর কাব্যভাষাতেও নেই সুনীল কিংবা শক্তির কবিতার মতো শব্দ কিংবা উপমা কিংবা বর্ণনার বর্ণময় সমারোহ। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে একটা নিবিষ্ট বার্তা আছে, যেটা আমার ভালো লেগেছে। অনুচ্চস্বরে প্রায় মন্ত্রের মতো তিনি লিখেছেন একটি পাখি এবং একটি ছাতিমগাছের কথা।
একটি পাখিসারা সকাল উড়ে বেরিয়েছেকাড়াকাড়ি, মারামারি, চুরি, ছিনতাইছোটোখাটো লুঠতরাজ সেরে, দ্যাখোনির্জন দুপুরে ছাতিমডালে ঠোঁট ঘষছে,আপন মনে গুমরোচ্ছে অনুশোচনায়।আর ছাতিম গাছতার সহজ বাহু তুলে, দুলে দুলে, দ্যাখোফিশফিশ করে বলছেক্ষমা, ক্ষমা। ক্ষমা।
তোমার প্রপিতামহ, শাকাহারী, জাদুঘরে আমি তার কংকাল দেখেছি,তিনঘর জোড়া এক সরীসৃপ।বহুকাল অবলুপ্ত। দলত্যাগী তুমিছোট হতে-হতে টিকে গেলে। ধূর্ততুমি, গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকে আত্মরক্ষা করো, যেন কিছুই ঘটেনি। ...
যে মুহূর্তে পরিত্যক্ত দেহ থেকে, তুমি আবর্জনা—কেন লিপ্ত হতে আসো, কেবল উত্যক্ত করতে আসো?
স্বনির্ভর হতে হবে। ওপরে আকাশস্নিগ্ধ প্লাইকাঠে মোড়া, অন্নময়আবদ্ধ জীবন নিচে, মাঝখানেকাকধর্মে নিয়তই সংগ্রাম রয়েছে।
ধুৎ! এই সূর্যোদয়!এর জন্যে এতো কষ্ট এতো হুটোপাটিছেঁদো প্লাস্টিকের বলের মতো ঠান্ডা বিবর্ণ একটা জিনিশময়লা মেঘের স্তূপ থেকে কষ্টেসৃষ্টে উঠে এলো...
আমারও গোপন কথা কিছু ছিল, তুমি জেনে যাও।দেখা হলে যে-কথা লজ্জায়বলিনি, চিঠিতে লিখতে পারিনি যে-কথাআমাকে দেখেই তুমি বুঝে নাও।
ভালোবাসা, একদিন তোমাকেও আবার দ্বারস্থ হতে হবেআমি ঘর অন্ধকার করে বসে আছি।এবার এসো না যেন ভিক্ষুকের মতো, তুমি রাজার দুলালকরাঘাত কোরো বন্ধ দরজায়— একবার দুবার তিনবার।আমি সাড়া দেবো না প্রথমে হয়তো, হয়তো অভিমানকণ্ঠরোধ করে থাকবে, দেহমন উচাটন, তুমিজানো না বন্ধুরা ফেলে পালিয়েছে। আমিসঙ্গহীন লোকেদের ভিড়েবসে আছি, ভাবছি—
“সুভাষ মুখোপাধ্যায় দুটি কারণে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, তিনি বোধহয় প্রথম বাঙালি কবি যিনি প্রেমের কবিতা লিখে কাব্যজীবন আরম্ভ করলেন না! এমনকি, প্রকৃতিবিষয়ক কবিতাও তিনি লিখলেন না। কোনো অস্পষ্ট, মধুর সৌরভ তাঁর রচনায় নেই, যা সমর সেনের প্রথম কবিতাগুলিতে লক্ষণীয় ছিলো। দ্বিতীয়ত, কলাকৌশলে তাঁর দখল এতই অসামান্য যে কাব্য রচনায় তাঁর চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও এই ক্ষুদ্র বইখানায় শিক্ষণীয় বস্তু আছে বলে মনে করি।”
(বুদ্ধদেব বসু। পৌষ সংখ্যা, ১৩৪৭। “কবিতা” পত্রিকায় প্রকাশিত)
“আমাদের দেশে যাঁরা সাম্যবাদী কবিতা লিখতে শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে এক দল হচ্ছেন যাঁরা ভাব কিংবা ভঙ্গি কোনো দিক থেকে কবি নন। এঁরা যে-কর্তব্যবোধের প্রবর্তনায় গোলদীঘি থেকে সুদূর পল্লীগ্রাম পর্যন্ত সভাসমিতি করে বেড়ান, দৈনিক সাপ্তাহিক কাগজে প্রবন্ধ লেখেন, জেল খাটেন, সেই প্রবর্তনার বশেই কবিতা লিখছেন। এতে তাঁদের প্রপাগ্যান্ডার কাজ কতখানি হাসিল হয় বলা শক্ত, তবে বিশুদ্ধ সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তি তাঁদের সাহিত্য-প্রচেষ্টাকে সন্দেহের চোখে না-দেখে পারেনা।”
(আবু সয়ীদ আইয়ুব। “আধুনিক বাংলা কবিতা” বইয়ের ভূমিকায় লিখিত বক্তব্য)
And boyhood is a summer sunWhose waning is the dreariest one—For all we live to know is known,And all we seek to keep hath flown—Let life, then, as the day-flower, fallWith the noon-day beauty— which is all.
একটি প্রার্থনা-সংগীত
গরুদের জন্য দাও ঘাস জমি, খোলামেলা ঘাস জমি,
চিকন সবুজ
ওরা তো চেনে না কোনো রান্নাঘর, ওরা বড় ন্যালাখ্যাপা
অবোধ অবুঝ
কুকুরের জন্য দাও কাঁচা মাংস, লাল মাংস, রক্তমাখা হাড়
ওরা তো খায় না ঘাস, সবুজকে ঘেন্না করে, ওরা চায়
হাড়ের পাহাড়
বাঘেরা ��েচারি বড়, দিন দিন কমে যায়, চিড়িয়াখানায় শুধু
বাঘ দেখা হবে?
ওদেরও জন্য দাও নধর হরিণ, দাও খরগোশ
বনের বাঘেরা ফের
মাতুক পুরোনো উৎসবে!
বিড়ালকে মাছ দাও, ব্যাঙেদের সাপ দাও, থুড়ি থুড়ি থুড়ি
সাপদের দাও ব্যাঙ, ছোট-বড় ব্যাঙ
টিকটিকিদের দাও প্রজাপতি, আর কুমিরকে মাঝে মাঝে
ছুঁড়ে দিয়ো
দু-একটা ছাগলের ঠ্যাং!
নদীদের মেঘ দাও, পাহাড়কে দিয়ো গাছ, আর গাছেদের
দিয়ো ঠিকঠাক ফুল ফল
পেঁপে গাছে কোনোদিন ফলে না কখনো যেন হঠাৎ কাঁঠাল
আর নারকোলে ভুল করে
কোকোকোলা দিয়োনাকো
দিয়ো শাঁস জল!
আর মানুষের জন্য দাও...
আর মানুষের জন্য দাও...
কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, হা-হা-হা-হা
কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, হা-হা-হা-হা
কিচ্ছু না, কিচ্ছু না
কিচ্ছু না, কিচ্ছু না!
আহা, কি দারুন এই কবিতাগুলো!
আজকে সকালে দৈবাৎ পড়ে ফেললাম এদের। শীতকালের অন্তিম এই দিনগুলো আমার খুব পছন্দের। ঠিক যেমন পছন্দ আষাঢ়-শুরুর দিনগুলো। আমার জানলার গোটা বাইরেটা জুড়ে ছড়িয়ে আছে অমলিন নীল আকাশ। একফোঁটা বিষাদ নেই তাতে। নিরানন্দ নেই। নারকেল গাছের ডালে একটা পাখি, উচ্চস্বরে ডাকছে। সে যেন আমার শরীরের শীতমগ্ন কোষে কোষে ছড়িয়ে দিচ্ছে বহু দূর থেকে বয়ে নিয়ে আসা নিরাময়ী স্বপ্নের সওগাত! আমার হাতে কফির কাপ থেকে সুগন্ধী ধোঁয়া উঠছে। আমি খুব ধীরে ধীরে, আয়েশ করে কফিতে চুমুক দেওয়ার মতো ধীরে ধীরে, পড়ছি এই কবিতাগুলো। কি ভালো যে লাগছে মাইরি!
তোমার জন্যে কুড়িয়ে এনেছি কাঁঠাল পাতাপকেট ভরে এনেছি কুড়িয়ে ঘুঘুর ডাক...মাথায় করে এসেছি নিয়ে রাতের চাঁদতোমার জন্যে এসেছি আমি অনেক দূর...কাশের বনে ঘুরতে তোমার ইচ্ছে হয় যদিহৃদয় ভরে এনেছি তাই আশ্বিনের নদী!
রণজিৎ দাশের কবিতা পড়ে আমি আবিষ্কারের আনন্দ লাভ করেছি! বৈশাখদিনের ছুটির দুপুরবেলা অতর্কিত বৃষ্টিপতনের শব্দ ছিল চারিদিকে। ভেজা ঘাসের সবুজ কিন্তু তীক্ষ্ণ উজ্জ্বলতাকে পায়ে মাড়িয়ে কবিতাগুলো হেঁটে যাচ্ছিল পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা অতিক্রম করে।
দুঃখের ভিতরে আমি সুখ খুঁজি, পথ থেকে পথেরাংতা কুড়ানো এক ফুটপাতবালকের মতো...দুঃখকে সুখের মতো ব্যবহারও করতে শিখেছিযেভাবে সাপের বিষ, সূক্ষ্ম মাপে, অসুখ সারায়এভাবেই ঘুরে ঘুরে, আজীবনকেবলই পৌঁছেছি এক পথের জলসায়গভীর শীতের রাতে, যেখানে কাছে ও দূরেঅসংখ্য দুঃখের স্তূপ জ্বলে, আর গরিবেরা আগুন পোহায়যেখানে শ্রোতারা খুব শান্ত, অন্তর্মুখীঘুমচোখে বুঝে নেয়—গানটি দুঃখের, কিন্তু গায়িকাটি সুখী।
শহরে যখন কেউ পাগল হয়, তখন সে ট্রাফিক পুলিশ হয়ে যায়। নিজের খেয়ালে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে, দিনের পর দিন। নিখুঁত তার হাতের মুদ্রা, অটুট তার গাম্ভীর্য। কেবল তার নিয়ন্ত্রিত গাড়ি-ঘোড়াগুলি সম্পূর্ণ অলীক। সেসব গাড়ি-ঘোড়া কাউকে চাপা দেয় না, কোনো প্রিয়জনকে বাসস্টপে নামিয়ে দিয়ে যায় না...
যে বাক্য পেয়েছি স্বপ্নে, তাকে খুব সাবধানেতোমার ঘুমন্ত পিঠে নিঃশব্দ আঙুলে লিখে রাখি।বাক্যটি তোমার মধ্যে মিশে যায়, স্নায়ুকোষে, চুম্বকের টানে।ভোরবেলা জেগে উঠে, আমার ঘুমন্ত পিঠে, বিদ্যুৎ-আঙুলে,তুমি যে বাক্যটি লেখো, সেটিই দ্বিতীয় পঙক্তি, সহস্র জোনাকি !কবিতার জিহ্বা দিয়ে তুমি-আমি চুম্বনে লিপ্ত হয়ে থাকি।
তোমার মনে জমেছে এত বিষ, তুমিআমাকে ছোবল মারোআমিই সেই মহিষ, যার গহনকালো পিঠেমাঠের সকল গোখরো এসে নিশীথবিষ ঢালেতবেই তাদের শঙ্খ লাগে, মাথার মণি জ্বলে...তোমার মনে জমেছে এত বিষ, তুমিআমাকে ছোবল মারোআমিই সেই আকাশ, যার গহনকালো পিঠেতারা ফোটে, রাত্রিভর, একটি ছোবল একটি তারা,এভাবে, হাজারো
তরুণী কেবলই তার প্রেমিক পালটায়, সেমুহূর্তেই বুঝে নেয় পুরুষের ভীরুতা ও ফাঁকিআমি শুধু তরুণীর প্রতিটি মুডের জন্যআবহসংগীত ধরে রাখি।যতদিন সে না খুঁজে পাবে তার প্রকৃত প্রেমিক,ততদিন আমি তার স্বপ্নের ভিতরে অক্লান্ত বাজিয়ে যাব শুদ্ধ ও বিষন্ন মিউজিক।
‘হয়তো আমাদের এই গ্রহ অন্য কোনো গ্রহের নরক।' বলেছিলেন হাক্সলি, শিউরে ওঠার মতন কথা। হয়তো সেজন্যেই এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ দুঃখী, অধিকাংশ জন্তু হিংস্র, অধিকাংশ পোকা হিজড়ে, এবং অধিকাংশ জল লোনা। হয়তো সেজন্যেই এই নরক শাসন করে এক উলঙ্গ দানবী, যার নাম ‘অতৃপ্ত বাসনা'। হয়তো এমন আরেকটা গ্রহ আছে, যেটা আমাদের গ্রহের নরক। হয়তো সেই গ্রহের বর্ণনাই লিখিত হয়ে চলেছে আমাদের বেদ-বাইবেল-কোরানে, দান্তে ও মিলটনে, ব্যাংকের পাসবুকে আর রাতের দুঃস্বপ্নে, নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের ছোট ছোট পদস্খলনে।